আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ত্রাণ সরবরাহের জন্য গাজায় যে অস্থায়ী ভাসমান সমুদ্রবন্দর তৈরি করেছিল মার্কিন সেনাবাহিনী, সাগরের ঢেউ-জোর বাতাসে তা ভেঙে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর পেন্টানগনের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
পেন্টাগনের মুখপাত্র ও ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সাবরিনা সিং বিবিসিকে বলেছেন, ইসরায়েলের নৌবাহিনীর সহায়তায় আগামী ২ দিনের মধ্যে অস্থায়ী বন্দরের ভাসমান অংশগুলো সরানো হবে; তারপর সেগুলো মেরামত করে ফের স্থাপন করা হবে বন্দর। এতে এক সপ্তাহ বা আরও বেশি সময় লাগতে পারে।
‘আবহাওয়ার ওপর তো আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সাগর শান্ত এবং আবহাওয়া অনুকূল থাকে, তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যেই বন্দরের নির্মাণকাজ শেষ হবে; কিন্তু আবহাওয়া যদি প্রতিকূল থাকে, সেক্ষেত্রে কাজ শেষ হতে আরও সময় লাগবে,’ বিবিসিকে বলেন সাবরিনা সিং।গাজার ভৌগলিক আয়তন ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার। এ উপত্যকার উত্তর ও পশ্চিমে ইসরায়েল সীমান্ত, দক্ষিণে মিসর সীমান্ত এবং পূর্বদিকে ভূমধ্যসাগর অবস্থিত। ২০০৫ সালে হামাস ক্ষমতা দখলের পর থেকে উপত্যকার উত্তর ও পশ্চিম সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল।
তারপর থেকে এতদিন পর্যন্ত উপত্যকায় খাদ্য-ত্রাণ ও মানবিক সহায়তার সরবরাহ দক্ষিণের মিসরীয় সীমান্ত রাফা ক্রসিং দিয়ে প্রবেশ করতো; কিন্তু ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর সেই সীমান্তপথটিও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফলে গাজায় ত্রাণ-সহায়তার সরবরাহ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গত ৭ মাসেরও বেশি সময় ধরে।একদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর টানা অভিযান, অন্যদিকে ত্রাণের সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় ব্যাপক মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েন গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা। এই অবস্থায় গত ৮ মার্চ গাজায় পূর্বদিকে ভূমধ্যসগারের তীরে অস্থায়ী সমুদ্রবন্দর তৈরির ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ঘোষণায় তিনি বলেন, প্রস্তাবিত এই বন্দরটি শুধুমাত্র গাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ পাঠানোর জন্য ব্যবহার করা হবে।
বাইডেনের এই ঘোষণার দেড় মাস পর, ২৬ এপ্রিল থেকে গাজার সমুদ্রতীরে অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে তার ওপর ভাসমান বন্দর নির্মাণ শুরু করে মার্কিন নৌবাহিনী। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বন্দরের নির্মাণকাজ শেষ হয়। তারপর গত ১৭ মে সেই বন্দরে নোঙ্গর করে প্রথম ত্রাণবাহী মার্কিন জাহাজ।৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের অস্থায়ী সেই বাঁধটি তৈরি করা হয়েছে ইস্পাতের টুকরো জোড়া দিয়ে। সাগরের ঢেউয়ের কারণে ইস্পাতের বেশ কয়েকটি জোড়া আলগা হয়ে যাওয়ায় ঘটেছে এই বিপত্তি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক ডেপুটি অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি এবং গাজায় অস্থায়ী বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠাণ ফগবো’র অন্যতম অংশীদার মাইক মুলরয় এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেন, ‘গাজায় বন্দর ফের নির্মাণের ক্ষেত্রে আবহাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ, এছাড়া অন্যান্য চ্যালেঞ্জও রয়েছে; কিন্তু এসব বাধা-চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করা সম্ভব এবং এই মিশন চালিয়ে যাওয়ার জন্যই এগুলো আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। কারণ, ত্রাণের অভাবে গাজার ফিলিস্তিনিরা এখন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে।’যুক্তরাষ্ট্রের এই অস্থায়ী বন্দর ব্যবহার করে গাজায় ত্রাণ পাঠাচ্ছে জাতিসংঘও। বিশ্বের বৃহত্তম এই আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থার খাদ্য সহায়তা বিষয়ক কর্মসূচি ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের (ডব্লিউএফপি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বন্দরটির মাধ্যমে ৯০০ টন খাদ্য সহায়তা পাঠিয়েছে ডব্লিউএফপি। বন্দরটি অপারেশনের উপযোগী হলে ফের ত্রাণ পাঠানো শুরু হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।