এই সময়ে ফাতেমা-কনা-সারিকারা পরিবারের সঙ্গে ব্যস্ত সময় কাটাতেন। ঈদুল আজহাতে পশু কোরবানি দিয়ে সময় কেটে যেতো। তবে এবারই প্রথম ব্যতিক্রম হচ্ছে। বাংলাদেশ নারী জুনিয়র হকি দলটি সিঙ্গাপুরে খেলা চলায় দেশে থাকতে পারেনি। তাই ঈদও পালন করা হচ্ছে পরিবার তথা বাবা-মাকে ছাড়া। প্রথমবার বিদেশের মাটিতে পরিবার ছাড়া ঈদ পালন করতে তাদের খারাপ লাগারই কথা। তবে পাশাপাশি দেশের জন্য খেলতে এসে তা পুরোপুরি আমলেও নিচ্ছেন না। সবারই লক্ষ্য– এই আত্মত্যাগ দেশের জন্য। জুনিয়র এশিয়া কাপ হকিতে ভালো করতে পারলে তা হবে বড় অর্জন।’
প্রথমবারের মতো সিঙ্গাপুরে এশিয়ান হকি ফেডারেশন আয়োজিত জুনিয়র এশিয়া কাপ খেলছে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-২১ বছর বয়সী মেয়েরা। তাদের সবারই বলতে গেলে প্রথম দেশের বাইরে খেলার অভিজ্ঞতা হচ্ছে। এরই মধ্যে দুটি ম্যাচে জয়ও এসেছে। বাকি সব ম্যাচ জিতে শীর্ষস্থানে পৌঁছানোই মূল লক্ষ্য।
চট্টগ্রামের খুলশির মেয়ে ফাতেমাতুজ্জোহরা। বিকেএসপিতে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ছেন। ২০২০ সালে প্রথম ট্রায়াল দিয়ে এসে হকিতেই ভবিষ্যৎ খুঁজে নেন। পরিবারে বাবা ও মা ছাড়াও আছেন এক ছোট ভাই। ঈদের দিনটিতে তাদের কথা বেশ মনে পড়ছে এই মিডফিল্ডারের।
ঈদের আনন্দ সবসময় বাবা-মার সঙ্গে থেকে ভাগাভাগি করে নেওয়া সম্ভব নয়। খেলাতে এসে কিছুটা বুঝেছি। চাইছি এখানে ভালো ফল করে ঈদের আনন্দটা অন্যভাবে উপভোগ করতে। এখানে আমরা সবাই এক হয়ে আছি। দলের সবাই ইতিবাচক ফল করতে উন্মুখ।’
বাবা-মাসহ পরিবারের সবাই বুঝতে পারছেন তাদের মেয়ে দেশের জন্য খেলছেন। ফাতেমা বাস্তবতা বুঝেই বলেছেন, ‘আমার দলের কেউই চায় না বাবা-মাকে ছাড়া ঈদ করতে। তাদের ছাড়া ঈদ করতে খারাপ লাগছে। সবারই ইচ্ছা ছিল পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে। আনন্দ উদযাপন করতে। কিন্তু এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। বাবা-মাসহ পরিবারের সবাই তা মেনেও নিয়েছে। সবাই চাইছে খেলাতে মনোযোগ দেই। দেশের জন্যে খেলতে এসেছি। কিছু একটা করে দেখাতে হবে। যেন সব সময় স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারি। খেলাতে রেজাল্ট ভালো করতে পারলে সবাই মনে রাখবে। তখন ঈদের আনন্দটা অন্যরকম মনে হবে।’
নারী হকি দলে চারজন ছাড়া বাকি সবাই বিকেএসপির খেলোয়াড়। চার বছর ধরে একই সঙ্গে খেলছেন। তাই সবার মধ্যে সমন্বয়টা বেশ ভালো। ফাতেমা বলছিলেন, ‘বিকেএসপিতে চার বছর ধরে আছি। সবাই একটা পরিবার হয়ে আছে। বন্ডিং ভালো। দেশের বাইরে প্রথম এসেছি। তবু একাকীত্ব বোধ হয় না। কোচ ও ম্যানেজারের সহযোগিতায় এক দল হয়ে খেলছি। সবাই অনেক কষ্ট করছি। দেশের জন্য কিছু করতে পারলে তখন ভালো লাগবে।’
ফাতেমার মতো আরেক মিডফিল্ডার সারিকা সাফা রিমন। নেত্রকোনার মেয়ে। পরিবারে বাবা-মা ছাড়াও চার বোন ও এক ভাই আছে। সবার ছোট হিসেবে পরিবারের সদস্যদের কথা দিনভর মনে পড়ছে। তবে দেশের জন্য খেলতে এসে সবই মেনে নিতে হচ্ছে তাকে, ‘আমি সবার ছোট। দেশের বাইরে প্রথম খেলতে আসা। পরিবারকে ছাড়া প্রথম ঈদ করতে যাচ্ছি। একটু তো খারাপ লাগছে। আপনজনকে ছাড়া করছি। এখানে এসে দুটি ম্যাচ জিতেছি। জেতাটা কঠিন ছিল। জেতার মধ্যে আনন্দ। দেশকে কিছু দিতে পারলেই তখন আর কোনও কষ্ট থাকবে না।’
সিঙ্গাপুরেও আজ ঈদ। দিনের এক ফাঁকে বাবা-মাসহ পরিবারের অন্যদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে অন্তত দূরত্ব ঘোচানোর চেষ্টা তো আছেই। সারিকার ভাষায়, ‘বাসার জন্য খারাপ লাগাটা শেষ পর্যন্ত থাকে না। যখন দেখি আমরা ভালো করছি। ম্যাচ জিতেই চলেছি। নিজেদের কাছে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। বাবা-মার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করবো। খোঁজ-খবর নিবো। বাসায় সেমাই রান্না হয়েছে কিনা। কে কী করছে। সবকিছু জানতে চাইবো। পাশাপাশি দোয়াও চাইবো। যেন ভালো করতে পারি।’
নারী দলের ম্যানেজার তারিক উজ্জামান নান্নু মেয়েদের কঠোর পরিশ্রম ও আত্মত্যাগ দেখে নিজেও মুগ্ধ, ‘ওরা আসলে কঠোর পরিশ্রম করে খেলছে। আজ ঈদ। ওদের খেলা নেই। তবে ছেলেদের খেলা আছে। দেখি এখানে এক ফাঁকে অন্যভাবে ঈদ আনন্দটা ভাগাভাগি করে নেওয়া যায় কিনা’।
সিঙ্গাপুরে শুধু মেয়েদের নয় ছেলেদেরও অনেকের প্রথম দেশের বাইরে ঈদ উদযাপন হচ্ছে। দেশের জন্য নিজেদের আনন্দটুকু বিসর্জন দিতে তাদের কোনও কার্পণ্য নেই
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।