ভিডিও

শাজাহানপুরে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী খাউড়া মেলা (ভিডিওসহ)

বিপুল পরিমাণ মিষ্টি বিক্রি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৪, ১০:০০ রাত
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪, ১২:৫৬ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : প্রতিবছরের মতো এবারও ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার উৎসব আমেজে অনুষ্ঠিত হলো বগুড়ার শাজাহানপুরের প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরোনো খাউড়া মেলা। মূলতঃ সৈন্যাস পূজাকে ঘিরে সুদূর অতীতে সূচনা হয়েছিল এ মেলার।

উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের জালশুকা বাজারের পূর্বদিকে এক কিলোমিটার দূরত্বে খাউড়া খাল/দহের পাড়ে অনুষ্ঠিত মেলাকে ঘিরে খোট্টাপাড়া ও আশপাশের গ্রামে প্রতিটি ঘরে দেখা যায় নাইওরিদের ভিড়। মেয়ে-জামাই, নাতী-নাতনী, আত্মীয়-স্বজনদের আগমনে উৎসবে মেতে ওঠেন স্থানীয়রা। নাইওরি আপ্যায়নে মেলার বড় মাছ, হরেক রকমের মিষ্টান্ন, ফাগুনের মিষ্টি বড়ই অন্যতম।

শিশুদের চিত্ত বিনোদনের খোরাক জোগাতে মেলাতে দেখা যায় আকর্ষণীয় খেলনা, চড়কি, নাগর দোলাসহ নানা রকম রাইডস্। গ্রামীণ নারীদের চুরি-ফিতা ও কসমেটিকস্ কেনা-বেচায় পরদিন বসে ‘বউ মেলা’। এবার রসগোল্লা, চমচম, বড় মিষ্টি, মাছ মিষ্টিসহ হরেক রকমের মিষ্টির অর্ধশতাধিক দোকান বসেছিল। একদিনের এ মেলায় বিপুল পরিমাণ মিষ্টি বিক্রি হয়। এর মধ্যে আকর্ষণীয় মিষ্টি ছিল ‘মাছ মিষ্টি’। প্রতি কেজি মিষ্টির দাম ছিল ২শ’ থেকে ৪শ’ টাকা পর্যন্ত।

অপরদিকে রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, আইড়, বাঘাইড়, বিগ হেড, সিলভার কার্পসহ নানা রকম বড় বড় সামুদ্রিক মাছ উঠেছিল মেলায়। দামও ছিল বেশ চড়া। প্রতি কেজি বাঘাইড় ১ হাজার থেকে ১২শ’, ৮ থেকে ১৬ কেজি ওজনের প্রতি কেজি বোয়াল মাছ ১ হাজার থেকে ১৪শ’ টাকা, ১৬ থেকে ২২ কেজি ওজনের প্রতি কেজি কাতলা মাছ ১ হাজার থেকে ১৪শ’ টাকা, ৮-৯ কেজি ওজনের রুই মাছ প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা, ৭-১০ কেজি ওজনের বিগ হেড মাছ প্রতি কেজি ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকায় বিক্রি হয়।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মাছ ব্যবসায়ী মনু মিয়া জানান, তিনি ২৫ বছর যাবত এ মেলায় বড় বড় আকারের বোয়াল, কাতলা, রুইসহ নানা রকমের মাছ বিক্রি করে আসছেন। এবার ভালো বিক্রি হয়েছে।

শাজাহানপুর উপজেলার খোট্টাপাড়া গ্রামের মিষ্টি ব্যবসায়ী মাহফুজার রহমান জানান, একদিনের এ মেলায় তিনি ১শ’ মণ মিষ্টি বিক্রি করেছেন। বগুড়া শহরের চেলোপাড়া এলাকার কসমেটিকস্ ব্যবসায়ী বাবর আলী জানান, তিনি প্রতি বছর খাউড়া মেলায় চুরি-ফিতা ও কসমেটিকস বিক্রি করতে আসেন। প্রতি বছরই বেশ বেচাকেনা হয়। এবার ৮০-৯০ হাজার টাকা কেনাবেচা হবে বলে তিনি আশা করছেন।

খোট্টাপাড়া মাদ্রাসা পাড়ার বাসিন্দা এনামুল হক জানান, তিনি ২২-২৩ বছর যাবত ঢাকায় ব্যবসা করেন ও পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। কিন্তু প্রতি বছরই আত্মীয়-স্বজনদের সাথে মিলিত হতে খাউড়া মেলার সময় সপরিবারে গ্রামের বাড়ি আসেন। জালশুকা হিন্দুপাড়ার বৃদ্ধ যোগেন্দ্র নাথ জানান, তাদের পূর্বপুরুষেরা প্রতিবছর ফাগুন মাসের প্রথম বুধবার খাউড়া খালের পাড়ে ছোট সৈন্যাসের পূজা দিচ্ছিলেন।

আর তার এক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ মাঘ মাসের শেষ বুধবার পোড়াদহে খালে পাড়ে দেওয়া হতো বড় সৈন্যাসের পূজা। উভয় পূজাকে ঘিরে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে পোড়াদহ এবং খাউড়া মেলা। কালক্রমে উভয় স্থানেই এখন আর সৈন্যাস পূজা হয় না। কিন্তু মানুষের অস্থি-মজ্জায় আজও অটুট রয়েছে মেলার ঐতিহ্য।

শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিদা আক্তার জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ঐতিহ্যবাহী খাউড়া মেলা প্রকাশ্যে ইজারা দেওয়া হয়েছে। মেলাকে ঘিরে পুরো এলাকায় ঘরে ঘরে উৎসব-আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে।

থানার ওসি শহীদুল ইসলাম জানিয়েছেন, মেলায় আইন-শৃংখলা বজায় রাখতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। ফলে কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS