ভিডিও

লাটিম তলায় লাটিম লাটিম খেলা

সাঈদুর রহমান লিটন

প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২৪, ০৫:৩৯ বিকাল
আপডেট: জুলাই ১৩, ২০২৪, ০৫:৩৯ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

অয়নদের স্কুলটি রাস্তার তেমাথায় অবস্থিত । একটি রাস্তা গেলো গোপালদী বাজারের দিকে, একটি লক্ষ্মীনারায়ণপুর স্কুলের দিকে আর একটি বেলেশ্বর বাজারের দিকে। বেলেশ্বর বাজারের দিকে বাইপাস হয়ে আরেকটি রাস্তা ঢুকে গেছে মধুখালীর দিকে। ঐ রাস্তায়ই অয়নদের বাড়ি। অয়ন তৃতীয় শ্রেণির মেধাবী ছাত্র। বাবা মাছের ব্যবসা করেন। মা শিক্ষিত। বিএসসি পাশ। অয়নের মা-ই অয়নকে পড়ায়। কোন প্রাইভেট টিউটর রাখে না। সে জন্যই অয়ন আর সবার চেয়ে একটু পড়াশোনায় ভালো। স্কুলের সবাই অত্যন্ত ভালোবাসে। 
স্কুলের যাওয়ার পথে যে রাস্তা দিয়ে গোপালদী বাজার যাওয়া যায় ঐ রাস্তার একটু  দূরে এগিয়ে গেলে গোপাল স্যারের পরিত্যক্ত ভিটা। ভিটায় নানা জাতের জংলী গাছ গাছলায় ভরপুর। তার মধ্যে একটি লাটিম গাছ আছে। কেউ কেউ ডুমুর গাছ বলে। গাছে প্রচুর ডুমুর ফল ধরেছে। ডুমুর ফল ছোট গোল গোল। সবুজের উপর হালকা ছাই রং এর আবরণ আছে। দেখতে দারুণ লাগে। কিশোর ছেলেমেয়েরা  লাটিম খেলায়। ছোট আকৃতির লাটিম সাইজের ফল। এ ফল খাওয়া যায়না। এই ফলের ভিতরে একটি কাঠি ঢুকিয়ে লাটিম বানিয়ে ছোট ছেলেমেয়েরা ঘুরায়। এই জন্যই হয়তো এই গাছের নাম লাটিম গাছ বলে থাকে কেউ কেউ। স্কুলের চারপাশে বাউন্ডারি। লাটিম গাছটি স্কুলের খুব কাছাকাছি হলেও বাউন্ডারির কারনে দেখা যায় না। গাছের নিচে ছেলেমেয়েদের বেশি আনাগোনার কারনে এখন এই গাছের নিচে কোন ঘাস লতাপাতা জন্মায় না। নিয়মিত লাটিম খেলা চলে। যতদিন গাছে ফল আছে ততদিন চলবে। এই গাছের পাশদিয়েই  গোপাল স্যারের বাড়ি যেতে হয়। গোপাল স্যারের বাড়িতে বাৎসরিক  নাম যজ্ঞনানুষ্ঠান হয়। এই পথই একমাত্র যাতায়াত পথ। তাই এই গাছের নিচে বড় একটি ইলেক্ট্রিক বাল্ব লাগানো হয়েছে। যা সন্ধ্যে হওয়ার সাথে সাথে জ্বলে ওঠে। সে জন্য সন্ধ্যের পরও লাটিম প্রতিযোগিতা চলে।
পৃথিবীর সব শিশু প্রকৃতির সাথে খেলতে চায়। অয়নও আর দশটা ছেলে-মেয়ের মত ,পড়াশোনা আর খেলাধূলা দুটোই করতে চায়। কিন্তু অয়নের মা খেলাধূলা করলে গায়ে ধুলোবালি জড়াবে তাই তা করতে দিতে চায় না। তাই তো স্কুলে এসে লাটিম ঘুরানো খেলায় অয়ন মেতে ওঠে।  এভাবে চলতে চলতে একদিন অয়ন স্কুল ছুটি হলে বাড়ি ফেরে না। অয়নের মা লক্ষ্মী রানী ভাবে হয়তো কারো সাথে গল্প করছে বা খেলছে। সাংসারিক নানা ব্যাস্ততায় অয়ন যে স্কুল থেকে ফিরেনি তা তিনি ভুলে যায়।  সন্ধ্যা পার হলে মনে পরে অয়ন তো ফেরে নাই। সব জায়গায় খোঁজ করে। সব প্রতিবেশীদের বাড়ি যায়, অয়নকে কোনো বাড়িতেই পাওয়া যায় না। সম্ভাব্য সকল বাড়িতে খোঁজ করা হয়ে গেলো। মাগরিবের নামাজও শেষ, তবুও অয়ন ফেরে না। এবার অয়নের মায়ের চিন্তা হয়। তিনি বাড়ি থেকে বের হন ছেলেকে খুঁজতে। লক্ষ্মী রানী হাঁটতে হাঁটতে স্কুলের আশে পাশে খোঁজ খবর নেয়। কিন্তু অয়নের খোঁজ কেউ জানে না। অনেকের কাছ জানতে পারেন স্কুলের গোপাল স্যারে বাড়িতে নামযজ্ঞ অনুষ্ঠান হবে। শুনে তিনি চিন্তা করলেন, গোপাল স্যারের বাড়িতে নামযজ্ঞ অনুষ্ঠানে বন্ধুদের সাথে গেছে হয়ত। এই ভেবে তিনি গোপাল স্যারের বাড়ির পথে রওয়ানা হন। কিছুদূর এগিয়ে দেখতে পান, লাটিম গাছের তলায় বিদ্যুতের আলোতে কয়েকজন ছেলে লাটিম ঘুরাচ্ছে। কাছে গিয়ে দেখতে পান অয়ন ও আছে তাদের সাথে। তার কাছে গিয়ে বললেন, অনেক খেলা হয়েছে,এবার চলো বাড়ি। আর খেলতে হবে না। অয়ন বলল,দাঁড়াও মা আর একটু খেলে নেই। অয়নের মা এবার রেগে গিয়ে অয়নের হাত ধরে টেনে হিঁচড়ে বাড়ির দিকে তাকে  নিয়ে যেতে লাগলো। কিন্তু অয়নের লাটিম খেলার নেশা পেয়েছে। সে আরও খেলবে, বাড়ি যাবে না। অয়ন চিৎকার করতে লাগলো। গাছ আছে লাটিম তলায় লাটিম লাটিম খেলা। 

 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS