ভিডিও

সিলিন্ডার বিস্ফোরণে প্রাণহানি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৪, ০৮:১৩ রাত
আপডেট: অক্টোবর ১৮, ২০২৪, ০৮:১৩ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

গ্যাস ছাড়া এখন নাগরিক জীবন কল্পনা করা যায় না। গ্যাসের সাময়িক সংকট দেখা দিলে রীতিমতো হাহাকার শুরু হয়ে যায়। মানুষ প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নামে। একই ভাবে যানবাহনেও গ্যাসের ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে, সিএনজি স্টেশনগুলোতে যানবাহনের দীর্ঘসারি দেখলেই তা কিছুটা অনুমান করা যায়। পাশাপাশি গ্যাসের অনিরাপদ ব্যবহারও ক্রমেই উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।

লক্ষ্মীপুরে মেঘনা ক্লাসিক নামক একটি বাসের সিলিন্ডারের গ্যাস ভরার সময় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। রোববার রাতে পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রিনলিফ সিএনজি ফিলিং স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ১৪ জন।

পত্র-পত্রিকার খবরে বলা হয় দেশের দুই লাখ গাড়িতে রয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার। বলা যায়, বিস্ফোরণোন্মুখ বোমা নিয়ে চলাচল করছে এসব যানবাহন। মাঝে মধ্যে বিস্ফোরণও ঘটছে। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে এসব দুর্ঘটনায়। এর আগেও রাজধানীর শাহবাগে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন লেগে কঙ্কালে পরিণত হয় একটি যাত্রীবাহী বাস।

দ্রুত নেমে যাওয়ায় যাত্রীদের কেউ হতাহত হননি। তবে গাড়ির চালকের হাত ও পায়ের কিছু অংশ ঝলসে যাওয়ায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। যাত্রীবাহী বাসের মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। শুধু পরিবহণ যাত্রী নয়, যে কোনো সময় যে কোনো মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ধারে কাছে অবস্থানরত মানুষের জন্যও ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে।

স্মর্তব্য, একটি গ্যাস সিলিন্ডারের মেয়াদ পাঁচ বছর। এরপর নিরাপত্তার স্বার্থে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার রিটেস্টিং করা উচিত। প্রয়োজন হলে সিলিন্ডার বদলে ফেলা উচিত। কিন্তু আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকায় সংশ্লিষ্ট গাড়ির মালিক অনেক সময় রিটেস্টিং করার গরজ দেখান না। গাড়িতে লাগানো গ্যাসের সিলিন্ডার পরীক্ষা করে বিস্ফোরক অধিদপ্তরে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয় না।

সচেতনতার অভাবে গাড়িচালক ও ব্যবহারকারী  নিজেরাই জানেন না যে, তার গাড়িটি বিপজ্জনক বোমা হয়ে উঠেছে। গাড়ির মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার নিয়ে যে হেলাফেলা চলছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। দুর্ঘটনার বিপদ ঠেকাতে গাড়ির রুট পারমিট ও ফিটনেস সার্টিফিকে দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্যাস সিলিন্ডারের মেয়াদ দেখার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করতে পারে পুলিশ ও বিআরটিএসহ দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো।

জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের ব্যবহার সারা দুনিয়ায়ই রয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে মাথাপিছু গ্যাসের ব্যবহার আমাদের তুলনায় অনেক বেশি, কিন্তু দুর্ঘটনার হার খুবই কম। তার কারণ, সেসব দেশে গ্যাস ব্যবহারের নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে এবং সেই নীতিমালা যাতে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা হয় সে ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় তদারকি রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের দেশে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।

বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বিভিন্ন স্থানে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়েও অবৈধ সংযোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রায়ই এসব সংযোগ থেকে দুর্ঘটনা ঘটছে। ঘটনার পর অবৈধ সংযোগের কথা বলে গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থা দায় এড়িয়ে যায়। অথচ অভিযোগ রয়েছে, প্রচুর অর্থের বিনিময়ে তিতাসেরই এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারি এসব সংযোগ দিয়ে থাকে।

গাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার লাগানোর ক্ষেত্রেও রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। এ ছাড়া প্রয়োজনে গাড়িতে সিলিন্ডার পুন:পরীক্ষার স্টিকার লাগানো বাধ্যতামূলক করতে হবে। স্টিকার ছাড়া কোনো গাড়িতে গ্যাস দেওয়া হবে না, এ রকম নিয়ম থাকলে দুর্ঘটনায় মানুষকে প্রাণ দিতে হতো না। আমরা চাই, গ্যাসের ব্যবহার নিরাপদ করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।

দেশে প্রচলিত সিলিন্ডারগুলো আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন হলেও এর সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক নিম্নমানের যন্ত্রাংশ বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এসব নিম্নমানের যন্ত্রাংশের উৎপাদনকারী, সরবরাহকারী সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের আওতায় আনা দরকার।

অজ্ঞতাবশত কেউ যাতে সিলিন্ডার সংশ্লিষ্ট নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ক্রয় না করেন, এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো দরকার। বস্তুত সবার সচেতনতার সতর্কতা ও দায়িত্বশীলতাই পারে সিলিন্ডার গ্যাস দুর্ঘটনা রোধ করতে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS