ভিডিও

ভূতে খায় দুধ

মোঃ আশতাব হোসেন

প্রকাশিত: মে ০৪, ২০২৪, ০৮:২৩ রাত
আপডেট: মে ০৪, ২০২৪, ০৮:২৩ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

চরের নাম নুনখাওয়ার চর। চরটিতে আছে ঘন ঝাউগাছ। চরের লোকজন পাটখড়ি,বাঁশ,কাঠ,খড় আবার কেউ কেউ টিনের চালা তৈরি করে বাস করে। নদীর ভাঙ্গাগড়া খেলায় নিজেদের মানিয়ে নেয়া তাদের সরল অভ্যাস। একপাশ ভাঙ্গলে অন্যপাশে বসবাস করে। নদীর তীরের সকলেই সাঁতারে দক্ষ। গরু মহিষও সাঁতরে যে চরে ঘাস বেশি সে চরেই গিয়ে  ঘাস খায়। আবার সাঁতরে গোয়াল ঘরে ফিরে আসে । চরে যে ঝাউগাছ আছে তার বেশীরভাগ গাছেই ভূতের বাসা ।

চিকন গাঢ় সবুজের ঘনপাতার ঝাউগাছের সাথে আদিকাল থেকেই ভূতের ঘনিষ্ঠতা। সেজন্য দিনে ভূতের লুকিয়ে থাকতে সুবিধা। ভূত রাখালকে দেখলে খুব ভয় পায়।কেননা রাখালের হাতে  থাকে বাঁশের শক্ত লাঠি যা দিয়ে সে গরু মহিষ-নিয়ন্ত্রণ করে । লাঠি ও গরুর গন্ধ ভূতের অসহ্য।  ভূতেরা দিনে ঘুমায়, রাতে আহার করে। একদিন এক ভূত রাখাল সেজে  গরুর রাখালের কাছে গিয়ে অনুনয় করে তার সাথে কাজ করতে চায়, বিনিময়ে তুমি যা দাও দিবে। আমার বাড়িতে বুড়া বাবা মা, তারা এহন কাম করবার পারেনা।  সংছারের হাল দরবার কেউ নেই,  দইয়া হরে আমাক কামটি দাও দাদা। ছেলেটির অনুরোধে আসল রাখাল বলে এতো করে যহন কইতাছিস তয় কাল হকাল থেহে আইবি, যোদ্দার চরে। ছোট রাখাল খুশিতে নাচতে নাচতে চলে গেলো ঝাউবনের ভিতরে। পরের দিন সকাল ৯ টা বাজতেই রাখাল  গরুর পাল নিয়ে যোদ্ধার  চরে হাজির।

কিছুক্ষণ পরে ছোট রাখাল ঝাউবনের দিক থেকে চটজলদি চলে এলো বড় রাখালের কাছে। বড় রাখালের নাম জাগল।  সে ছোট রাখলকে জিগ্যেস করে, তর নাম যেনো কি? ছোট রাখাল বলে পল্টু।  আছা পল্টু তর বাড়ি যিনু কোনহানে? পল্টু বলে, ঝাইবনের পশ্চিমে । ও আচ্ছা তা হলে ঠিক মতো কামকাজ হরবি। আর ঐযে চারটি বড় গাই দেখতাছোস ঐ চারটি গাইই  দুধ দেয়। ওদের বেশি খাওয়াবি । দুধ যেনো কম না অয়, দুধ কইম্যা গিলে হামার চারকি কিনতু ফুট্টুস। মনে যিনু থাহে। পল্টু  খুশি হয়ে  মনে মনে বলে কি মজা কি মজা!  

এবার দুধ খেয়ে শরীরটা খানিকটা বাহারি করা যাবে হা হা হা হি হি হি! বেলা ১২ টা বাজে জাগলের ক্ষুধা পেয়েছে তাই পল্টুকে বলে তুই গরু দেখবি আমি নদী থেহে গোসল সেরে কিছু খানাপিনার করি। পল্টু বলে আইচ্ছা দাদা, কোনু সমেস্যা নাই। গোসল সেরে জাগল গুড় রুটি খেয়ে এক রুটি ও কিছু গুড় পল্টুকে দিয়ে বলে নে নে তুই খা।

প্রতিদিন আমি একটি রুটি আর কিছু গুড় তরজন্যি বেশি হরে আনবানে তুই খায়া নিবি। পল্টু গুড় রুটি পেয়ে আরো খুশি কারণ ভূতের পেট রাবারের মতো, কম খেয়ে তুষ্ট হয় না তাই গাভীর গরম দুধ তারপর রুটি ভোজন যেনো মেজবান বাড়ির খানা!  সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে জাগল বলে পল্টু তুই চইল্যা যা বাড়িতে, আমিও গরুর পাল নিয়ে যাই। প্রতিদিনের মতো সকাল বিকাল গরুর দুধ দোহন করে  জাগল দেখতে পায় আগের দিনের চেয়ে চারটি গরুর দুধই কম হয়েছে।

বালতি নিয়ে মালিকের কাছে গেলে  দুধের বালতি দেখে বলে, এদিকে নিয়ে আয়তো দেহি দুধ কতোগুলি হবে। রাতে কেলু ঘোষ আসবে , চল্লিশ কেজি দুধ চেয়েছে। জাগল বালতি হাতে পালান যোদ্ধারের কাচে গেলে বলে দুধ কি এখানেই সব? জাগল বলে জ্বি কর্তা! তবে এতো কম কেনো? কেলু ঘোষকে আমি আজ চল্লিশ কেজি দুধ দিবার চাইছি এখানেতো বিশ কেজিও অবেনেনা, দুধের কি হলো তুই কি মাঠেই দুধ খেয়েছিস ? জাগলের গলা শুকিয়ে কাঠ ! বলে না না না কর্তা!  গরুগুলি ঘাস বেশী পায়নাতো তাই! পালান যোদ্ধার বলে হারামজাদা মাস শেষ হলে বুঝবি মাইনা কতো কমে যায়! ভয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে জাগলের!পালান যোদ্ধার বলে তোর মাইনা থেকে পরিমান মতো দুধের টাকা কাটা যাবে। তবে চাকুরি আপাতত থাকবে কিছুদিন।  

পরদিন আবার চরে যায় গরুর পাল নিয়ে। গিয়ে দেখে পল্টু আগেই এসে বসে বসে গান গাইছে। পলটুর খুশি খুশি ভাব দেখে জাগলের সন্দেহ গভীর হয়। ভাবে এটা কেমন মানুষরে! শরীরের কাছে গিয়ে নাক টেনে টেনে গন্ধ নেয় জাগল।পল্টুর শরীর থেকে মাছের গন্ধ পেয়ে চুপসে যায় । এটাতো ভূত!  আজ নয় কাল হবে ভূতের চিকিৎসা লাঠি দিয়ে। কিছু সময় ভেবে পল্টুকে ডেকে বলে আয় এদিক আমারা একটু গপ্প করি, পল্টু আসে তবে একটু দূরেই বসে। গল্পের তালে তালে দুপুর চলে আসে।  জাগল বলে পল্টু আমি গোসল করে খাইয়া আসি, তুই গরুগুলি দেখিস। পল্টুর যেনো মুখে রস পড়ছে।  

জাগল দূরে গিয়ে নজর করে পল্টুর দিকে, দ্যাখে পল্টু হাত পা রাবারের মতো লম্বা করে গাভীর পা মুড়িয়ে ধরে পালান থেকে দুধ চুষে খাচ্ছে! জাগল কাছে এসে ডাকে কিরে পল্টু কই তুই? আমিতো গামছা পাচ্ছি না কই সেটা? মানে চোর ধরার জন্যই গামছা একটু আড়ালে রেখেছে। পল্টুর মাথায় যেনো পর্বত পড়লো একপলকে রূপ বদল করে এসে বলে জ্বি দাদা, গামছাতো এইতো গামছা নিন। জাগলের ধারনা পরিষ্কার! এরপর জাগল পল্টুকে নিয়ে এক সাথে রুটি খেয়ে জাগলের হাতের সেই বাঁশের লাঠির বয়ন শুরু করে। এই লাঠি দিয়ে কতো ভূত তাড়িয়েছে।

কেউ কেউ পালাতে গিয়ে লাঠির পেটায় জীবন রেখে গেছে চরে; এ সব শুনে পল্টুরতো মাথা নষ্ট গরু পেটানো লাঠি! বাপরে বাপ! এটার এক পেটা খেলেইতো আমার রূপ হারাব আর পাল্টাতে পারবনা জীবনে। কিন্তু দুধের স্বাদের কথা মনে করে ভাবে এই বোকা রাখাল আমাকে ধরতে পারবেনা! সন্ধ্যে হয়ে এলে জাগল পল্টুকে বলে যা তাহলে বাড়িতে, আমিও যাই। জাগল গিরস্থের বাড়ি গিয়ে বিগত দিনের মতোই গাভীর দুধ দোহন করে দেখে আজ দুধ বেশি হয়েছে মানে ভূতে খেতে পারেনি। দুধের বালতি দেখে পলন যোদ্ধার বলে এদিকে আয় দেহি, আজ বালতি দুটি দেখছি! বালতিতে চোখ রেখেই পালানের মুখে হাসির ঝলক। এবার তা হলে হাত মুখ ধুয়ে এক গ্লাস গরম দুধ ঢাইলা নে পরানটাতে।

পালান যোদ্দার তার গিন্নীকে ডেকে বলে কইগো গিন্নী এক গ্লাস গরম দুধ দাও জাগলকে। কালতো কেলু ঘোষ রাগ করে দুধ থুইয়া গেছে আজ  সমস্যা নাই, তার চাহিদার দুধ আইজ দেয়া যাবেনে। জাগল  বলে কর্তা একটা কতা কইবার চাই, কর্তা বলে বল দেখি, কাইল বেলা মাথার উপর আইলেই নৌকাটা নিয়ে একটু চরে যাইবান কর্তা। যোদ্ধা বলে কি কাম আছে তয় কয়া ফালাতো দেহি কি হরা যায়। জাগল বলে ঐ ঝাউবনের ভূত দুধ খেয়েছে।  আপনে গেলে নিজের চোহে দেহে আসপার পারবেন কর্তা, আপনার ভুলটাও বিতারিত অইত আর বেতনও বাড়তো আচ্ছা আমি যাবানে।

সারারাত জাগল চিন্তা ফন্দি করে কি করে ভূতের বাচ্চাটারে সায়েস্তা করা যায়। পরের দিন জাগল  যায় গরু নিয়ে যোদ্ধার চরে, পলন যোদ্দ্ার বেলা ১২টার দিকে যায় একটু দূর থেকে দেখেই জাগল পল্টুকে বলে, পল্টু তুই গরু দেহেগ আমার আসতে একটু দেরি হবেনে আজ আমি গোসল করে ঐযে বড় ঝাইগাছ সেহানে বসে রুটি খেয়ে তর জন্য নিয়ে আসমনে। পল্টু বলে দরহার নেই দাদা আইজ আমি বালা মতো মুরগীর গোস্ত আর খিচুড়ি খায়া আইছি।

পেটে খিদা নেই। বেশ, বেশ! তা হলে থাক। বড় ঝাউগাছের সাথে নৌকা বেঁধে নেমে আসে পালান।  জাগল বলে কর্তা আমার পিছু পিছু আসেন, আফনারে আজ ভূতের বাচ্চা দেহামুনে। পালান  জাগলের কথামতো চলে, দ্যাখে চারটি দুধাল গাভীকে এক সাথে করেছে ভূতের বাচ্চা পল্টু। করে মাত্রই হাত পা লম্বা করেছে গাভীর পা পেচাবে এমন সময় গরুর পিছনে গিয়ে জাগল ও যোদ্দার চুপেচাপে হাজির! জাগল আস্তে আস্তে বলে কর্তা দেহেন দুধ কে খায় দেহেন কি তার লম্বা লম্বা হাত পা! যোদ্দার দেখে বলে তাইতো! তবে কি করা যায় এতো খুব মুসকিল! জাগল বলে ভয়ের কিছু নেই কর্তা।

দেহেন আমি অরে কিমুন হাজা দেই। এই বলে তার হাতের লাঠি দিয়ে ভূতের দু'পা পেচিয়ে কড়া এক বাড়ি মারে! ভূতের বাচ্চা একেবারে আকাশ ফাঁটা চিৎকার করে বলে কে রে হেমন খাম খরলি হামার জান ছলে গেলোরে! হেই গরু ফেটানো লাতি দিয়ে হামারে পিতালি, হামিতো আর রূপ বদল হরিতে পারিব না! হায় হামি এবার শেষ! এমন ভয়ংকর কান্ড দেখে পালান যোদ্দার তার পরের দিনই সততা ও সাহসের স্বীকৃতি স্বরুপ  রাখালের মাসে এক হাজার টাকা মাইনা  বৃদ্ধি করে দেয়। 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS