ভিডিও

বগুড়ায় সারিয়াকান্দি মডেল মসজিদটি ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গার ওপর নির্মাণের অভিযোগ

ওয়াকফ না হওয়ায় নামাজে আসেন না মুসল্লিরা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৪, ০৬:২৬ বিকাল
আপডেট: সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৪, ০৬:২৬ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি : ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গার ওপর জোরপূর্বক সারিয়াকান্দি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। মসজিদের নামে কোনও জমি না থাকায় এটি এখনও ওয়াকফ হয়নি।

মসজিদটি জনবহুল এলাকায় স্থাপন করা হয়নি। তাই স্থানীয় মুসল্লিরা নামাজ পড়তে আসেন না। মসজিদের দেয়ালে ফাঁটলসহ ঠিকাদারের বেশকিছু নিম্নমানের কাজের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

মসজিদটি ওয়াকফ হয়েছে কি না সে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, মসজিদটি যে দাগের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে তার জমির পরিমাণ এক একর ৮১ শতক, যা পিরপাল দেওয়ানের নামে জিম্মাদার হিসেবে সি এস রেকর্ড রয়েছে এবং সেই রেকর্ডে আব্বাদ আলী ফকির ও বামতুল্লাহ ফকিরকে দখলদার দেখিয়ে তাদের নামে জমির অংশ বন্টন করা হয়েছে।

পিরপাল দেওয়ানের কোনও বংশধর না থাকলেও আব্বাদ আলী ফকির এবং বামতুল্লাহ ফকিরের বংশধর বর্তমান আছে। জানা গেছে, পিরপাল দেওয়ান এই সম্পত্তিতে প্রতি বছর ওরশ আয়োজন করতেন। যার মাজার শরীফ এখনও নির্মিত মডেল মসজিদের সামনে বর্তমান রয়েছে। পিরপাল দেওয়ানের মৃত্যুর পর আব্বাদ আলী ফকির ও বামতুল্লাহ ফকির ওরসের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন।

পরবর্তীতে বিশালাকার ফাঁকা জায়গায় এলাকাবাসীর অনুরোধে এখানে ঈদের নামাজ শুরু করা হয়। পরে জায়গাটি ঈদগাহ কমিটির দখলে চলে আসে। পরবর্তীতে গত ২০১৮ সালে সাবেক এমপি প্রয়াত আব্দুল মান্নান এখানে মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করেন।

এর প্রেক্ষিতে গত ২০২১ সালের ১৩ জুন জোরপূর্বক অবৈধ দখল ও বিক্রি বন্ধের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন তপশিল সম্পত্তির স্বত্ব মালিকের পক্ষে পৌর এলাকার ধাপগ্রামের সোলায়মান আলী।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, এ সম্পর্কিত দু’টি মামলায় সোলায়মান আলীরা তাদের পক্ষে ডিক্রি পান। ডিক্রি পাওয়ার সত্ত্বেও সাবেক সংসদ সদ্যসের হস্তক্ষেপে ঈদগাহের পূর্ব পাশে গণকবর এবং ঈদগাহের ভেতরে জোরপূর্বক মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে মস্ত্রণালয়ের কোনও সুরাহা তিনি পাননি। তাই মডেল মসজিদের নামে কোনও দলিল পত্রাদিও প্রস্তুত হয়নি।

ফলে মডেল মসজিদটি এখনও ওয়াকফ হয়নি। এদিকে মসজিদটি কোনও জনবহুল বা মেইন সড়কের ধারে নির্মাণ হয়নি। এটি পৌর এলাকার অনেক ভেতরে নির্মাণ করা হয়েছে। তাছাড়া ঈদগাহের পূর্ব পাশে এমপি কর্তৃক ভেঙে দেওয়া যে মসজিদটি ছিল সেটি ছিল আহলে হাদিস অনুসারীদের।

আর মডেল মসজিদে চালু করা হয়েছে হানাফি মাজহাবের জামায়াত। তাই আশেপাশের মুসল্লিরা এখানে নামাজ পড়তে আসেন না। তারা এ মসজিদের পাশে ভিন্ন একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়াক্তের নামাজে এ মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা হয় ৩ থেকে ৬ জন।

এদিকে মসজিদটির ভেতরে প্রবেশ করে মসজিদের নির্মাণ কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের কাজের প্রমাণ পাওয়া গেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিতভাবে মসজিদের সমস্যা সম্পর্কে জানা যায়, মসজিদের সাউন্ড বক্স, সি সি টিভি ক্যামেরা, জেনারেটর নষ্ট, বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক লাইনের সমস্যা এবং বাল্ব নষ্ট, ফ্যানের রেগুলেটর নষ্ট, ভারি বর্ষণে ছাদের পানি মসজিদের দ্বিতীয় তলায় প্রবেশ করে, মসজিদের বাইরে লোহার নকশায় মরিচা ধরেছে, ৩য় তলায় গোল চত্ত্বরে কোনও ফ্যান নেই, ইমামের দাঁড়ানোর জায়গার ওপর কোনও ফ্যান নেই, গরম পানির গিজারে কোনও বৈদ্যুতিক সংযোগ নেই, বাথরুমের সাতটি ফ্লাস নষ্ট এবং সাতটি বাথরুমে কোনও আলোর ব্যবস্থা নেই, একটি এসি নষ্ট এবং দু’টিতে পানি পড়ে, দেয়ালের পলেস্তারে লোনা ধরে খসে পড়ছে, বেশকিছু দেয়ালে ফাঁটল ধরেছে।

মসজিদের জায়গার মালিক দাবিদার আবুল কাসেম বলেন, মসজিদের জায়গা নিয়ে মামলা হয়েছিল। মামলায় আমরা ডিক্রি পেয়েছি। পরবর্তীতে আপিল মামলার ডিক্রিও আমরাই পেয়েছি। তার সত্ত্বেও সাবেক সংসদ সদস্য জোরপূর্বক ওই জমিতে মডেল মসজিদ নির্মাণ করেছেন। মন্ত্রী বরাবর অভিযোগ দায়ের করেও আমরা কোনও সুরাহা পাইনি। বর্তমান সরকারের মাধ্যমে আমি আমার ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে চাই।

ঈদগাহ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি বলেন, জায়গাটি ঈদগাহের। সেই অনুযায়ী ঈদগাহ কমিটি এর দখলদার। তবে মডেল মসজিদের নামে এখনও জায়গাটির কোনও দলিলপত্র করা হয়নি এবং মসজিদটি এখনও হস্তান্তর করা হয়নি।

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রশাসক মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, মসজিদের নিম্নমানের কাজের বিষয়ে ইতিমধ্যেই স্থানীয়দের অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানানো হবে। ওয়াকফর বিষয়েও জেনেছি, যত দ্রুত সম্ভব উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে মডেল মসজিদটির ওয়াকফের ব্যবস্থা করা হবে এবং মসজিদটি হস্তান্তর করা হবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS