ইসরায়েলের টানা ধ্বংসাত্মক হামলায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় রক্তের বন্যা বয়েই চলেছে। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল শনিবার জানিয়েছে, উপত্যকাটিতে ইসরায়েলের রাতভর হামলায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
এদিকে যুদ্ধবিরতি আলোচনার জট খুলতে গতকাল ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে আলোচকরা জড়ো হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল স্থানীয় সময় সকালে জানায়, রাতভর হামলায় অন্ততপক্ষে ১০৩ জন নিহত হয়েছেন।
আরো অনেকে ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলি বাহিনীর গত শুক্রবারের বিমান হামলায় ফিলিস্তিনের সুপরিচিত কৌতুক অভিনেতা মাহমুদ জাওয়াইতারের গাজার বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ঘটনায় অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছে। গাজা নিয়ন্ত্রণকারী সংগঠন হামাস জানায়, দেইর আল বালাহ, খান ইউনিস এবং রাফাহসহ অন্যান্য স্থানে সাধারণ মানুষের বাড়িঘরে ৭০ দফা বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
গাজার উত্তরাঞ্চলীয় জয়তুন জেলাতে লড়াই চলার খবর জানায় হামাস। এ ছাড়া রাফাহ একটি সড়কে গতকাল ইসরায়েলের বিমান হামলায় অন্তত সাতজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এদিকে চার মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েল আগ্রাসী হামলা চালাচ্ছে। এই অবস্থায় গাজার বিপুলসংখ্যক মানুষের চাহিদার তুলনায় ছিটমহলটিতে খুবই কম পরিমাণে ত্রাণ সরবরাহ হচ্ছে।
তীব্র খাদ্যাভাব গাজার মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রামকে ভয়াবহ কঠিন করে তুলেছে। গাজার জাবালিয়া আশ্রয়শিবিরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘কোনো পানি, খাবার কিছুই নেই। ক্ষুধায় কাহিল হয়ে পড়ছি আমরা।’ আরেক বাসিন্দা জানান, ক্ষুধায় তাঁরা মরে যাচ্ছেন। পরিবারের অভুক্ত শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিতে বাধ্য হয়ে নিজের দুটি ঘোড়া জবাই করেছেন তিনি।
জাতিসংঘের সংগঠন ওসিএইচএ গাজায় দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি বাড়ছে বলে সাবধান করেছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউএনডাব্লিওআরএ বলেছে, গাজাবাসীরা যখন চরম বিপদে রয়েছে, তখন বিশ্ব শুধু তাকিয়ে দেখছে।
প্যারিসে বসছে বৈঠক
মোসাদ গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ডেভিড বারনিয়ার নেতৃত্বে ইসরায়েলি প্রতিনিধিদের একটি দল গতকাল শনিবার প্যারিসে অবস্থান করে। হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে একটি চুক্তি করার প্রচেষ্টা চালাতে তাঁরা প্যারিসে রয়েছেন।
বারনিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের শিন বেট নিরাপত্তা সংস্থার প্রধান রোনেন বারও রয়েছেন বলে ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে। প্যারিসে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা তাঁদের। গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে এবং ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে হামাসের হাত থেকে জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে আগের আলোচনাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর এবং কাতার গভীরভাবে যুক্ত ছিল।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।