ভিডিও

বগুড়া দুপচাঁচিয়ায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে একসাথে অংশ নেওয়া ভাইকে হারিয়ে বোন আজও বাকরুদ্ধ

প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২৪, ০৮:৪৯ রাত
আপডেট: আগস্ট ২৩, ২০২৪, ০৮:৪৯ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

গোলাম ফারুক, দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) : বগুড়া দুপচাঁচিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে একই সাথে অংশ নিয়ে ভাই মনিরুল ইসলাম মনিরকে (২৩) হারিয়ে বোন নাফিসা খাতুন আজও বাকরুদ্ধ। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাবা-মাও শোকের সাগরে ভাসছেন। গত ২০ দিন ধরে ওই পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

দুপচাঁচিয়া উপজেলা থানা বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার পূর্বে কাহালু উপজেলার বীরকেদার গ্রামের শামছুল হক। পেশায় একজন কৃষক। মা মোরশেদা বেগম একজন গৃহিনী। এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে তাদের সুখের সংসার। স্বপ্ন দেখছিলেন ছেলে-মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে সৎ মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার।  সে লক্ষ্যে অনেক দূর এগিয়েও গিয়েছিলেন।

একমাত্র ছেলে মুনিরুল ইসলাম মুনির নওগাঁ বদলগাছি উপজেলার সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আর একমাত্র মেয়ে নাফিসা খাতুন বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ছাত্রী। গতকাল শুক্রবার নাফিসা খাতুন জানান, তার ভাই মুনিরুল ইসলাম মুনির ছোটবেলা থেকেই সামাজিক নানা কাজে জড়িত ছিলেন।

পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি নিজেই ছাত্র পড়াতেন। একই সাথে বাবার কৃষি কাজেও সহযোগিতা করতেন। নিজগ্রামসহ আশেপাশের এলাকার অস্বচ্ছল ও অসহায় মানুষদের সহায়তার জন্য ২০২৩ সাথে সামাজিক স্বেচ্ছাসেবামুলক সংগঠন “হিকমা ইয়ুথ সোসাইটি ফাউন্ডেশনের” সাথে জড়িয়ে পড়েন এবং ওই সংগঠনটির কোষাধ্যক্ষ এর দায়িত্ব নিয়ে সততা ও নিষ্ঠার সাথে অসহায় মানুষদের সেবামুলক কাজে অংশ গ্রহণ করেন।

চলতি বছরের জুলাইয়ের শুরুতেই কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে মুনিরুল ইসলাম মুনির তাতে অংশগ্রহণ করেন। এতে তার বোন নাফিসা খাতুনকেও অংশ নিতে বলেন। ২৫ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপচাঁচিয়ায় কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে ওই দিন দুপচাঁচিয়া জাহানারা কামরুজ্জামান কলেজে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে সমাবেশ করেন।

তাদের সাথেই সামনে থেকে কোটা বিরোধী আন্দোলনে মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। ওই দিন সিও অফিস বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের পুলিশ খুঁজছে এমনই খবর তার বাবার কাছে আসে।

তার বাবা মুনিরুল ইসলাম মুনিরকে বাড়িতে আসতে নিষেধ করেন। তার পর তিনি কাহালু পাইকড় গ্রামে তার নানার বাড়িতে চলে যান। নানার বাড়ি থেকেই দুপচাঁচিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন। ঘটনার দিন গত ৪ আগস্ট রোববার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে মুনিরুল ইসলাম মুনির দুপচাঁচিয়ায় আসেন।

আসার আগেই তার বোন নাফিসা খাতুনকে ফোন করে বলেন, ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য এ আন্দোলন। এটা কারো ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য নয়। বাংলাদেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছে। তাকেও তার বান্ধবীসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে বলেন। নাফিসা খাতুন ভাইয়ের ডাকে সারা দিয়ে বান্ধবীদের নিয়ে দুপচাঁচিয়ায় আসেন এবং ভাইয়ের হাত ধরেই মিছিলের সামনে থেকে আন্দোলনে অংশ নেন।

ওইদিন বেলা ১১টায় থানার সামনে দিয়ে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বাধে। এতে মুনিরুল ইসলাম মুনির গুলিবিদ্ধ হন। সহপাঠীদের সাথে আহত ভাইকে দুপচাঁচিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

অশ্রুসিক্ত নয়নে কথাগুলো বলতে বলতে নাফিসা খাতুন বার বার বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছিলেন। আরো বলেন ভাইয়ের ডাকে সারা দিয়ে তারা দুই ভাই- বোন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয় নিয়ে নাফিসা খাতুন ঘরে ফিরলেও ফেরা হয়নি তার ভাইয়ের।

তার বাবা শামছুল হক আবেগে আপ্লুত কন্ঠে জানান, ঘটনার দিন ৪ আগস্ট রোববার আনুমানিক দুপুর ১২টায় তার কন্ঠে আব্দুল্লাহর মাধ্যমে একমাত্র ছেলে মুনিরুল ইসলাম মুনির গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবরটি জানতে পারেন। তিনি বলেন, ‘সে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো না।

শিক্ষার্থীদের নায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলো। দুপচাঁচিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে গুলিবিদ্ধ ছেলের নিথর দেহ দেখতে পাই। পরে বাড়িতে নিয়ে এসে সন্ধ্যায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।’

ঘটনার পর প্রায় ২০ দিন অতিবাহিত হলেও পরিবারে এখনো চলছে শোকের মাতম। তার মা মোরশেদা বেগম ছেলের স্মৃতি বিজড়িত পড়ার ঘরের গিয়ে অঝোরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছেলের রক্তমাখা শার্ট ও রক্তেরঞ্জিত জাতীয় পতাকা ধরে সময়ে অসময়ে আজও কান্নাকাটি করেন।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS