ভিডিও

গুরুজনের শিক্ষা

মঞ্জুর মোর্শেদ রুমন

প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২৪, ০৫:১৭ বিকাল
আপডেট: জুলাই ১৩, ২০২৪, ০৫:১৭ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

পাহাড় এবং ঘণ বনের মধ্যে অবস্থিত একটি গ্রামে ইলিয়াস নামে এক বৃদ্ধ এবং তার নাতি সানি বাস করতেন। ইলিয়াস তার প্রজ্ঞা এবং দয়ার জন্য অনেক বেশি পরিচিত ছিলেন। তিনি তার নাতিকে অনেক আদর করতেন। প্রতিদিন বিকালে তারা বাড়ির সামনে  বারান্দায় বসে সূর্যাস্ত দেখতেন এবং প্রকৃতির শব্দ শুনতেন। ইলিয়াস প্রায়শই তার যৌবনের গল্পগুলি তার নাতিকে শোনাতেন,যা ছিলো নৈতিক এবং শিক্ষণীয়। 
এক গ্রীষ্মের বিকেলে  ইলিয়াস লক্ষ্য করলেন সানিকে কিছুটা অস্থির আর বিমর্ষ দেখাচ্ছে। মৃদু হেসে ইলিয়াস জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি মন খারাপ, দাদু? সানি একটু ইতস্তত করল, তারপর গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল দাদা, স্কুলে, মুন  নামে একটি ছেলে সবসময় জ্বালাতন করে। সে আমাকে এটা সেটা উল্টা পাল্টা বলে এবং সবার সামনে আমাকে নিয়ে মজা করে। খুব খারাপ লাগে। কি করব বুঝতে পারছি না। ইলিয়াস একটু চিন্তা করলো এবং  সানিকে বললো, চলো, আমরা বাগানে হাঁটতে যাই।
এরপর তারা দুজন লম্বা লম্বা সারি আপেল গাছের বাগানে গেল। গাছগুলোতে ধরে আছে অনেক আপেল। ইলিয়াস সানিকে বাগানের একটি বিশেষ গাছের কাছে নিয়ে যান এবং এর শিকড়ের দিকে নির্দেশ করে বলেন, এটা বাগানের সবচেয়ে পুরাতন,মোটা এবং ফলবান গাছ।  ইলিয়াস তার নাতি সানিকে আঙ্গুল দিয়ে গাছটি দেখিয়ে বললেন, "তুমি কি এই গাছটা দেখতে পাচ্ছ, সানি?। এটি শক্ত থাকে এবং মিষ্টি ফল দেয় কারণ এর শিকড় অনেক গভীর, মাটি থেকে পুষ্টি জোগায় এবং অনেক পরিণত। তবে গাছটি শুরুর দিকে এত শক্তিশালী ছিল না। যখন এটি ছোট ছিল, তখন এটি অনেক ঝড় ও তীব্র বাতাসের মুখোমুখি হয়েছিল। এর কিছু শাখা ভেঙে গিয়েছিল, তবুও এটি বাড়তে থাকে কারণ এর শিকড় শক্ত ছিল।এবং যতদিন যায়, গাছটি এসব ঝড়-ঝাপ্টার সাথে লড়াই করে ধীরে ধীরে একসময় পরিণত হয়।    
সানি মাথা নাড়ল বটে,তবে তার দাদার কথা কিছুই বুঝতে পারছেনা।সে বুঝতে পারছেনা অনিশ্চিত গল্পটা তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।  মানুষ অনেকটাই গাছের মতো, ইলিয়াস চালিয়ে যান। আমরা অন্যদের কাছ থেকে মাঝে মাঝে  বাজে  শব্দ এবং আঘাত পাই,খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হই  যা  ঝড়ের মতো । মুনের উত্ত্যক্ত করা হলো  তীব্র ঝড়ের মতো যা তোমাকে দোলাতে চেষ্টা করে। কিন্তু মনে রাখবে সানি, তোমাকে অবশ্যই তোমার শিকড়-তোমার মূল্যবোধ এবং আত্মবিশ্বাসের উপর ভরসা করতে হবে। যদি তুমি তার কথায় রাগ বা সাথে  সাথে প্রতিক্রিয়া  দেখাও,তবে  তুমি নিজেকে সেই ঝড়ের মধ্যে  উপড়ে ফেলে  দিচ্ছো। কিন্তু  সে সময় তুমি যদি মনোবল শক্ত করে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াও এবং দয়া ও ধৈর্যের পরিচয় দাও, তাহলে দেখবে আস্তে আস্তে তুমি সেই কঠিন পথ অতিক্রম করতে পারছো। এটাই তোমার সফলতা। রাগ,হিংসা কখনো ভালো কিছু নিয়ে আসে না। কিন্তু দাদা সানি  জিজ্ঞেস করল। যে আমার প্রতি এত খারাপ, তার প্রতি আমি কীভাবে সদয় হতে পারি?
ইলিয়াস মৃদু হেসে গাছ থেকে একটা আপেল তুলে সানির হাতে দিল। যেমন এই গাছটি প্রত্যেককে তার মিষ্টি ফল দেয়, তারা যেভাবেই আচরণ করুক না কেন। তুমিও দয়াবান ও ধৈর্যশীল হতে পারো। তোমার এ আচরণ  মুনকে রাতারাতি পরিবর্তন করবেনা বটে, তবে এটি তাকে একটু ভাবাবে। তারপর সে যখন তোমার কাছ থেকেও পাল্টা প্রতিক্রিয়া পাবেনা, দেখবে একটা সময় পরে সে তোমার সাথে এমন আচরণ আর করবে না। সময়ের সাথে সাথে, সে তোমার প্রতি খারাপ ধারণাও পোষণ করবে না। এমনকি একসময় তোমার ভালো বন্ধু হতে পারে।  তারপর সানি হাতের আপেলটি খেতে খেতে তার দাদার কথাগুলো ভাবছিল। পরের দিন স্কুলে  যখন মুন প্রতিদিনের মতো  উত্যক্ত করতে শুরু করে, সানির  মনে পড়ে শক্ত গাছটির কথা। আরও মনে পড়ে দাদার সেই কথাগুলো। কিন্তু আজকে সে আর রাগ করে না। বরং মৃদু হেসে মুনকে বলে, মুন, তুমি কি স্কুল  ছুটির পর আমার সাথে খেলতে চাও?    
মুন অবাক হয়ে গেল, এমন আচরণ সে আশা করেনি। সে  বিড়বিড় করে বলল, আচ্ছা।  যাই হোক, পরের কয়েক সপ্তাহে, মুন সানির  সাথে সদয় আচরণ করতে থাকে এবং ধীরে ধীরে উত্ত্যক্ত করাও কমে যেতে থাকে।  এমনকি মুন  ভালো আচরণ করতে শুরু করে। সে এখন সানি এবং তার বন্ধুদের সাথে  নিয়মিত খেলাধুলা করে। তাদের মধ্যে এখন কোন বৈরী সম্পর্কও নেই। এর কয়েকদিন পর এক বিকেলে যথারীতি সানি  যখন তার দাদার সাথে বারান্দায় বসেছিল, তখন সে কী ঘটেছিল তা শেয়ার করছিল তার দাদার সাথে। সে বলতে লাগলো কিভাবে দাদার কথামতো চলার কারণে মুনের সাথে তার ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। ছোট্ট সানির মুখে এসব শুনে ইলিয়াস হাসল,খুশিতে তার চোখ টলমল করছে। তারপর ইলয়াস তার নাতি সানিকে বললো, দেখো সানি, দয়া হল একটি গাছের শিকড়ের মতো। এটি আমাদের ভালো মানুষ গড়ার ভিত্তি করে, আমাদের শক্তিশালী রাখে এবং এমনকি কঠিনতম ঝড়কেও মৃদু বাতাসে রূপান্তরিত করতে পারে। সাথে সাথে গাছটি মাটি থেকে উপড়েও পড়েনা। সেই দিন থেকে, সানি  উদারতার শক্তি এবং তার মূল্যবোধে দৃঢ় থাকার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলো। এবং আপেল গাছের মতো সে  শক্তিশালী, জ্ঞানী এবং দয়ালু  হওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। আর সর্বদা তার দাদা তাকে যে শিক্ষা দিয়েছিলেন তা মনে রাখে।     



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS