ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী রবিবার বলেছে, তারা আরো মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ দিতে দক্ষিণ গাজার একটি রাস্তা বরাবর ‘সামরিক কার্যকলাপের কৌশলগত বিরতি’ রাখবে।
এই বিরতি শুধু একটি রুটের জন্য কার্যকর হবে, যা মূল কেরেম শালোম ক্রসিং থেকে উত্তর দিকে গেছে। ক্রসিংটি গাজা ও ইসরায়েলের মধ্যে অবস্থিত। বিরতি শনিবার শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এটি চলবে৷
গাজায় মানবিক সংকট যাতে আরো খারাপ না হয় ইসরায়েল সেজন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্রদের ক্রমাগত চাপের মুখে রয়েছে। ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, রবিবারের এই ঘোষণা ‘জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে এ সম্পর্কিত অতিরিক্ত আলোচনা’ অনুসরণ করে দেওয়া হয়েছে।
মানবিক বিরতির পথটি গাজার দক্ষিণে অবস্থিত কেরাম শালোম ক্রসিং থেকে প্রধান মহাসড়ক সালাহ আল-দিন রোড পর্যন্ত এবং তারপর উত্তর দিকে খান ইউনিস শহরের কাছে ইউরোপিয়ান হাসপাতালের দিকে বিস্তৃত।
এক্সে এক পোস্টে আইডিএফ স্পষ্ট করে বলেছে, গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে কোনো যুদ্ধবিরতি নেই এবং রাফাতে যুদ্ধ চলবে।
এক মাসেরও বেশি সময় আগে ইসরায়েলি সেনারা রাফা শহরে প্রবেশ করে। তারা মিসরের সঙ্গে থাকা রাফা ক্রসিংয়ের গাজার অংশ নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং অনেক মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এর পর থেকে লাখ লাখ মানুষ রাফা থেকে পালিয়ে গেছে। ক্রসিংটি তখন থেকে বন্ধ রয়েছে, যা সহায়তা প্রবেশের প্রধান পয়েন্ট।
ইসরায়েল বলেছে, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে তাদের ‘শেষ প্রধান শক্ত ঘাঁটি’ থেকে বিতাড়িত করার জন্য রাফাতে তাদের অভিযান জরুরি।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গাজায় একটি ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করেছে এবং আরো সহায়তার জন্য বারবার আহ্বান জানিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস বুধবার বলেছেন, গাজার বাসিন্দাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ‘বিপর্যয়কর ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির’ সম্মুখীন।
গাজায় প্রবেশকারী ত্রাণবাহী ট্রাকের সংখ্যা সংস্থাগুলোর দেওয়া চাহিদার চেয়েও কম। জাতিসংঘের মানবিক কার্যালয় ওসিএইচএ জানিয়েছে, মে মাসে জ্বালানি ব্যতীত গাজায় মানবিক সহায়তা সরবরাহকারী ট্রাকের দৈনিক গড় সংখ্যা ছিল ছিল ৯৭টি।
এপ্রিলে এই সংখ্যাটি ছিল ১৬৯ এবং মার্চ মাসে ছিল ১৩৯। ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে প্রতিদিন জ্বালানিসহ প্রায় ৫০০ ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করত।
সংস্থাটি আরো জানিয়েছে, ৭ মে থেকে কেরেম শালোম ক্রসিংয়ের মাধ্যমে ব্যক্তিগত খাত থেকে সহায়তার আগমন সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে পারেনি।
ইসরায়েলি সেনা নিহত
এদিকে আইডিএফ জানিয়েছে, রাফাতে শনিবার একটি বিস্ফোরণে তাদের আট সেনা নিহত হয়েছে। তাদের মতে, এটি জানুয়ারি থেকে যুদ্ধে সেনাবাহিনীর জন্য সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা। রাফা শহরের তাল আল-সুলতান এলাকায় একটি অভিযানের সময় ঘটনাটি ঘটেছে।
অন্যদিকে হামাসের সশস্ত্র শাখা বলেছে, তারা একটি সাঁজোয়া যানের দিকে রকেট নিক্ষেপ করেছিল।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যুদ্ধে তিনি হামাসের সরকারি ও সামরিক সক্ষমতা দূর করবেন, সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনবেন, গাজা যাতে ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে না দাঁড়ায় তা নিশ্চিত করবেন এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ইসরায়েলের বাসিন্দাদের নিরাপদে ফেরত পাঠাবেন।
ত্রাণ সংস্থাগুলো বারবার গাজার আশপাশে সহায়তা বিতরণে অসুবিধার কথা জানিয়েছে। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ শুক্রবার জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় সব নথি থাকা সত্ত্বেও ত্রাণবাহী একটি গাড়িবহরকে উত্তর গাজায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার সেই বহরের সঙ্গে ভ্রমণ করছিলেন। তিনি বলেছেন, এটি একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে কাগজপত্র সঠিকভাবে পূরণ করা হয়নি জানিয়ে আইডিএফ এল্ডারকে পরিস্থিতির একটি ‘আংশিক চিত্র’ উপস্থাপন করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর যুদ্ধ শুরু হয়। সেই হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যদিকে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ৩৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং লাখো মানুষ আহত ও বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তি নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র শনিবার ঘোষণা করেছে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট শিগগিরই আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন সফর করবেন। এর আগে এই সপ্তাহের শুরুতে হামাস মার্কিন সমর্থিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা বন্ধ করে দেয় বেশ কয়েকটি পয়েন্টে পাল্টা প্রস্তাব দেয়। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ইসরায়েল প্রকাশ্যে এতে সমর্থন দেয়নি।
সূত্র : বিবিসি
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।