ভিডিও

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দুই দিনের আল্টিমেটাম

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফেরার পরিবেশ সৃষ্টির দাবি 

প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৪, ১০:৪২ রাত
আপডেট: জুলাই ২৪, ২০২৪, ১০:৪৬ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ফেরার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করাসহ চার দফা দাবি জানিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন তারা এই দাবি জানান। শুরুতেই বক্তব্য উপস্থাপন করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। 
আন্দোলনকারীদের পক্ষে চার দফা দাবি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন সারজিস আলম। দাবিগুলো হচ্ছে, দ্রুত ইনটারনেট সেবা চালু করা, কারফিউ প্রত্যাহার, ক্যাম্পাস থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী প্রত্যাহার ও হলগুলো খুলে দিয়ে করে শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই দাবিগুলো আগামী দুই দিনের মধ্যে মেনে নেয়ার আল্টিমেটামও দিয়েছে তারা। 
নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মহামান্য আদালত শিক্ষার্থীদের পক্ষে রায় দিয়েছে, সে অনুযায়ী সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়েছে। 
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা মনে করেন, তাদের সাথে কথা না বলে সরকার কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে না। তারা বলেন, আমরা চেয়েছিলাম সংলাপের মাধ্যমে সকল অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে একটি কমিশনের মাধ্যমে কোটা নির্ধারণ করা  হোক। সংলাপের যথাযথ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আমাদের আন্দোলনে সকল শিক্ষার্থী এবং জনগণ নেমে এসেছিল। আমাদের প্রধান বক্তব্য হচ্ছে আমাদের সর্ব প্রথম নিরাপত্তা দিতে হবে। গ্রেফতার আতঙ্ক বন্ধ করতে হবে। স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ২০১৮ সালের ৫ জুন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলন শুরু হয়েছিল। শহীদ মিনার, রাজু ভাস্কর্য হয়ে শাহবাগ এসে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যাশার বেশ কিছু জায়গা ছিল আবার কিছু জায়গা ছিল অপ্রত্যাশিত। আমরা শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে অনেকটা বিপর্যস্ত রয়েছি। আজ আমরা ব্রিফিংয়ে এসেছি। 
কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন- কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের বক্তব্য- ৫ জুন মহামান্য হাইকোর্ট ২০১৮ সালে পরিপত্রকে বাতিল করে যে রায় দিয়েছিলেন তার প্রতিবাদে আমাদের আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। গত পহেলা জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলন শুরু হয়। ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বিতর্কিত ও মনগড়া বক্তব্য দেয় এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যায়ভাবে দমন নিপীড়ন ও হামলা-মামলা চালায় যা অনাকাক্সিক্ষত ছিল। বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যখন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় তখন ছাত্র-অভিভাবক, শিক্ষকসহ স্কুল-কলেজ ও সর্বস্তরের নাগরিককে রাজপথে নেমে আসতে আহবান জানাই আমাদের নিরাপত্তার জন্য। ছাত্ররা প্রতিরোধ গড়ে তোলে তখন আমরা দেখতে পাই সারাদেশে সেনাবাহিনী নামানো হয় এবং আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য দুর্বৃত্তরা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন লাগিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালায়। সরকারের দমন নিপীড়নের জন্য এ অরাজকতা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে এ ধরনের সহিংসা কর্মকান্ডের কোন সম্পৃক্ততা নেই এবং এ দায় শিক্ষার্থীরা নেবে না। এ দায় সরকারের। সরকার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উপর এর দায় চাপিয়ে সরকার পুনরায় দায় এড়াতে চাচ্ছে। আমাদের আন্দোলনকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করা হয়েছে। 
তারা আরও বলেন, সংলাপের যথাযথ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আমাদের আন্দোলনে সকল শিক্ষার্থী এবং জনগণ নেমে এসেছিল। আমাদের প্রধান বক্তব্য হচ্ছে আমাদের সর্ব প্রথম নিরাপত্তা দিতে হবে। গ্রেফতার আতঙ্ক বন্ধ করতে হবে। স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। আমরা জনগণকে বলতে চাই আমরা আপনাদের সাথে আছি। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমাদের বাসায় পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন যাচ্ছে। আমরা এ অবস্থার অবসান চাই। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই সারাদেশে যে সকল মানুষ শহীদ হয়েছে যারা হয়রানির শিকার হচ্ছে আমরা তাদের পাশে আছি। আমরা এখনও অনেক সমন্বয়কের খোঁজ পাচ্ছি না। আমাদের যোগাযোগহীনতার জন্য কিছু তথ্য বিভ্রান্ত হয়েছে। 
কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা যখন আন্দোলন শুরু করছিলাম তখন আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছিলেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আলোচনার মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করার জন্য। আজকে যে তান্ডব হয়েছে, অগ্নিসংযোগ হয়েছে, জ¦ালাও পোড়াও হয়েছে, জানমালের যে ক্ষতি হয়েছে তার দায়ভার সরকার এড়াতে পারে না। আমরা সব সময় চেয়েছি শান্তিপূর্ণ সমাধান কিন্তু শান্তিপূর্ণ সমাধান না হয়ে আমাদের যে পরিস্থিতিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে তার জন্য সরকারই দায়ী। আমরা এতগুলো লাশের উপর দিয়ে আমরা সংলাপে যাব না। আমরা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিলাম এবং কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে এই আন্দোলনের সমাপ্তি করতে চাই। আজকে এই পরিস্থিতির জন্য সরকার দায়বদ্ধ। 
সারজিস আলম বলেন, আমাদের আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদকে পাওয়া যাচ্ছে না। তার বাবা হাসপাতালের মর্গে তার ছেলের লাশ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এর চেয়ে বেদনাদায়ক ন্যক্কারজনক কি আর হতে পারে। আমাদের রংপুরের সাঈদকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে। এর দায় কোনোভাবে সরকার এড়াতে পারে না। 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS