ভিডিও

অকৃতজ্ঞ বাঘ

খালিদ বিন ওয়ালিদ

প্রকাশিত: অক্টোবর ০৫, ২০২৪, ০৫:৩১ বিকাল
আপডেট: অক্টোবর ০৫, ২০২৪, ০৫:৩১ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

অনেকদিন আগের ঘটনা। এক বনে একটি বাঘ খুবই ক্ষুধার্ত ছিল। সে গহিন বনে খাবারের খোঁজে বেরিয়ে পড়ল। সে সারা বন খুঁজেও খাওয়ার মতো তেমন কিছু পেল না। সে পথ চলছে, হঠাৎ সে চোখের সামনে শিকারির ফাঁদ পেতে রাখা একটি লোহার খাঁচা দেখতে পায়। তার ভিতরে একটা গলাকাটা ছাগল ছিল। বাঘটি জানত না যে খাঁচার ভিরতে প্রবেশ করলে সে বন্দি হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষুধার্ত থাকায় ছাগলটিকে দেখে আর নিজের লোভ সামলাতে পারল না। সে ছুটে গেল খাঁচাটির দিকে। খাঁচার কাছে গিয়ে সে ভিতরে প্রবেশ করে ছাগলটির গায়ে কামড় বসাতেই আচমকা খাঁচাটির দরজা বন্ধ হয়ে গেল। বাঘটি খাঁচার ভেতর বন্দি হয়ে গেল। বাঘটি এবার ভয় পেয়ে হুংকার করতে লাগল। বাঘটি নিজের সর্বশক্তি দিয়ে খাঁচা থেকে বেরুনোর চেষ্টা করেও কিছুতেই খাঁচা থেকে বাইরে বেরুতে পারল না। এক পর্যায়ে বাঘটি ক্লান্ত হয়ে খাঁচাতেই পরে রইল। সে বনের পশুদের কাছে মিনতি করতে লাগল কিন্তু নিজের প্রাণ হারানোর ভয়ে কেউ তাকে সাহায্য করল না। সে খাঁচাতেই বন্দি অবস্থায় পরে রইল। পরদিন সে বনে একজন কাঠুরে কাঠ কাটতে এলো। সে বাঘটি কাঠুরেকে দেখতে পায়। সে কাঠুরের কাছে মিনতি করল আমাকে খাঁচার থেকে মুক্ত করে দাও। আমার প্রাণ বাঁচাও। আমাকে তুমি মুক্ত করে দিলে আমি তোমার উপর চিরদিন কৃতজ্ঞ থাকব। কাটুরে বলল, আমি যদি তোমাকে মুক্ত করে দেই তুমি আমার ক্ষতি করতে পারো। আমাকে তোমার শিকার বানাতে পারো। আমি তোমায় কিভাবে বিশ্বাস করব? বাঘটি বলল, আমাকে তুমি বিশ্বাস করে মুক্ত করে দাও আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না। তোমার উপর চিরদিন কৃতজ্ঞ থাকব। কাটুরে বাঘটির এমন করুণ অবস্থা দেখে বলল, আমার কোন ক্ষতি করবেনা তো? বাঘটি বলল, না না ভাই আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না। এবার কাঠুরে অনেকক্ষণ ভেবে বাঘটিকে খাঁচা থেকে মুক্ত করে দিল। বাঘটি খাঁচা থেকে মুক্ত হয়ে নিজের কথা বদলিয়ে ফেলল। বাঘটি হাসতে হাসতে কাটুরেকে বলল, কাঠুরে তুমি বড্ড বোকা। আমি তোমার মতো এমন বোকা কাউকে দেখিনি। আমার প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে, আমি এখন তোমাকে হত্যা করে খাব। তোমাকে খেয়ে নিজের পেট ভরাবো। কাঠুরে এবার খানিক ভয় পেল। কাঁপা গলায় বলল, তুমি আমার ক্ষতি করতে পার না আমি তোমার প্রাণ বাঁচিয়েছি। উপকারির অপকার কেউ করে নাকি? বাঘটি বলল, আমার প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে। আহ! কতদিন যে সুস্বাদু মাংস খাইনা আজ তোমার মাংস খাব। কাটুরে এবার একটু বৃদ্ধি খাটিয়ে বলল, তুমি যেহেতু আমাকে খাবেই চল আমরা এই যে আম গাছটি দেখছ, তাকে জিঙ্গাসা করি তুমি কি কাজটা ঠিক করছ? যদি সে বলে তুমি কাজটা ঠিক করছ তাহলে নাহয় আমাকে খেয়ে নিও। আর সে যদি বলে এটা করা মোটেও ঠিক নয় তাহলে তুমি আমাকে খেতে পারবেনা। বাঘটি তার কথায় সম্মতি জানাল। তারা দুজনে একটি আম গাছের সামনে এসে দাড়াল। সে গাছটিকে বলল, এই যে গাছ ভাই তোমাকে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার ছিল। গাছটি বলল, কি বলবে বল। কাটুরে বলল, দেখ না গাছ ভাই আমি এই বাঘটিকে শিকারির খাঁচা থেকে মুক্ত করে তার প্রাণ বাঁচিয়েছি, এখন সে আমাকে খাওয়ার কথা বলছে, তুমিই বল দেখি এটা কি সে ঠিক করছে? উপকারির অপকার কি কেউ করে? গাছটি বলল, সে তো ঠিকই করছে দেখ আমি আম গাছ- আমি তোমাদের ছায়া দেই, ফল দেই, কত কত উপকার করি তবুও তোমরা আমাদের কেটে ফেলে কষ্ট দাও। তোমরা আমাদের উপকার শিকার করতে চাওনা। তোমরা বড়ই অকৃতজ্ঞ। এবার বাঘটি বলল, তুমিতো নিজেই গাছের অপকার করছ। এবার বল, আমি তাহলে কি ভুল করছি? এবার আমি তোমাকে খাব। কাঠুরে বলল, এতো তাড়া কিসের চল আমরা আরও কজন কে জিঙ্গাসা করি। এবার কাঠুরে একটা শিয়ালকে দেখতে পেল। কাঠুরে শিয়ালকে কাছে ডাকল। শিয়ালটি কাছে এসে বলল, কি হয়েছে ডাকছ কেন? দেখ না শিয়াল ভাই আমি এই বাঘটিকে শিকারির খাঁচা থেকে মুক্ত করে তার প্রাণ বাঁচিয়েছি এখন সে বলছে সে নাকি আমাকে মেরে খাবে। তুমি বল দেখি এটা কি সে ঠিক করছে?  

শিয়াল সম্পূর্ণ ঘটনা শুনে বুঝতে পারল কাটুরে কঠিন বিপদে আছে তাকে বাঁচাতে হবে। শিয়াল মাথায় একটা বৃদ্ধি খেলা করছে। শিয়ালটি বলল, আমি সে খাঁচাটা না দেখা পযর্ন্ত কিছু বলতে পারবনা। চল তোমরা আমাকে খাঁচার কাছে নিয়ে চল। আগে খাঁচাটা দেখতে হবে নাহলে কিছু বলা যাবেনা। এবার তারা তিন জন মিলে যে জায়গায় খাঁচা ছিল সেখানে গেল। কাঠুরে বলল, এই যে দেখছ খাঁচা এখানে বাঘটি বন্দি ছিল আমি তার প্রাণ বাঁচিয়েছি, এখন সে বলছে নাকি আমাকে খাবে। তুমিই বল দেখি এটা করা কি সে ঠিক করছে? শেয়ালের মাথায় একটা বৃদ্ধি খেলা করছে। সে বুঝেও না বোঝার ভান ধরে বলল, দাঁড়াও দাঁড়াও তুমি কি বললে? কাঠুরে তুমি খাঁচায় বন্দি ছিলে বাঘটি তোমাকে বাঁচিয়েছে। কাঠুরে বলল, আরে তা নয় বাঘটি খাঁচাতে বন্দি ছিল আমি তার প্রাণ বাঁচিয়েছি। শিয়াল এবারও না বোঝার ভান ধরে বলল, এবারও বুঝলাম না একটু বুঝিয়ে বলবে বাঘটি খাঁচাতে বন্দি ছিল খাঁচাটি বাঘকে বাঁচিয়েছে। এবার বাঘটি রেগে গিয়ে বলল, আমিতো জানতাম শিয়ালরা অনেক চালাক হয় এতো দেখি চরম বোকা।

শিয়াল বলল, আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা ভালো করে বুঝিয়ে বল। বাঘটি কোথায় বন্দি ছিল? বাঘটি বলল, আমার সাথে এসো আমি তোমাকে দেখিয়ে দেই কে কোথায় বন্দি ছিল বলে বাঘটি খাঁচার ভিতর প্রবেশ করল। বাঘটি বলল, এইযে আমি এখানে খাঁচায় বন্দি ছিলাম কাটুরে এসে আমার প্রাণ বাঁচিয়েছে। শিয়াল এবার চট করে খাঁচার দরজা বন্ধ করে দিল। বাঘটি ধরা খেয়ে গেল। বাঘটি শিয়ালকে বলল, শিয়াল মামা! শিয়াল মামা! আমাকে খাঁচা থেকে বাইরে বের কর আমি তোমাদের কোন ক্ষতি করবনা। আমি তো শুধু কাঠুরের সাথে মজা করছিলাম। শিয়াল বলল, তুই বড্ড অকৃতজ্ঞ। তুই এখানেই বন্দি থাক বেরুনোর দরকার নেই। শেষে শিয়ালটি চলে গেল। কাঠুরেও নিজের বাসায় ফিরে এলো। বাঘটি সে খাঁচাতেই বন্দি পরে রইল।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS