স্টিলের দরজার কাছে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন দুইজন শিক্ষক। শিশুদের অভ্যর্থনা জানাতে। কংক্রিটের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে তাদের দেখে মা-মেয়ে খুশিতে হাততালি দিয়ে ওঠেন। হাতে হাত রেখে আরেকটি ভারি দরজা পেরিয়ে শিশুরা বাঙ্কারে প্রবেশ করে। আজ তাদের স্কুলের প্রথম দিন।
এবং এই স্কুলটি মাটি থেকে ছয় মিটার গভীরে। এটিই ইউক্রেইনের প্রথম বাঙ্কার স্কুল, যেখানে এ সপ্তাহ থেকে শতাধিক শিশু তাদের শিক্ষাগ্রহণ শুরু করবে।
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা থেকে শিশুদের রক্ষা করতেই ভূগর্ভস্থ এই স্কুলটি নির্মাণ করা হয়েছে।
এই প্রাইমারি স্কুলটি নির্মাণ করা হয়েছে ইউক্রেইনের দ্বিতীয় বৃহৎ নগরী খারকিভে। রাশিয়া সীমান্তের কাছে হওয়ায় যেখানে তিন বছরে পড়া ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রায় পুরোটা সময় জুড়েই নানা ধাপে হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। প্রথম দিনে স্কুলে উপস্থিত হয়েছে ১৫৫ জন শিক্ষার্থী।
ফুটপাতের উপর একটি ছোট্ট সাদা রঙের বাক্সের ভেতর ঢুকে একটি দরজা দিয়ে তারা সিঁড়ির কাছে পৌঁছায়। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামার পরই করিডর ধরে শ্রেণীকক্ষের সারি। শ্রেণীকক্ষে কোনো জানালা নেই। তবে পুরো কক্ষজুড়ে উজ্জ্বল আলো এবং হলওয়েটি সাদা ও হলদে সবুজ রঙ করা।
গত কয়েক সপ্তাহে খারকিভে লড়াই আরও তীব্র হয়েছে। রাশিয়ার আকাশ হামলাও কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।
যুদ্ধের এই সময়ে খারকিভের বেশিরভাগ শিশু বাড়িতে কম্পিউটারে অনলাইনে লেখাপড়া করেছে। ৯ বছরের মাশা আর তার ৬ বছরের ভাই ওলেকসি তাই একটি সত্যিকারের স্কুলে যেতে, অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে শ্রেণীকক্ষে বসে একজন সত্যিকারের শিক্ষকের কাছে শিখতে যেনো লোভাতুর হয়ে আছে।
তাদের মা মারিনা প্রিখোদকো বলেন, “আমার মেয়ে তৃতীয় গ্রেডে, স্কুলে আসতে, নানা অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে নানা পোশাক পরতে এবং বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে সে আর একটুও অপেক্ষা করতে রাজি না। সে এ সব কিছু খুব মিস করেছে।
“আমার ছেলে প্রথম গ্রেডে। তার জন্য এটা যেনো উৎসবের দিন। এবার আর অনলাইনে নয় বরং সে সত্যি সত্যি তার সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবে।”
যুদ্ধের তীব্রতা বাড়া প্রসঙ্গে এই মা বলেন, “হ্যাঁ, এটা খুবই ভয়ের। তবে যা কিছুই ঘটুক, জীবন চলমান। জীবন থেমে থাকে না। তাই আমাদের চেষ্টা করতে হবে এখন এর মধ্যেই বেঁচে থাকতে, প্রতিদিন।”
খারকিভের নতুন এই স্কুলটিতে বর্তমানে ৩০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। নগরীর মেয়র শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বাড়াতে চান এবং দুই শিফ্টের প্রতিটিতে ৪৫০ শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর পরিকল্পনা করেছেন।
সোমবার প্রথম স্কুল খোলার দিন অনেক শিক্ষার্থী ইউক্রেইনের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে স্কুলে এসেছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আইহোর ভজনি বলেন, “আগের স্কুলে আর এই স্কুলের মধ্যে দিন রাতের মত পার্থক্য।
“আমাদের স্কুলে বোম শেল্টার ছিল না। বেজমেন্ট ছিল, ভূগর্ভস্থ জায়গা ছিল। কিন্তু সেগুলোর কোনটাই শিক্ষাপ্রদান কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত ছিল না। এখানে মানসম্মতভাবে সব কিছু নকশা করা হয়েছে, সব কিছু আধুনিক।”
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।