আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্বের প্রায় এক চতুর্থাংশ কিশোরী যারা সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে, তারা সঙ্গীর শারীরিক অথবা যৌন সহিংসতা সহ্য করেছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, এই ধরনের সহিংসতা কিশোরীদের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে। গবেষণায় কিশোরীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ঠেকাতে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার ডব্লিউএইচওর এই গবেষণা প্রতিবেদন বিশ্বখ্যাত মেডিক্যাল সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশ করা হয়েছে। ডব্লিউএইচওর এই গবেষণা প্রতিবেদন বিশ্বের ১৫৪টি দেশ ও অঞ্চলের ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী হাজার হাজার কিশোরীর ওপর জরিপের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, জরিপে অংশ নেওয়া কিশোরীদের ২৪ শতাংশই অন্তত একবার সঙ্গীর সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার সময় সহিংসতার শিকার হয়েছে। গত বছর এই সহিংসতার হার ছিল ১৬ শতাংশ। এক বছরে তা বেড়ে ২৪ শতাংশে পৌঁছেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনের প্রধান লেখক ডা. লিনম্যারি সার্ডিনহা বলেন, কিশোরীরা সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কে ফাটলের কারণে নিপীড়িত হচ্ছে এবং কারও সমর্থন পাচ্ছে না; এমন উদ্বেগের জায়গা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত অবাক হয়েছি যে, কিশোরী মেয়েদের বিশাল একটি অংশ তাদের ২০তম জন্মদিনের আগেই সহিংসতার শিকার হচ্ছে। সার্ডিনহা বলেন, আমাদের যেখানে থাকার কথা ছিল, আমরা তার তুলনায় পিছিয়ে আছি।
২০০০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে পরিচালিত সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে এই গবেষণা কাজটি সম্পন্ন করা হয়েছে। লিনম্যারি সার্ডিনহা বলেন, তখন থেকেই তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং এখনও আমরা সেসব যাচাই-বাছাই করে দেখছি। এতে কিশোরীদের সহিংসতার শিকার হওয়ার হারে সামান্য পতন হয়েছে।
সমীক্ষায় গণনা করা সহিংসতার ঘটনাগুলোর মধ্যে লাথি মারা অথবা মারধরের পাশাপাশি ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টার মতো অযাচিত যৌনতায় লিপ্ত হতে বাধ্য করার মতো বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দেশ ও অঞ্চলের ভিত্তিতে ভাগ করা তথ্যে দেখা যায়, অঞ্চল ভেদে সহিংসতা ও নারী অধিকারের মতো বিষয়গুলোও এতে ভূমিকা রেখেছে। যেখানে মেয়ে ও নারীদের শিক্ষার সুযোগ সীমিত এবং অসম উত্তরাধিকার আইন রয়েছে, সেখানে সহিংসতার উচ্চ মাত্রা দেখা গেছে।
গবেষণায় দেখা যায়, কিশোরীদের সহিংসতার শিকার হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি ওশেনিয়া অঞ্চলে। এরপরই দ্বিতীয় স্থানে আছে আফ্রিকা। এই মহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে পাপুয়া নিউগিনিতে ৪৯ শতাংশ এবং গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে ৪২ শতাংশ কিশোরী সঙ্গীর সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্কের সময় সহিংসতার শিকার হয়েছে। তবে এই হার সর্বনিম্ন ছিল ইউরোপে; সেখানে মাত্র ১০ শতাংশ কিশোরী তাদের সঙ্গীর কাছে সহিংসতার শিকার হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং গবেষণা বিভাগের পরিচালক ডা. প্যাসকেল অ্যালোটি বলেন, শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই বয়সে এমন সহিংসতা তীব্র ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে। এটাকে জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে আরও গুরুত্ব সহকারে নেওয়া দরকার।
সূত্র: রয়টার্স।
এসএস
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।