ভিডিও

ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে ইউটিউবে ভিডিও প্রকাশ, ক্ষুব্ধ দক্ষিণ কোরিয়া

প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৪, ০৬:১০ বিকাল
আপডেট: জুন ১৫, ২০২৪, ০৬:১০ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০০৪ সালের আলোচিত এক গণধর্ষণ মামলা নিয়ে সম্প্রতি ইউটিউবে ভিডিও প্রকাশ করেন এক ইউটিউবার। এর সমালোচনা করেছেন ধর্ষণের শিকার নারীর পরিবার। তাদের আশঙ্কা, এর ফলে ভুক্তভোগীর ট্রমা আরো বাড়তে পারে। অনেক ইউটিউব ব্যবহারকারীও সমালোচনা করেছেন।

সিরিজ আকারে আপলোড করা ভিডিওগুলোতে ধর্ষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টসম্ভাব্য দায়ী ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করে তাদের লজ্জা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানের কাছের শহর মিরিয়াংয়ে ঘটনাটি ঘটেছিল। ১৩ থেকে ১৬ বছর বয়সি তিন মেয়েকে ১১ মাস ধরে যৌন নিপীড়ন করা হয়। এর সঙ্গে ৪৪ জন ছেলে জড়িত ছিল বলে ধারনা করা হয়  ভিডিও প্রকাশের পর বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেউ বলছেন, এর মাধ্যমে এক ব্যক্তি বিচার করার চেষ্টা করছেন, যেটার কোনো আইনি ভিত্তি নেই। আরেক পক্ষ বলছেন, এর মাধ্যমে যথাযথ শাস্তি দেওয়া যাচ্ছে। কারণ, সম্ভাব্য দায়ী ৪৪ জনের কাউকেই যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত করা হয়নি।


চুংনাম ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও নীতিশাস্ত্রের সহযোগী অধ্যাপক হায়োবিন লি বলেন, ‘সাধারণ প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক হয়েছে।’ ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, ‘যদি ২০ বছর আগে বিচারবিভাগ মামলাটি ঠিকভাবে পরিচালনা করতো, তাহলে হয়তো এখনকার এই ঘটনা ঘটতো না।’

সৌল উইমেনস ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ডেভিড টিজার্ড বলেন, ‘আজ অনেকেই মনে করেন, ন্যায়বিচার করা উচিত৷ যারা অন্যের প্রতি অন্যায় করে তাদের নিজেদেরও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া উচিত।’

কী ঘটেছিল?

১৬ বছরের এক মেয়ে এক ছেলের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাকে আরো কয়েকজন ছেলে মিলে নিপীড়ন করে। ঐ ঘটনার ভিডিও করা হয়, যেন পরবর্তীতে ঐ মেয়েকে ব্ল্যাকমেল করা যায়।


ভিডিওটি অনলাইনে প্রকাশ করা হতে পারে এই ভয়ে ওই মেয়ে আরো ১০ বার সেখানে গিয়েছিল। শুধু নিজে নয়, ওই ছেলেদের পরামর্শে তার ১৩ বছরের ছোট বোন ও ১৬ বছরের কাজিনকেও নিয়ে গিয়েছিল।
এর মধ্যে ১৬ বছর বয়সী দুইজন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ১৩ বছরের মেয়েটিকেও ধর্ষণ করা হয়েছে কি না তা কখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অভিযুক্ত ছেলেরা ঐ মেয়েদের কাছ থেকে টাকাও নিয়েছিল। এই ঘটনায় অন্তত ৪৪ জন শিক্ষার্থীর সংখ্যাটি ১২০ জনও হতে পারে।

অবশেষে যখন ধর্ষণের বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয় তখন পুলিশ প্রথমে তিন ছেলেকে গ্রেপ্তার করে। পরে ভুক্তভোগীরা প্রতিবাদ জানালে পুলিশ আরো নয়জনকে গ্রেপ্তার করে এবং ২৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।

এই মামলায় অন্যতম আশ্চর্যের বিষয় ছিল, অভিযুক্তদের পরিবার ও স্থানীয় অনেকে এই ঘটনার জন্য ভুক্তভোগীদের দায়ী করেছিল। তাদের অভিযোগ, ওই মেয়েরা ছেলেদের যৌন কার্যকলাপে প্রলুব্ধ করেছিল। আরো আশ্চর্যের বিষয় ছিল, ভুক্তভোগীরা জিজ্ঞাসাবাদের সময় নারী পুলিশ সদস্য চাইলেও সেটা দেয়া হয়নি। তদন্তকারী পুরুষ পুলিশেরাও এমন মনোভাব দেখিয়েছিল যে, ওই ভুক্তভোগীরাই ছেলেদের প্রলুব্ধ করেছিল। এ ছাড়া তদন্তের তথ্য ফাঁস হওয়ার কারণে মেয়েদের পরিচয় প্রকাশ হয়ে গিয়েছিল।

পুলিশের এমন আচরণের কারণে পুলিশ ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়েছিল। দুই ভুক্তভোগী মেয়ে ও তাদের পরিবার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৭০ মিলিয়ন কোরীয় মুদ্রা (আজকের হিসেবে ৬৬ হাজার ডলার) পেয়েছিল।

তবে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছিল। একজন ভুক্তভোগীকে মানসিক চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। আর প্রথম ভুক্তভোগীর কোনো খোঁজ নেই বলে দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যম জানিয়েছে। সেই ভুক্তভোগীর পরিবার জানিয়েছে, ইউটিউবে ভিডিওগুলো প্রকাশের বিষয়টি তাদের আগে জানানো হয়নি। তারা চান, ইউটিউব থেকে ভিডিওগুলো মুছে ফেলা হোক।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS