ভিডিও

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ১৫শ’ বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতা বছরে ক্ষতি সাড়ে ৭ কোটি টাকা 

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪, ০৬:০০ বিকাল
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪, ০৬:০০ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

শেখ সাবীর আলী, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) : দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে পানি নিস্কাশনের পথ বন্ধ করে অপরিকল্পিত পুকুর খনন করায় দীর্ঘদিন ধরে ১৫শ’ বিঘা জমি জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ে রয়েছে। এতে করে ইরি-বোরো এবং আমন মৌসুমে চাষাবাদ করতে না পারায় দশটি গ্রামের দুই শতাধিক কৃষকের বছরে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা ক্ষতিসাধন হচ্ছে। অথচ খাদ্য ভান্ডার খ্যাত এ জেলার উৎপাদিত ধান-চাল সারাদেশে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

স্থানীয় কৃষকরা বিপাকে পড়ে বিষয়টি নিয়ে সুরাহা করতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন সংগ্রাম করেন এবং সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে জানান। পরে ফসলি জমির জলাবদ্ধতা নিরসনে জাইকা প্রকল্পের অর্থায়নে প্রথম ধাপে ২০২০ সালে ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে দৌলতপুর ইউনিয়নের বারাইপাড়া এলাকায় ১৬৩ মিটার ক্যানেল নির্মাণ করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে ১১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪৩ মিটার ক্যানেল নির্মাণ করা হয়।

ক্যানেলটি আবাদি জমির চেয়ে উঁচু হওয়ার কারণে তা তেমন কাজে আসছে না। এলাকাবাসীর অভিযোগ ক্যানেলটি আবাদি জমির চেয়ে উচু হওয়ার কারণে আল্প পরিমাণ পানি নিস্কাশন হলেও তাতে বেশির ভাগ ফসলি জমি এখনও জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত হয়ে অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। অপরিকল্পিত ক্যানেল নির্মাণের কারণেই এ অবস্থা বলে দাবি স্থানীয় কৃষকদের।

কৃষকদের তথ্য মতে , প্রতি মৌসুমে বিঘা প্রতি ২০-২৫ মণ ধান উৎপাদন হতো এসব জমিতে। সে অনুযায়ী এলাকার দুই শাতাধিক কৃষকের ১৫শ’ বিঘা জমিতে বছরে ৬০হাজার মণ ধান উৎপাদন হতো। যার আনুমানিক মূল্য সাড়ে ৭ কোটি টাকা। এতে করে লোকসান গুণ তে হচ্ছে তাদের। ওই এলাকার ৮০ বছর বয়সি নাজমুল হক নামে এক কৃষক জানান, ৫০ বছর আগেও এসব জমিতে আমন চাষাবাদ হতো কিন্তু এখন ইরিবোরোও আবাদ হয় না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের লক্ষিপুর, মহেশপুর, গড়পিংলাই, বারাইপাড়া, গণিপুর, মহদিপুর, আড়াপাড়া, ঘোনাপাড়া, পলিপাড়াসহ ওই এলাকার দশটি গ্রামের প্রায় ১৫শ’ বিঘা (৫শ’একর) জমি জলাবদ্ধতায় পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আনাবাদি হয়ে পড়ে রয়েছে। ফসলি মাঠজুড়ে কচুরিপানায় ভরে গেছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, প্রায় ২০ বছর ধরে এসব জমিতে তারা চাষাবাদ করতে পারছেন না। কিছু জায়গায় পানি কম থাকলে আমন মৌসুমে কোন কৃষক ধানের চারা রোপণ করলেও তা নষ্ট হয়ে যায়। সে কারণে কেউ আর ঝুঁকি নিয়ে আবাদ করেন না। বর্ষাকালের পানি ওইসব ফসলি জমিতে জমে থাকায় সারা বছর অনাবাদি হয়ে পড়ে থাকে। জমিগুলো অনাবাদি হওয়ার কারণে কৃষকরা বেচা-কেনাও করতে পারছেন না। সব মিলিয়ে তারা চরম বিপাকে পড়েছেন।

এক সময় ওইসব জমিতে ইরি-বোরো এবং আমন ধান চাষাবাদ হতো, সেসব এখন স্মৃতি। এদিকে ফসলি জমির জলাবদ্ধতা নিরসনে জাইকা প্রকল্পের অর্থায়নে প্রথম ধাপে ২০২০ সালে ৪৪ লাখ টাকা ব্য য়ে পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনে দৌলতপুর ইউনিয়নের বারাইপাড়া এলাকায় ১৬৩ মিটার ক্যানেল নির্মাণ করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে ২০২২ সালে ১১ লাখ ৪৫ হাজার ট্যাকা ব্যায়ে ৪৩ মিটার ক্যানেল নির্মাণ করা হয়।

সেসময় জলাবদ্ধ দুই হাজার বিঘা জমির মধ্যে প্রায় ৫শ’ বিঘা জমি আবাদের উপযোগী হয়। ক্যানেলটি আবাদি জমির চেয়ে উঁচু হওয়ার কারণে এখনও ১৫শ’ বিঘা জমি পানিতে ডুবে আছে। ক্যানেলটি তেমন কাজে আসছে না। ওইসময় ক্যানেলের জন্য বারাইপাড়া গ্রামের সড়কের ওপর একটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। দেড় বছর আগে সেই বেইলি ব্রিজটিও ভেঙে গিয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে স্থানীয় লোকজন। দ্রুত ব্রিজটি নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলািকাবাসী।

স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মোস্তাফিজার রহমানের ৩২ বিঘা, আইয়ুব আলীর ৪ বিঘা, বাবু’র ১৮ বিঘা, আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর ১৯ বিঘা, জয়নাল আবেদিনের ৬বিঘা, ইউনুস আলীর ১০ বিঘা, মনিরুল ইসলাম মতির ৮বিঘা, এনামুল হক এর ৩বিঘা ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে।

তারা জানান, পানি নিস্কাসনের পথ রোধ করে অপরিকল্পিত পুকুর খনন করাসহ অপরিকল্পিত ক্যানেল নির্মাণের কারণে প্রায় ১৫শ’ বিঘা জমি জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন সংগ্রাম করে এবং সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে জানালে সেইসময় একটি ক্যানেল তৈরী করলেও জমির চেয়ে ক্যানেলটি উচু হওয়ার কারণে তা দিয়ে তেমন পানি নিস্কাশন হয় না।

বর্ষার পানি জমে সেই পানি সরা বছর জমিতে জলাবদ্ধতা হয়ে থাকে। আমরা এসব জমি নিয়ে চরম সমস্যায় আছি। বিষয়টি নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে সমস্যা নিরসনের দাবী জানিয়েছেন তারা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার জানান, বিষয়টি যেহেতু পানি উন্নয়ন বোর্ডের, তাই এ নিয়ে উপজেলা পর্যায় থেকে আমাদের করনীয় তেমন কিছুই নেই। তবে জমি থেকে পানি নেমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সার এবং বীজ দিয়ে সহায়তা করতে পারি।

উপজেলা সহকারি প্রকৌশলী (এলজিইডি) সফিকুল ইসলাম বলেন, সরেজমিনে দেখে পানি নিস্কাশনের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে পরামর্শ করে বিকল্প ব্যাবস্থা নেয়ার চেষ্টা করবো। তবে ক্যানেলের সাথে বড় পাইপ দিয়ে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, এ জন্য এলাকার সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর মো. আল কামাহ্ তমাল বলেন, আগে থেকে যেহেতু একটি পাকা ক্যানেল রয়েছে, সেটি এখন ভাঙা সম্ভব নয়, তাই সেখানে বিকল্প কিছু করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS