ভিডিও

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা ও কিছু কথা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪, ০৭:৩৩ বিকাল
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪, ০৭:৩৩ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থা কোন পদ্ধতিতে চলবে তা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ নানা জল্পনা-কল্পনা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

সুদীর্ঘ দিন যাবৎ দেশে একটি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু ছিলো, সেখান থেকে সরে এসে নতুন একটি শিক্ষা পদ্ধতি চালু করা হলো, শিক্ষা ব্যবস্থার কারিকুলাম ও সিলেবাসে অনেক পরিবর্তন আনয়ন করা হলো, কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করলেন দেশে আন্তর্জাতিক মানের একটি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হবে, প্রথম প্রথম অনেক অভিভাবক মনে করলেন হয়তো বা হবে, অভিভাবকগণ আশায় বুক বাঁধলেন, কিন্তু দিন যতই যেতে লাগলো অভিভাবকগণ ততই হতাশার মধ্যে নিমজ্জিত হতে লাগলো, কারণ তারা শিক্ষা ব্যবস্থার বর্তমান কারিকুলাম এবং পদ্ধতি দেখে শুধু হতাশই নয় বরং রীতিমত শঙ্কিত যে তাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ এখন কোন পথে যাচ্ছে।

মাধ্যমিক পর্যন্ত কোন পাবলিক পরীক্ষা নাই, শুধুমাত্র এই বৎসর এবং আগামী বৎসর এসএসসি পরীক্ষা হবে, তারপরে একেবারে উচ্চ মাধ্যমিকে গিয়ে পরীক্ষা, মাঝে শিশু শ্রেণী থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত কোন পরীক্ষা নাই। কি কথা, সংস্কৃত একটি শ্লোক পড়েছিলাম, ছাত্র নমঃ তপ অধ্যয়নঃ, সেই অধ্যয়নেরই যদি প্রয়োজন না থাকে তাহলে কি ছাত্রদের আর ছাত্রত্ব থাকে ? হাইস্কুলে পড়ার সময় আমরা ক্লাশে বলতাম ছাত্রজীবন মধূর জীবন যদি না থাকে একজিমিনিশন। এখন দেখি সেই কথাই ঠিক হচ্ছে।

এক সময় গুরু মহাশয়ের বাড়ীতে থেকে ছাত্রদের শিক্ষা নিতে হতো, তখন ছাত্রদের গুরু মহাশয় অক্ষর জ্ঞান সহ সমস্ত কিছুই হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে থাকতো, প্রয়োজনবোধে গুরু মহাশয় ছাত্রদের কঠিন বেত্রাঘাত পর্যন্ত করতো। কবি কাজী কাদের নেওয়াজ এর শিক্ষা গুরুর মর্যাদা কবিতার কথা মনে পড়ে গেল, কবিতাটি এই রকম, বাদশা আলমগীর, কুমারে তাঁহার পড়াইত এক মৌলভী দিল্লীর। একদা প্রভাতে গিয়া, দেখেন বাদশা- শাহাজাদা এক পাত্র হস্তে নিয়া, ঢালিতেছে বারি গুরুর চরণে, পুলকিত হুদে আনত নয়নে, শিক্ষক শুধু নিজ হাত দিয়া নিজেরি পায়ের ধূলি, ধুয়ে মুছে সব করিতেছেন সাফ সঞ্চারি অঙ্গুলি, শিক্ষক মৌলভী, ভাবিলেন আজি নিস্তার নাহি, যায় বুঝি তার সবি।

দিল্লীপতির পুত্রের করে, লইয়াছে জল চরণের পরে, স্পর্ধার কাজ হেন অপরাধ কে করেছে কোন কালে। ভাবিতে ভাবিতে চিন্তার রেখা দেখা দিল তার ভালে, হঠাৎ কি ভাবি উঠি কহিলেন, আমি ভয় করি না’ক, যায় যাবে শির টুটি, শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার দিল্লীর পতি সে তো কোন ছার, ভয় করি না’ক, ধারি না’ক ধার, মনে আছে মোর বল, বাদশাহ শুধালে শাস্ত্রের কথা শুনাব অনর্গল। যায় যাবে প্রাণ তাহে, প্রানের চেয়ে যে মান বড়, আমি বুঝাবো শাহেনশাহে ইত্যাদি।

ওই কবিতা থেকে জানা যায় সে সময়ে শিক্ষকের কি মান-মর্যাদা ছিলো এবং ফকির বাদশার পড়াশোনার যে কোন ভেদাভেদ ছিলো না তা অনায়াসেই বোঝা যায়। পরবর্তীতে শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের জন্যে বিদ্যাপীঠ তথা স্কুল-কলেজ করা হলো। ছাত্রদের গুরু মহাশয়ের বাড়ী থেকে এনে বিদ্যাপীঠে ভর্ত্তি করা হলো। গুরু মহাশয়ের হাত থেকে এক সময় বেত কেড়ে নেওয়া হলো, এখনতো কোন ছাত্রকে বেত্রাঘাত দূরের কথা চোখ রাঙ্গান পর্যন্ত যাবে না, চোখ রাঙ্গালে খবর আছে। অনেকে বলে থাকেন যেদিন থেকে পন্ডিত মহাশয়ের হাত হতে বেত কেড়ে নেওয়া হলো সে দিন থেকে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্বংসের বীজ বপন করা শুরু হলো।

যে শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের দেশে চালু ছিলো সেই শিক্ষা ব্যবস্থায় পড়াশোনা করে আমাদের দেশে বহু প্রথিতযশা কবি- সাহিত্যিক, জ্ঞানী-গুণি, বিজ্ঞানী, জ্ঞানতাপস জন্ম নিয়ে দেশের সেবা করছে এবং যতদিন তাঁরা বেঁচে থাকবেন ততদিন তাঁরা দেশের সেবা করে যাবেন অথচ সেই সিষ্টেম আমাদের ভালো লাগলো না। আসলে সিষ্টেমের কোন দোষ নেই, সিষ্টেমটা আমরা কিভাবে প্রয়োগ করবো তার উপর নির্ভর করবে কাজের ফলাফল।

অবিভক্ত ভারতের এক সময়ের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন মৌলনা আবুল কালাম আজাদ, তার শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন একাডেমিক সনদ ছিলো না বলে জানা যায় অথচ ভারতবর্ষের মতো একটি বৃহৎ দেশের সাকসেসফুল একজন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন এই মৌলনা আবুল কালাম আজাদ। আসলে প্রমথ চৌধুরীর কথাই ঠিক, স্বাস্থ্য নয় ব্যাধিই সংক্রামক। ঘাটাঘাটি করে যেটুকু জানতে পারলাম তাতে দেখলাম বিশ্বের মধ্যে ফিনল্যান্ড এবং জাপানে কিছু বয়স পর্যন্ত ছাত্রদের পরীক্ষা নাই, হায় আল্লাহ কোথায় আইয়ুব খান আর কোথায় সিঙ্গেল পান।

জাপান এবং ফিনল্যান্ডের অর্থনৈতিক, সামাজিক, অবকাঠামোগত সহ অন্যান্য অবস্থা আর আমাদের দেশের অবস্থা আকাশ-পাতাল। তাদের দেশের ছেলেমেয়েদের যেভাবে ল্যাবে হাতে কলমে শিক্ষা দেওয়া হয় সেই ফ্যাসালিটিজ আমাদের তৈয়ার করতে যে বাজেটের দরকার তা আমাদের আসলেই নাই সুতরাং আগে সেই সকল সুযোগ-সুবিধা তৈয়ার করে পরে ঐ সিষ্টেমে গেলে কাহারো কোন অভিযোগ থাকতো না, কথায় আছে না আগে পিঠে ধরো পরে ঘোড়ায় চড়ো, আগে যোগ্যতা অর্জন করো পরে কাজে নেমে পড়ো।

কেউ স্বীকার করুক আর না করুক স্বাধীনতার ৫০ বৎসর পেরিয়ে যাওয়ার পরও আমরা একটি মানসম্মত পাঠ্যপুস্তক আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে দিতে পারি নাই এটা আমাদের ব্যর্থতা। এমন কোন অভিভাবক নাই যিনি এই অবস্থায় তার সন্তানকে নিয়ে চিন্তিত নয়,তাই সময় নষ্ট না করে আমরা দল-মত নির্বিশেষে সকলে মিলে সঠিকভাবে  পাঠ্যপুস্তক সাজিয়ে আমাদের সন্তানদের সামনে দেই, যাতে তারা শিক্ষাক্ষেত্রে বিশ^মঞ্চের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকে পারে।


লেখক : সাবেক সাধারণ সম্পাদক
বগুড়া জেলা এ্যাডভোকেটস্ বার সমিতি

01711-197719



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS