ভিডিও

বাংলাদেশে উত্তরণকাল প্রতিষ্ঠান সংস্কারের ‘ঐতিহাসিক সুযোগ’ : জাতিসংঘ

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৪, ০৯:০৬ রাত
আপডেট: আগস্ট ১৬, ২০২৪, ০৯:০৬ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক আজ শুক্রবার (১৬ আগস্ট) বলেছেন, বাংলাদেশে বর্তমান উত্তরণকাল মানবাধিকার, অন্তর্ভুক্তি এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করার একটি ঐতিহাসিক সুযোগ।

তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সহিংসতার জন্য দায়ী সকলের জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে বাংলাদেশে বিক্ষোভ ও অস্থিরতা সংক্রান্ত জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের এক প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে হাইকমিশনার বলেন, ‘সামনের উত্তরণ দেশের প্রতিষ্ঠান সংস্কার ও জোরদারকরণ,  মৌলিক স্বাধীনতা ও নাগরিক পরিসর পুনরুদ্ধার এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গঠনে সকলের অংশ নেয়ার একটি ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরী করেছে।’ 
তুর্ক বলেন, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের জন্য জবাবদিহিতা ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, এবং একটি জাতীয় নিরাময় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এটি সম্পন্ন করা প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘সব ধরণের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি ব্যাপক, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত করা হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’

আজ এখানে প্রাপ্ত জনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের দপ্তরের এক বার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশে সরকারি চাকুরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে প্রাথমিকভাবে শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনের পর জুনের মাঝামাঝি সময়ে সহিংসতা হয় এবং নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। এতে কমপক্ষে ৩২ শিশুসহ শত শত মানুষ নিহত এবং হাজার হাজার লোক আহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রিপোর্টে বলা হয়, ‘জোরালো ইঙ্গিত রয়েছে যে, যা আরও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি রাখে, নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি মোকাবেলায় অপ্রয়োজনীয় ও নির্বিচারে শক্তি প্রয়োগ করেছে। এছাড়াও, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে রয়েছে, বিচার বহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক, গুম, নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ, যা পুঙ্খানুপুঙ্খ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি রাখে।’

প্রতিবেদনে দ্রুত আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের ওপর গুরুত্ব আরোপ এবং আরও প্রাণহানি, সহিংসতা এবং প্রতিশোধমূলক কর্মকা- প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সদস্যদের বাড়িঘর লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং হামলার পাশাপাশি পূর্ববর্তী শাসক দল এবং পুলিশের সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ এবং প্রতিশোধমূলক হত্যাকান্ডের খবরও পাওয়া গেছে। গত ১৫ আগস্ট, বাঁশের লাঠি, লোহার রড ও পাইপ নিয়ে উত্তেজিত জনতা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সমর্থকদের ওপর হামলা চালায় বলে জানা গেছে। সাংবাদিকদের ওপরও হামলা করা হয়েছে এবং ভিডিও ধারণ না করতে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রতিবেদনে দ্রুত আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের গুরুত্ব এবং আরও প্রাণহানি, সহিংসতা ও প্রতিশোধমূলক কর্মকা- প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদ-ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বল প্রয়োগের বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা পেতে হবে এবং প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তাদের অবশ্যই যে কোনো পাল্টা বা প্রতিশোধমূলক সহিংসতা থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে হবে।

হাইকমিশনার বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, ধর্মীয় নেতা এবং অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্থান রক্ষায় গৃহীত উদ্যোগকে স্বাগত জানান।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারও এসব কাজের তীব্র নিন্দা করেছে।

তিনি আরো বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী সকলকে, যারা অপ্রয়োজনীয় এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ বল প্রয়োগ করেছেন বা আদেশ দিয়েছেন, তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও কার্যকর প্রতিকার প্রদান করতে হবে।
তুর্ক হাজার হাজার বন্দী ও গুমের শিকার ব্যক্তিসহ দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তিকে স্বাগত জানান এবং নির্বিচারে আটক সকলের মুক্তির আহ্বান জানান।

প্রতিবেদনে বিচার বিভাগ, নিরাপত্তা সেক্টর ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে যেকোনো নিয়োগ ও বরখাস্তের বিষয় যাচাই করতে একটি সুর্নিদিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

হাইকমিশনার আরো ঘোষণা করেন যে, জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর উত্তরণে সহায়তা করতে পারে এমন ক্ষেত্র অন্বেষণ করতে আগামী সপ্তাহে সংস্থার একটি দল ঢাকা সফর করবে। দলটি সাম্প্রতিক সহিংসতা ও অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তের পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা করবে।

তুর্ক বলেন, আমি এই সপ্তাহে আমাদের ফোনালাপে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে আশ্বস্ত করেছি যে, আমরা এই সময়ে বাংলাদেশের জনগণের সাথে একাত্ম হয়ে দাঁড়িয়েছি এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে একটি সফল উত্তরণে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যা অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে এবং বাংলাদেশের সকল মানুষের অধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS