ভিডিও

শ্বাসনালীসহ শরীরে ১২০টির বেশি ছররা গুলি নিয়ে কাতরাচ্ছেন আফফান

চিকিৎসার জন্য সরকারের সহায়তা কামনা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪, ১১:০৪ রাত
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪, ১১:০৪ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

স্টাফ রিপোর্টার : বাড়ির মানুষের অগোচরে বগুড়ায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে আন্দোলনের দিন গুলোতে নিরাপদে সুস্থভাবে বাড়ি ফিরলেও, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিজয় উল্লাস করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছে বগুড়া শহরের স্কুল ছাত্র আফফান।

করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল এন্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী গত ১৮ জুলাইয়ের বিক্ষোভের মাধ্যমে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়। বগুড়ায় যখন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে তখন সকলের অগোচরে সুযোগ পেলেই যোগ দেয় আন্দোলনে। কোন দিন বন্ধুর সাথে আবার কোন দিন তারই জমজ ভাই অরোয়াকে সাথে নিয়ে।

আন্দোলনের দিন গুলোতে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরলেও বিজয়ের দিনে পুলিশের ছোররা গুলিতে ঝাঝরা হয়ে যায় তার পুরো শরীর। আজ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) শহরের উপশহরস্থ আফফানদের ভাড়া বাড়িতে কথা হলো তার সাথে। সপ্তম শ্রেণির এই শিক্ষার্থী জানালো ১৮ জুলাই মিছিলে যোগ দেওয়ার মধ্যে দিয়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শরিক হয় আইসুল ইসলাম আফফান।

এরপর ৩ ও ৪ আগস্টও আন্দোলনে যোগ দেয় সে। কয়েক দিন মিছিল শেষে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যায়। বাবা সৌদি প্রবাসী হওয়ায় মা আরও কঠোর নজর রাখতেন সন্তানদের প্রতি। মা বাড়ি থেকে বের হতে দিবে না এমন ইঙ্গিত পাওয়ার পর শহরের ফুলবাড়িস্থ নানা বাড়িতে যায় আফফান।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাড়িতে এসে কাউকে না জানিয়ে জাতীয় পতাকা নিয়ে বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে য়ায়। এরপর থানা মোড় পার হতেই পুলিশ থানা থেকে জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। খুব কাছ থেকে গুলি করায় তার শরীরে প্রায় ১৩০টি গুলি বিধে যায়। এক সময় অজ্ঞান হয়ে পড়ে সে। আর কিছু বলতে পারে না আফফান।

তার মা আয়েশা সিদ্দিকা জানান, ছেলে গুলি বিদ্ধ হয়েছে এমন সংবাদ পেয়ে তিনি প্রায় বেহুস ছিলেন। ছেলেকে খুঁজতে চলে যান শহরে। সারা শরীর রক্তাক্ত। যেখানে যেখানে গুলি বিদ্ধ হয়েছে সেখান থেকে রক্ত বের হচ্ছে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে প্রথমে নেওয়া হয় কাছেই বগুড়া ডায়াবেটিক হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তারা অন্য স্থানে নেন।

সেখান থেকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে বিভিন্নভাবে এক্স-রে করে দেখা যায় তারা সারা শরীরে ১৩০ টির বেশি গুলি বিদ্ধ হয়েছে। পরে অপারেশনের মাধ্যমে কয়েকটি গুলি বের করা হলেও আরও ১২০ টির মত গুলি শরীরে রয়ে গেছে। তিনি আরও জানান,  গত ৩ সেপ্টেম্বর ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে নেওয়া হয়।

সেখানে সিটি স্ক্যান করে দেখা যায় শ্বাসনালীতে কয়েকটি গুলি আটকে আছে। শ্বাসনালীতে গুলি আটকে থাকায় বিষয়টি জটিল হতে পারে। সে কিছু খেতে পারছে না। ডাক্তারা জানিয়েছেন এর জন্য ৪ বছরের দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা প্রয়োজন। আর শ্বাসনালীর গুলি অপসারণের জন্য দেশের বাইরে নেওয়া দরকার। ডাক্তারা এ মাসের ৩০ তারিখে আবার যেতে বলেছে।

তিনি বলেন, সরকারে পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার কথাবলা হলেও এখনো কোন ব্যবস্থা  নেওয়া হয়নি। নিজেরাই লাখ টাকার বেশি ব্যয় করে এ পর্যন্ত চিকিৎসা করিয়েছেন। তারা আর চিকিৎসা ব্যায়ভার বহন কতে পারছেন না। ঢাকা থেকে একজন সমন্বয়ক কথা বললেও চিকিৎসার ভার কেউ নিচ্ছে না।

তিনি চিকিৎসার সহায়তা চেয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তর, জেলা পরিষদ, সিভিল সার্জন এবং জেলা প্রশাসকের বরাবরে আবেদন করেছন। এখন পর্যন্ত কোন সাড়া পাননি। এই অসহায় মা ছেলের এই অবস্থায় অসহায় হয়ে পড়েছেন। এক মাসের বেশি সময় হলো ছেলে অসুস্থ।

তিনি জানান ছেলে বাম হাতে সবচে বেশি গুলি লেগেছে, মাঝে মাঝে তার বাম হাত অবশ হয়ে যায়। ঠিকমত কিছু ধরতে পারে না। তার বাবা প্রবাসী হওয়ায় তাকে সব সামাল দিতে হচ্ছে। তিনি সন্তানের সু চিকিৎসার জন্য বর্তমান সরকারের দৃষ্টি কামনা করেন।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS