ভিডিও

তিন বন্ধুর দোষগুণ

মোখতারুল ইসলাম মিলন

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৪, ০৫:২৭ বিকাল
আপডেট: আগস্ট ১৭, ২০২৪, ০৫:২৭ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

শাফি, রাফি ও বকর যেন একই গাছের তিনটি ডাল। এদের চলাফেরা, পোশাক-আশাক দেখে কেউ বলবে না যে, এরা আপন ভাই না। এতোটাই ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব এদের মাঝে। একই ক্লাশে পড়ে তিনজন। একই গ্রামে বাড়ি ফকিরপুর গ্রাম। তিনজনের বাবা আলাদা আলাদা পেশায় নিয়োজিত। শাফির বাবা একজন কৃষক, রাফির বাবা ব্যবসায়ী আর বকরের বাবা হলেন সরকারি কৃষি কর্মকর্তা। 
তিনজনের বাবা আলাদা হলেই এদের তিনজনের মিল-মোহাব্বত দেখে বাবা মায়ের কাছে তারা সোনার টুকরো। তিনজনকে ভাইয়ের মতো ভেবে ভালোবাসে এদের বাবা-মা। 

তিনজন একই পোশাক কিনে, একই সাথে খেলাধুলা করে এমনকি একই দলে খেলে তারা। তাদের তিনজনের মধ্যে কেউ অন্য দলেও খেলবে না। বয়সটা তাদের কিশোর বয়স। দৌড় ঝাঁপ, খেলাধুলা, নদীতে গোসল করে সাঁতার কাটা, পাখি শিকার করা, বেপারির বাগান থেকে বিনা অনুমতিতে পেয়ারা খাওয়া এমন নানা কর্ম-অকর্ম এদের নিত্যদিনের তালিকায়। স্কুলে একই বেঞ্চে বসা, স্কুলে যেন এরা মাদবর। দুষ্টুমির দিক থেকে এরা তিনজনই খুব দুর্দান্ত। দুষ্টুমি করলেও এদের মাঝে কয়েকটি ভালো গুণ রয়েছে। এরা প্রথমে কাউকে আঘাত করে না, কেউ আগে আঘাত করলে একসাথে তিনজন মিলে তাকে প্রতিহত করে, প্রতিশোধ নেয়।

স্কুলে একদিন রাফির সাথে কোনক্রমে একজনের সাথে তর্ক-বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এক দু'কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। পরবর্তীতে যা হয়, তিন বন্ধু মিলে ওই ছেলেকে ইচ্ছেমত জব্দ করে। সে ছেলে স্যারের কাছে বিচার দিলে স্যার তিন বন্ধুকে ডেকে পাঠায়। জিজ্ঞেস করে কে মেরেছে একে? তিনজনই বলে আমি মেরেছি। স্যার, তিনজনকেই শাস্তি দেয়। 

তিন বন্ধুর এমন অপকর্ম আরো কয়েকটি রয়েছে। বেপারির বাগান থেকে পেয়ারা চুরি করে খাওয়া একটি চুরির মতো বড় অপরাধ। কারো গাছে পাকা ফল চোখে পড়লে তা উধাও করে দেওয়া, কাঁঠালের মৌসুমে তো কথাই নেই।

ভালো গুণগুলোর মধ্যে রয়েছে দুর্বল লোকদের সাহায্য করা। বাবা মায়ের থেকে যে টাকা নেয় যদি কখনো ফকির কিংবা অসহায় ক্ষুধার্ত মানুষকে নজরে পড়ে তাদের দিয়ে দেয় সেই টাকা। দুষ্টু হলেও বড় মনের অধিকারী। এক মৌসুমে শাফির বাবার জমিতে তিন বন্ধু মিলে ধান কেটে ঘরে তুলে দেয়। শাফির বাবার খরচটা বেঁচে যায়। দিনমজুর কাজে নিলে অনেক টাকাই দিতে হতো তা তারা তিন বন্ধু পুষিয়ে দেয়। ভালো মন্দ সব মিলিয়ে অনেক গুণে
তারা তিনজনই এক।

এভাবেই তাদের দিন, মাস এমনকি বছর কেটে যায়। কিন্তু তাদের বন্ধুত্বের কখনো ফাটল ধরে না। সময় ধরতে ধরতে স্কুল জীবনের শেষ বছরে উঠে এসেছে তারা দশম শ্রেণিতে। সামনে এসএসসি পরীক্ষা। সবার মেধা খুব পার্থক্য নয়। পড়াশোনায় ভালো রেজাল্ট করে তারা প্রতি ক্লাশেই তাদের রোল নং ১ থেকে ৬ মধ্যে ছিলো। তিনজনের মধ্যে একটু গভীর ভাবনার অধিকারী ছিলো রাফি। স্কুল জীবন শেষের দিকে, বয়স ও অনেক ছোট নয়। তাই ভাবতে থাকে তাদের নিত্যদিনের কর্মকাণ্ড। ভাবতে ভাবতে এবার শাফি ও বকর কে বলে: বন্ধু আজ সন্ধার পর আমরা একটা আলোচনায় বসবো। কিছু আলোচনা হবে তারপর পার্টি হবে। কোথায় আসবো বলে দে? আমাদের ব্রিজের পাড়ে চলে আসবি। ঠিক আছে, আসবো। 

সন্ধার পর তিন বন্ধু একসাথে ব্রীজে চলে আসলো। কি বলবি রাফি বল? এবার রাফি বলছে: বন্ধু তোরা শোন। দেখ আমাদের স্কুল জীবন শেষের দিকে, বয়স আমাদের কম হয়নি, আমরা মোটামুটি এখন বুঝবান হয়ে উঠেছি। আমরা খারাপ কাজ অনেক করেছি। এখন কথা হলো আজ তিনজন একটা খেলা খেলবো। হুম বল কী খেলা? 
রাফি বলছে: আমার মধ্যে কী কী দোষ আছে আমাকে তোরা দু'জন বলে দিবি। আবার আমি আর শাফি মিলে বকরের দোষ বলবো। আবার আমি আর বকর মিলে শাফির দোষ বলবো। অর্থাৎ দুজন মিলে একজনের দোষ বলে দেওয়া। 

এবার বকর আর শাফি মিলে রাফির দোষ বলছে: বন্ধু, তোর একটা বদ অভ্যাস আছে তুই হাতের নখ দাঁতে কামড়িয়ে কাটোছ, এটা মারাত্মক ক্ষতিকর স্বভাব। এবার এবার বকর আর রাফি মিলে শাফির দোষ বলে দিবে। বকর বলছে: বন্ধু শাফি, তোর খারাপ অভ্যাস হলো গায়ের কাপড় ময়লা হলেও ধুয়ে দিতে চাস না। সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় থাকা আমাদের কর্তব্য এবং স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এবার শাফি আর রাফি মিলে বকরের দোষ বলার পালা। রাফি বলছে: বন্ধু তোর খারাপ অভ্যাস নেই কিন্তু একটা বাজে অভ্যাস আছে, তা হলো অল্প কথায় রেগে যাস। বদ মেজাজ তোর। এটা সংযত করতে হবে তোর। বদ মেজাজ মানুষের মহা বিপদে ফেলে দেয়, তাই এই বদ মেজাজ প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং বদলাতে হবে নিজেকে।

এভাবেই তিন বন্ধু তাদের দোষগুলো মাথা পেতে স্বীকার করে তা থেকে ফিরে আসে। এবং পূর্বের যত খারাপ কাজ, অন্যায় কাজ বিনা অনুমতিতে কারো জিনিস খাওয়া, নেওয়া এগুলো ত্যাগ করে ফিরে আসে। এবং সবাই ভালো কাজ করতে শুরু করে। এভাবেই তাদের বন্ধুত্ব বহাল থাকে। 

 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS