ভিডিও

বৃষ্টিভেজা কদম

পঞ্চানন মল্লিক

প্রকাশিত: আগস্ট ০৩, ২০২৪, ০৫:২৪ বিকাল
আপডেট: আগস্ট ০৩, ২০২৪, ০৫:২৪ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

বর্ষাকালে পরীক্ষা শেষে গ্রামে এসেছে প্রান্ত। প্রান্তর বাবা শহরে চাকরি করেন। সেই সূত্রে তারা শহরে থাকে। প্রান্তর জন্ম শহরে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে সে সময় পেলে গ্রামে আসে। যখন সে ছোট ছিল তখন সে  বাবা মায়ের সাথে আসতো। এখন সাথে কেউ না এলেও একা আসার মত বড় হয়েছে সে। প্রান্তর দাদা-দাদী গ্রামে থাকেন। তাদের গ্রামের বাড়ি আধা পাকা,টিনসেড ঘর। বাড়ির পিছনে একটি বড় গাছগাছালির বাগান আছে। প্রান্ত গ্রামের বাড়ি এলেই তাদের বাগান ঘুরে দেখে। বাগানে নানান ধরনের গাছগাছালি রয়েছে। একদিন প্রান্ত তার দাদাকে সঙ্গে নিয়ে বাগানে ঢুকলো গাছ দেখতে। বাগানের প্রথমে বেশ কিছু নারকেল, সুপারির ও কাঁঠালের গাছ। এরপরে বড় বড় ৩টি আম গাছ। এখন বর্ষাকাল তাই আম নেই গাছে। কিছুদিন আগে গাছে আম ছিলো। প্রান্তদের গাছের আম অতি সুস্বাদু। দাদার পাঠানো আম সে খুব মজা করে খেয়েছে এবার। প্রান্ত দেখলো খড়কুটো দিয়ে পাখিরা আম গাছ্ েযে বাসা বেঁধেছিলো বৃষ্টির পানিতে তা নরম হয়ে গলে পড়েছে। গাছের গায়ে শুধু কিছু খড়কুটো ঝুলে আছে। বাসার পাখির ছানা বড় হয়ে উড়ে গেছে ইতোমধ্যে। আমগাছগুলোর পিছনে প্রান্ত দেখলো একটি বাঁশঝাড়। বৃষ্টি পেয়ে বাঁশের গোড়া দিয়ে নতুন চারা/বাকল বের হয়েছে। এগুলো বড় হলে এক একটা নতুন বাঁশ হবে। বাঁশ ঝাড়টি ঘণ আর ঘিঞ্জি। কিন্তু তার ফাঁক দিয়ে প্রান্ত আরও কিছু গাছ দেখতে পেলো। গাছের পাতাগুলো বেশ বড় আকৃতির। তার নিচে থোকায় থোকায় ফুল ফুঁটে আছে। প্রান্ত গাছগুলোর নাম জানেনা। কিন্তু গাছ আর ফুলগুলো দেখতে খুব সুন্দর, তাই দাদুর কাছে জিজ্ঞাসা করলো,“দাদু ঐ গাছগুলোর নাম কি? দেখো কি সুন্দর ফুল ফুঁটেছে। আমি ঐ ফুল নেবো দাদু”। প্রান্তর কথা শুনে দাদু বললেন,“ ওগুলো কদমফুল গাছ, দাদু। কিন্তু ওখানেতো এখন যাওয়া যাবেনা দাদু। দেখছোনা গাছগুলো একেবারে বাগানের শেষ প্রান্তে, ঝোঁপের ভিতরে, তাই ওখানে গিয়ে এর ফুল তোলা এখন একপ্রকার অসম্ভব”। হঠাৎ প্রান্ত দেখতে পেলো বৃষ্টি কিছুটা জোরে পড়া শুরু করেছে। একটু আগে আকাশ ভালো দেখে দাদুর সঙ্গে শুধু একটা জামা পরে বের হয়ে এসেছে ও । তাই বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার ভয়ে খুব দ্রুত দৌড়ে বাগান থেকে ঘরে ফিরে আসলো ও। সঙ্গে তার দাদুও আসলো। এরপর বারান্দার বেলকনিতে বসে দাদুর সাথে কদম ফুল নিয়ে আলোচনা করতে লাগল প্রান্ত। প্রান্ত তার দাদুকে জিঞ্জাসা করল,“আচ্ছা দাদু অন্যসব ফুলের মতো কদম ফুলের চারাও কি লাগাতে হয়”। দাদু বললেন লাগানো যায়। তবে বেশিরভাগ বন বাদাড়ে এমনিতেই প্রাকৃতিক উপায়ে জন্মায় এ গাছ।

এর কদিন পর প্রান্ত শহরে ফিরে গেলো। কিন্তু কদম ফুলের কথা তার মাথা থেকে যাচ্ছে না। প্রান্তদের বাসার ছাঁদে টবে অনেক গাছপালা লাগানো আছে। হঠাৎ তার মাথায় একটা চিন্তা এলো। তার স্কুলে যাওয়ার পথে যে একটা নার্সারী আছে,সেখান থেকে একটা কদম চারা কিনে এনে সে টবে লাগাবে। তাহলে কদম ফুল তাদের ছাদেও ফুঁটবে। এর পরের দিন স্কুল থেকে ফেরার সময় নার্সারী থেকে অনেক খুঁজে খুঁজে একটা কদমচারা এনে প্রান্ত তাদের ছাদে টবে লাগালো। এরপর কয়েকদিন প্রান্ত ছাদে গিয়ে দেখলো কদম চারাটি বেশ তরতাজা আছে। প্রান্তর মুখে অনেক হাসি ফুটলো। কদম গাছটি বড় হলে এতে নিশ্চয়ই অনেক ফুল ফুঁটবে। তখন সব বন্ধুকে ফুল দেবে ও। এর কয়েকদিন পর প্রান্তর মা হঠাৎ প্রান্তকে বললো,“ আমেরিকা থেকে তোর নানু ভাই আসবে আগামিকাল। আমরা তোর নানু বাড়িতে যাবো। অনেকদিন পরে তোর নানু ভাই আসছেন। অনেক মজা হবে, অনেক দামি গিফটও পাবি ওখানে গেলে”। নানু ভাই আসছে শুনে প্রান্ত অনেক খুশি হলো এবং পরদিন মায়ের সাথে নানু বাড়ি চলে গেলো। এরপর নানু ভাইয়ের বাসায় সবার সাথে প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গেলো ওদের। কিন্তু কদম গাছটির কথা ভোলেনি। গাছটি কেমন আছে তা নিয়ে সে চিন্তা করে । “এতদিনে গাছটি বৃষ্টির পানি পেয়ে নিশ্বয়ই  আরও বড় হয়ে গেছে”, প্রান্ত ভাবতে থাকে। তাই মাকে সে বলল,“ মা চলো এবার আমরা বাসায় ফিরে যাই”। ওর কথা শুনে মা রাজি হলো এবং শনিবার সকালে খাওয়া দাওয়া শেষে নানু বাড়ি থেকে রেব হলো বাসার উদ্দেশ্যে। এক ঘন্টার মধ্যেই তারা বাসায় পৌঁছে গেলো। বাসায় ফিরে ব্যাগ রেখেই প্রান্ত দৌঁড়ে গেলো ছাদে কদম গাছটি দেখতে। ছাদে পা রেখেই সে দেখলো টবের কদম চারাটি কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টিতে ভিজেছে। এখনো চারাটির পাতা দিয়ে দু-এক ফোঁটা পানি ঝরে পড়ছে। চারা গাছটি এই কদিনে বেশ সতেজ ও লকলকে হয়ে উঠেছে দেখে প্রান্ত খুব খুশি হলো।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS