স্টাফ রিপোর্টার : স্বাভাবিক হয়েছে হয়ে আসছে বগুড়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠদান। আজ রোববার (১৮ আগস্ট) বগুড়া শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় এক মাস পর আজ রোববার (১৮ আগস্ট) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেশি ছিল।
জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে রূপ নেওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কারণে গত ১৬ জুলাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আন্দোলন চরমে উঠে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হওয়ার পর ওইদিন ঘোষনা দেওয়া হয় ৬ আগস্ট থেকে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার।
কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও দেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী না থাকায় শিক্ষার্থীরা শহর পরিচ্ছন্ন, ট্রাফিকিং ও বাজার মনিটরিংসহ অন্যান্য কার্যক্রমের সঙ্গে নিজে থেকে যুক্ত হয়। এরপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিলো না বললেই চলে। আজ রোববার (১৮ আগস্ট) বৃহস্পতিবার অন্তবর্তীকালীন সরকার আজ রোববার (১৮ আগস্ট) থেকে দেশের সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া এবং পাঠদানের বিষয়ে ঘোষনা দেয়।
এরপর আজ রোববার (১৮ আগস্ট) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এক মাস পর কাল প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিলো বেশি। বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুন অর রশীদ জানান, কাল প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর গড় উপস্থিতি ছিলো ৭০ ভাগ।
তবে নবম শ্রেণিতে উপস্থিতি কিছুটা কম ছিলো। ওই শ্রেণিতে উপস্থিতির হার ছিলো ৩০ ভাগ। মামুন অর রশীদ বলেন, একটা অবস্থা থেকে স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে ধীরে ধীরে উপস্থিতি আরও বাড়বে। এই সময়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে যে ক্ষতি হয়েছে, তা অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে পূরণ করতে হবে।
বগুড়া জিলা স্কুলে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিলো শতকরা ৮৮ ভাগ। দশম শ্রেণির মডেল টেস্ট নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামপদ মুস্তফি জানান, যেহেতু তাদের মডেল টেস্ট আমরা শুরু করেছি তাই দশম শ্রেণির উপস্থিতি প্রায় শতভাগ রয়েছে। ওই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক আব্দুল মালেক জানান, অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা চলাকালীন ১৬ জুলাই থেকে বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষনা করা হয়।
যেহেতু একদিন-দুইদিন পর পরীক্ষা চলছিলো তাই পরীক্ষার ফাঁকে যেদিন পরীক্ষা থাকতো না ওইদিন ক্লাস নিতাম। কিন্তু মাউশি পরে নিয়ম করে, পরীক্ষা চলাকালীন কেনো ক্লাস নেওয়া যাবে না। কিন্তু যেহেতু পরীক্ষা চলমান অবস্থায় স্কুল বন্ধ করা হয়, এবং স্কুল খুলে দিলেও এখনও মাউশি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি, তাই আমরা একটি জটিল সংকটময় অবস্থায় রয়েছি।
বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুল এন্ড কলেজের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শাখায় আজ রোববার (১৮ আগস্ট) উপস্থিতি ছিলো শতকরা ৮০ শতাংশ এবং প্রাইমারী শাখায় ৮৫ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মোঃ মুস্তাফিজার রহমান জানান, এখন আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ শিক্ষার্থীদের ক্লাসমুখী করার। তারা শহর পরিস্কার, ট্রাফিকিং, গ্রাফিতি থেকে বাজার মনিটরিংসহ অনেক কাজ করেছে। এখন যেন তারা ক্লাসে ফিরে এসে ঠিকমত পড়ালেখায় মনোযোগী হয়ে ওঠে সেই চেষ্টা করতে হবে।
বগুড়া আর্মড ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহবুবা হক জানান, আজ রোববার (১৮ আগস্ট) ওই প্রতিষ্ঠানের একাদশ শ্রেণিতে ৭০ ভাগ, দ্বাদশ শ্রেণিতে ৬০ ভাগ, নবম ও দশম শ্রেণিতে ৬০ ভাগ এবং অন্যান্য শ্রেণিতে শতকরা ৮০ভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলো।
ইয়াকুবিয়া স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহাদত হোসেন জানান, স্কুলে মাধ্যমিক শাখায় উপস্থিতি শতকরা ৭৫ ভাগ থাকলেও প্রাথমিক শাখায় প্রায় ৮৮ শতাংশ ছিলো। বগুড়া করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ অসিত কুমার সরকার জানান, ওই প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি আজ রোববার (১৮ আগস্ট) ছিলো প্রায় ৯০ শতাংশ। তিনি বলেন, গত ৬ আগস্ট স্কুল খোলার পর থেকেই তারা পাঠদান চালু রেখেছেন। প্রথম কয়েকদিন উপস্থিতি খুব কম থাকলেও ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। আজ রোববার (১৮ আগস্ট) উপস্থিতি বেশ ভালো ছিলো বলে জানান তিনি।
বগুড়া ইয়াকুবিয়া স্কুল এন্ড কলজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসমি জানায়, দীর্ঘদিন পর স্কুলে যেতে পেরে তার খুব আনন্দ হচ্ছে। যদিও সহপাঠীদের সাথে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে তবে শ্রেণিকক্ষের মজাই অন্যরকমন। একই রকম অনুভূতি ব্যক্ত করে বগুড়া জিলা স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আদিব আল রাফি জানায়, স্কুলে যেতে পেরে খুব ভালো লাগছে। অনেকদিন পর ক্লাসের বন্ধুদের সাথে দেখা হচ্ছে।
এদিকে আমাদের দুপচাঁচিয়া প্রতিনিধি জানান, উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অস্থিতিশীল পরিবেশে কারণে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। অন্তর্বর্তীকালিন সরকার শপথ নেওয়ার পর চলমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে। এরই মাঝে গত ৬ আগস্ট প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো খোলার নির্দেশ দিলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিলো একেবারেই কম।
প্রায় এক মাস পর আজ রোববার (১৮ আগস্ট) থেকে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো একযোগে খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের সমাগমে পুনরায় স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে শিক্ষার পরিবেশ।
দুপচাঁচিয়া জাহানারা কামরুজ্জামান কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম তালুকদার, মোস্তফাপুর আছির উদ্দীন চিশতী মেমোরিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ রুবেল, বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ রঞ্জন পাল জানান, প্রথম দিনেই তাদের প্রতিষ্ঠানে শতকরা ৮০ থেকে ৯৮জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলো।
দুপচাঁচিয়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনিছুল ইসলাম লিটন, দুপচাঁচিয়া পালট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল বাসার, ডিমশহর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আক্তারুজ্জামান কনক জানান, তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতকরা ৭০ থেকে ৮০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছে।
এদিকে দুপচাঁচিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, তার প্রতিষ্ঠানে প্রায় শতকরা ৯৮জন শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছে।
দুপচাঁচিয়া বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন, তালোড়া বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌর চন্দ্র দাস, শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিপ্রা রানী বসাক, দেবখন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উম্মে হাবিবা জানান, তাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ৬ তারিখ থেকে খুললেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম ছিলো।
আজ রোববার (১৮ আগস্ট) থেকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে শতকরা ৭০ থেকে ৮০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।