ভিডিও

নিরু মামা ও ভূতের আগুন

আশরাফ আলী চারু

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৪, ০৫:৪৬ বিকাল
আপডেট: সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৪, ০৫:৪৬ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

প্রতিদিন বিকেলে সাকিবরা নদীর পাড়ে এসে খেলাধুলা করে। আজও এসেছে। দুই দলে ভাগ হয়ে কেবলই মাঠে নেমেছে। তখনই নিরু মামা ছুটে এল। 
- মামা খেলবে না-কি? বলল সুজন। 
- না, না- খেলব না। তোদের সাথে একটা ঘটনা শেয়ার করতে এলাম। 
সবাই নিরু মামাকে ঘিরে দাঁড়াল। আগ্রহের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে সবার। নিরু মামা যে জিনিয়াস লোক! কী খবর এনেছে কে জানে?
-মামা বলও?
-তোরা বিশ্বাস করবি কি না তাই ভাবছি। 
-তোমার কথা অবিশ্বাস করা যায় মামা! তুমি বলও। আর আগ্রহ বাড়িও না পি¬জ। 
-তাহলে শোন। ঘটনাটা কাল রাতের। আমি জানালা খুলে পড়ছিলাম।
- কী পড়ছিলে মামা? তুমি তো স্কুলে যাও না। তাছাড়া রাতে জানালা,,,
- আরে শুনতে দে! স্কুলে না গেলেই কী বই পড়া যায় না? গরম রাতে জানালা খুলবে না তো কী করবে? মামা ওসব কথায় কান না দিয়ে, তুমি বলওতো। বলল রাহুল। 
-কথার মধ্যে কথা বললে কি বলার মোড থাকে?
- আর কেউ কথা বলবে না মামা, তুমি বলও?
-তবে শোন, জানালা খুলে বসেছিলাম। তোরা তো জানিসই আমার জানালা দিয়ে বাড়ির সামনের স্কুলটি দেখা যায়। সেই সাথে দেখা যায় বিস্তৃত ফসলের ক্ষেত। হয়েছিল কী, স্কুলের মাঠ থেকে বিমলের বাবা আমায় ডাকলেন। বাইরে বেরোলাম। স্কুলের মাঠে যাওয়ার পর বিমলের বাবা টর্চ লাইট জ্বালালেন। জ্বালিয়ে উত্তর দিকে তাকাতে বললেন। তাকিয়ে দেখি সর্বনাশ! অদ্ভুত দুইটা আগুনের কুণ্ডলী মাটি থেকে দেড় ফুটের মত উপর দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে। বিমলের বাবা বললেন, সেটা না-কি ভূতের আগুন। ভূত আগুন জ্বালিয়ে পোকামাকড় ধরে খাচ্ছে। 
-মামা ভূত তাহলে পোকামাকড়ও খায়?
-সেটা তো জানি না। আমিও প্রথম শুনেছি। বিমলের বাবা না জেনে বলতে যাবে কেন? হতেও পারে। তারপর কী হল শোন। আমি এক মুহূর্ত বিবেচনা না করে বিমলের বাবার টর্চটা নিয়ে আগুন দুটোকে ফলো করে দৌড় দিলাম। বিমলের বাবা ডেকে বলতে লাগলেন, যাসনেরে- যাসনে নিরু। ভূতেদের এখন বড়ো অভাব। অভাবের তাড়নায় পোকামাকড় ধরে খাচ্ছে। তোকে পেলে দলবদ্ধ হয়ে মজা করে খাবে। যাসনে থাম। 
আমার আগ্রহ আরও বেড়ে গেল। দৌড়ে প্রায় কাছাকাছি চলে গেলাম। আগুনের কুণ্ডলী দুটি কিছুক্ষণ নিভে যায় আবার জ্বলে। এভাবে হাওয়ায় ভেসে উত্তরে দিকে যেতে লাগল। আমি পিছনে পিছনে আর কুণ্ডলী দুটি সামনে। যেতে যেতে পাইকর তলায় গিয়ে নিভে গেল।
সুজন বলল- মামা, বাবা বলেছে ওই পাইকর গাছে ভূত থাকে। আমার বিশ্বাস হয়নি। আজ বিশ্বাস হল। ও বাবা গো আর যাব না ওদিকে। রাহুল ও অন্যান্যরাও সুজনের কথা শুনে ভয় পেয়ে গেল। 
এবার নিরু মামা বলল- আজ রাতে চোখ রাখতে হবে। দশটার দিকে সবাই স্কুল মাঠে চলে আসবি। আজ ভূতের রফাদফা করে ছাড়ব।
পড়াশোনা শেষ করে রাত দশটার দিকে সবাই স্কুল মাঠে চলে এল। নিরু মামা আগেই এসে অপেক্ষা করছে। সবাই একত্রিত হওয়ার পর নিরু মামা বলল- ভূতের আগুন বের হওয়ার সাথে সাথে আমি দৌড় দিব। পাইকর তলা যাওয়ার পর তোরা এগিয়ে যাবি। 
নিরু মামা টর্চ লাইট অন করার সাথে সাথেই সবার চোখে ভেসে এল দুটি কুণ্ডলী। সবাই ভূতের আগুন দেখল আজ। নিরু মামা কথা মত সেইরকম দৌড় লাগাল। ভূতের আগুনও সামনে এগিয়ে যেতে লাগল। পাইকর তলায় গিয়ে আগুন নিভে গেল। সাকিবের বন্ধুরা নিরু মামার কথা মত দৌড়ে পাইকর তলায় এল। অন্ধকারে তেমন কিছু দেখা যায় না। তবে সবাই পাছড়াপাছড়ি করার শব্দ শুনতে পেল। 
সুজন বিড় বিড় করে বলল- নিরু মামার কী সাহসরে বাবা! অবশেষে ভূতটা ধরেই ফেলল। মামা ভূত ধ রে ছো,,,,
-হ্যা, সবাই চলে আয় ধরেছি। 
সবাই যখন কাছাকাছি এল ভূতটা নিরু মামার নীচ থেকে আবার দৌড় দিল। সেই যে দৌড় দিল সবাই দৌড়িয়েও আর ধরতে পারল না। 
সেই দিনের সেই ভূত দৌড়ানোর ঘটনাটি সবারই মনে থাকবে। নিরু মামার মনে থাকবে কি না কে জানে! আর কেউ না জানলেও নিরু মামা ঠিকই জানে ওটা আসলে ভূত নয় শেয়াল ছিল। টর্চের আলোতে শেয়ালের চোখ দুটোই সবার কাছে মনে হয়েছে ভূতের আগুন। নিশাচর প্রাণীদের চোখে লাইট পড়লে যে এমনই হয়। রেটিনা দিয়ে অতি উজ্জ্বল হয়ে এই আলো ফিরে আসে তখনই এই আলোকে ভূতের কুণ্ডলী মনে হয়।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS