ভিডিও

বেড়ায় মীনার খামারে দুধ  উৎপাদন হয় ৩২০ লিটার 

প্রকাশিত: জুন ০৭, ২০২৪, ০৩:৫৩ দুপুর
আপডেট: জুন ০৭, ২০২৪, ০৪:১০ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

আবুল কালাম আজাদ, বেড়া (পাবনা) থেকে ঃ মাহফুজা মীনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে চাকরি করলেও এলাকার সবার কাছে খামারি হিসেবেই তার পরিচিতি। তিনি পাবনার বেড়া পৌর এলাকার বনগ্রাম মহল্লায় বসবাস করেন। দেশের প্রধান গরু পালনকারী এলাকা পাবনার বেড়া উপজেলার খামারিরা একজন সফল খামারি হিসাবে সমীহ করেন তাকে। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছেন একজন নারী হয়েও কী করে সফল খামারি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। 

দুটি গরু দিয়ে বছর ১৫ আগে মাহফুজ মীনা তার খামার শুরু করেন। বর্তমানে তার খামারে গাভি, ষাঁড়সহ ৮০টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে বাছুরসহ গাভি রয়েছে ২২টি। এসব গাভি থেকে তিনি প্রতিদিন দুধ সংগ্রহ করেন প্রায় ৩২০ লিটার। খামারের দুধ ও ষাঁড়-বলদ বিক্রি করে বছরে গড়ে আয় হয় প্রায় ১১ থেকে ১২ লাখ টাকা। তার কাছে গিয়ে এলাকার অনেক খামারিই এখন খামারের যে কোনো সমস্যায় পরামর্শ নিয়ে থাকেন। 

বেড়া পৌর এলাকার বিভিন্ন মহল্লায় মীনার খামারে উৎপাদিত দুধের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। খামারে দুধ দোহানো হয় সকালে ও বিকালে। দুধ কেনার জন্য তার খামারের সামনে সকাল-বিকাল ভিড় করেন পৌর এলাকার বিভিন্ন মহল্লার অনেকেই। বাড়ি থেকেই বিক্রি হয়ে যায় দুই থেকে আড়াই শ লিটার দুধ।

বাকিটা বেড়া বাজারে নেওয়া মাত্রই তা শেষ হয়ে যায়। খাামারের দুধের মান খুব ভালো হওয়ায় বাজারের লোকজন অপেক্ষায় থাকেন কখন খামারের কর্মীরা বাজারে দুধ নিয়ে আসবেন।

বেড়ার মনজুর কাদের মহিলা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বরুন কুম্রা রায় বলেন, ‘বেড়া উপজেলার গরুর দুধের মান এমনিতেই ভালো। তবে মীনা ম্যাডামের খামারের দুধ সর্বোচ্চ মানের। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে আমার বাড়িতে ওই খামারের দুধ পুষ্টি দিয়ে আসছে। প্রতিদিনই আমার বাড়ির কেউ না কেউ খামারে গিয়ে দুধ কিনে নিয়ে আসে। তবে সেখানে দেরি করে গেলে দুধ পাওয়া যায় না।’  

মাহফুজা মীনার বাবা প্রয়াত আব্দুল মজিদও ছিলেন তারই মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। বাবা স্বপ্ন দেখেছিলেন তার একমাত্র সন্তান মীনা আর দশজনের চেয়ে আলাদা হোক, সাফল্য অর্জন করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক। মীনা তার বাবার স্বপ্ন অনেকটাই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছেন বলে মনে করেন।   

মাহফুজ মীনা ২০০০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। পরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষকা হিসাবে যোগদান করেন।

২০০৯ সালে মাত্র দুটি গরু দিয়ে শুরু করেন তার গরুর খামার। পরিকল্পিত উপায়ে খামার পরিচালনা করায় ক্রমান্বয়েই উন্নতি হতে থাকে তার খামারের। ১৫ বছরের ব্যবধানে এখন তার খামারে রয়েছে ৮০টিরও বেশি গরু। গরুর পাশাপাশি তার খামারে ভেড়া আর ছাগলও রয়েছে। সাড়ে তিন বিঘা আয়তনের একটি পুকুরে মৎস্য খামার গড়ে তুলেছেন তিনি। মাছ চাষ করে এই পুকুর থেকে বছরে প্রায় ছয় লাখ টাকা আয় হয় তার। পুকুরসহ এর পাশের ১০ বিঘা জমি নিয়ে মাছ, হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশুর একটি সমন্বিত খামার তৈরির কাজও শুরু করেছেন বলে জানান তিনি।

স্কুলে শিক্ষকতা করলেও এলাকার সবাই তাকে চেনেন একজন সফল খামারি হিসেবে। নিজ বাড়িতেই রয়েছে তার খামারটি। প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ তার খামার দেখতে আসেন। তাদের অনেকেই তার কাছ থেকে পরামর্শ নেন।

তার খামারের প্রধান কর্মী মনজেল হোসেন বলেন, ‘সাত-আট বছর ধইর‌্যা এই খামারে কাজ করি। অন্য যে কোনো খামারের তুলনায় এই খামারে শ্রমিকের বেতন বেশি। আমি নিজেসহ ১৫ জন কর্মী এই খামারে কাজ কইর‌্যা ভালোভাবেই সংসার চালাতেছি।’

মীনার খামারে থাকা ২২টি গাভি থেকে প্রতিদিন দুধ পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ৩২০ লিটার। এ ছাড়াও কোরবানির হাটকে সামনে রেখে তার খামারে মোটাতাজা করা হচ্ছে ২০ টি ষাঁড়। কোরবানি উপলক্ষে আরও কয়েকটি ষাঁড় কেনার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। মীনা জানান, বর্তমানে সব খরচ বাদে শুধু গরুর খামার থেকে বছরে ১২ লাখেরও বেশি টাকা আয় হয়। তার গরু, মাছ, পোল্ট্রি ও কৃষি খামারে স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে অন্তত ১৫ জনের।

ড়া পৌর এলাকার দক্ষিণপাড়া মহল্লার খামারি আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘মাহফুজা মীনার খামারটি হলো একটি আদর্শ খামার। আমি নিজেও ওই খামারে গিয়ে নানা পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা নিয়ে আসি।’   

মাহফুজা মীনা বলেন, আমার বাবাও একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন, তিনি গরু পালন খুব পছন্দ করতেন। তিনি মনে করতেন আধুনিক ও পরিকল্পিতভাবে খামার গড়া হলে সফলতা আসবেই। বাবা মারা যাওয়ার পর তার উপদেশ অনুযায়ী মাত্র দুটি গাভি দিয়ে খামার শুরু করি। এখন এই খামারে প্রতিদিন ৩০০ লিটারেরও বেশি দুধ উৎপাদিত হয়। আমার খামারের দুধে বেড়া পৌর এলাকার অনেকেরই পুষ্টির যোগান হয়। সবাই খামারের দুধের প্রশংসা করে। এতে খুব ভালো লাগে।
                                                             



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS