দেশে প্রয়োজনের তুলনায় বনভূমি অনেক কম। এর মধ্যেও বনখেকোদের হাত থেকে বনকে বাঁচানো যাচ্ছে না। অর্থ লিপ্সার কারণে অক্সিজেনের জোগান দেওয়ার গাছ নির্বিচারে নিধন চলছেই। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য একটি দেশে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে বনভূমির সঠিক পরিসংখ্যানের অভাব রয়েছে। পত্র-পত্রিকার খবর অনুযায়ী, এর পরিমাণ শতাংশের নিচে।
কোনো কোনো সূত্রের দাবি, বাংলাদেশে এখন বনভূমির পরিমাণ ৫ শতাংশের নিচে নেমেছে এবং দ্রুত তা কমছে। জনগণের কাছে দায়বদ্ধ বা জনগণের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা ভাবনাকারী দেশগুলো তাই বনভূমি রক্ষার কাজটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। বৃক্ষ ও মানুষ একে অপরের পরিপূরক।
বায়ু মন্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইড ও অক্সিজেনের ভারসাম্য রক্ষায় যে পরিমাণ গাছপালা থাকা দরকার তা না থাকার কারণে বায়ু মন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জানা যায়, ১৯৫০ সালের দিকে বায়ু মন্ডলে নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ছিল ২০০ কোটি মেট্রিক টন। কিন্তু বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০০ কোটি মেট্রিক টন। ফলে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে।
আবহাওয়া এবং জলবায়ু সহ প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বনায়নের গুরুত্ব অপরিসীম। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি ও খরা প্রতিরোধে বৃক্ষের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বৃক্ষের অবদান অপরিসীম।
বৃক্ষ ছাড়া আমাদের পৃথিবীতে বসবাস চিন্তা করা যায় না। পৃথিবীতে মানুষের খাদ্য, ওষুধ, বস্ত্র, ঘরবাড়ি তৈরি, মাটির ক্ষয়রোধ, আবহাওয়া ও জলবায়ু সঠিক রাখা, পরিষ্কার পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা, কৃষি জমির উৎপাদন বৃদ্ধি করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ সাধন ও বেকারত্ব দূর করার ক্ষেত্রে বৃক্ষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শুধু সংরক্ষিত বনাঞ্চলেই নয়, বরং সারা দেশেই চলছে গাছকাটার মহোৎসব। সুন্দরবন থেকে শুরু করে প্রায় সর্বত্রই চলছে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন। সুন্দরবনে দশ-বিশ বছর আগেও যে পরিমাণ বৃক্ষ ছিল, তার অনেকটাই ফাঁকা হয়ে এসেছে বনদস্যুদের হাতে পড়ে। সিডর-আইলায়ও এ বনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। সিলেটে বিশেষ করে সুবিস্তৃত চা-বাগানগুলোতে এক সময় অসংখ্য রেইনট্রি ও ছায়াবৃক্ষ ছিল।
এর সংখ্যা এখন অনেক কমে গেছে। কাঠ দুষ্প্রাপ্য ও দুর্মূল্য হওয়ায় আজকাল রড-আয়রণ ও প্লাস্টিকের আসবাব দিয়ে পূরণ করতে হচ্ছে প্রয়োজন। ঘর-দুয়ারের খুঁটি-দরজায় কাঠের পরিবর্তে দিতে হচ্ছে সিমেন্টের পিলার, প্লাষ্টিক বা টিনের দরজা। এর পাশাপাশি বন ধ্বংসের অনিবার্য ফল পরিবেশ বিপর্যয় তো আছেই। সত্য বটে, গত ক’বছরে বৃক্ষ রোপণে জনসচেতনতা বেড়েছে। তবে তার তুলনায় গাছ কাটা হচ্ছে অনেক বেশি।
আমরা অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। ক্রমেই উন্নত দেশ হওয়ার চেষ্টা করছি। ২০৪০ সালে যদি আমরা উন্নত দেশ হই, তখন কী আমরা দেশে কোনো বনভূমি দেখতে পাব? বনভূমিহীন সেই দেশে মানুষ সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে পারবে? মানুষ কি শ্বাস নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাবে? পৃথিবীর অনেক দেশে, অনেক শহরে আজ এই সংকট প্রবল।
বনের গাছ কেটে ফেললে সেটিও জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। কারণ গাছ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং বিপুল পরিমাণে বন উজাড় হলে বায়ু ক্ষতিকর এই গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যায়। অর্থাৎ বন ধ্বংস করে মানুষ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির পথ আরও উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। ব্যাপক শিল্পায়নের শুরু থেকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার দ্রুত বেড়েছে, পৃথিবীর বায়ু মন্ডলে বেড়েছে কার্বন গ্যাসের ঘনত্ব।
আর এর প্রভাবে বাড়ছে বিশ্বের তাপমাত্রা বা বদলে দিচ্ছে জলবায়ু, ডেকে আনছে বিপর্যয়। জলবায়ু পরিবর্তনের এই গতিকে আরও ত্বরান্বিত করছে বৃক্ষ নিধন। মানুষ কি শ্বাস নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাবে? পৃথিবীর অনেক দেশে, অনেক শহরে আজ এই সংকট প্রবল। সেই সংকটে পড়ার আগেই আমাদের বন ধ্বংস রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।