আবারও গ্যাসের চুলা বা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। যাদের এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা, তারা রয়েছে চরম উদাসীন। এক দুর্ঘটনার রেশ না কাটতেই আরেক দুর্ঘটনা এসে হাজির হয়। আমরা বেদনাগ্রস্ত ও হতাশ হই। এটাই দেশের বাস্তবতা। বাংলাদেশের মানুষের নিয়তি। অন্যান্য দুর্ঘটনার পাশাপাশি ইদানিং গ্যাস ও গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বাড়ছে।
রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে আগুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৪০ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে এবং পরিবারের কাছে ৩৮টি লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে ঢাকা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে মোস্তফা আব্দুল্লাহ আল নুর (এনডিসি, ঢাকা) এ তথ্য নিশ্চিত করেন। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০মিনিটের দিকে বেইলি রোডের ওই ভবনের নিচের অংশে আগুন লাগে।
খবর পেয়ে পর্যায়ক্রমে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেন। রাত ১১টা ৫০মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ২২ জনের অবস্থা আশংকাজনক। এ ছাড়া ৭৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
রাজধানীর বেইলি রোডের বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণকারীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন ও তাদের শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
ভয়াবহ এই আগুনের ঘটনায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ৩৮ জনের মরদেহ এরই মধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত মরদেহ গুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশের নিউ মার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার রেফাতুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, পরিবারের সদস্যদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়না তদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানান, দুর্ঘটনা কবলিত বহুতল ভবনটির শুধু দ্বিতীয় তলায় একটি কাপড়ের দোকান ছাড়া সব তলায় রেস্টুরেন্ট ছিল এবং তাদের ধারণা চুলা বা গ্যাস সিলিন্ডার থেকে এ আগুনের সূত্রপাত হয়। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন বলেছেন, নিচতলায় একটি ছোট দোকান ছিল, সেখান থেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়েছে।
সেখান থেকে আগুন বিস্ফোরণ হয়েছে। সেখান থেকে আগুন ছড়িয়েছে। এখানে অধিকাংশ যেহেতু রেস্টুরেন্ট ছিল, সেহেতু অনেক গ্যাস সিলিন্ডারও ছিল, সেগুলোতেই আগুন ছড়িয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্তলাল সেন বলেছেন, বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে অধিকাংশরাই কার্বন মনোঅক্সাইড পয়জনে মারা গেছেন।
আগুন লাগলে বদ্ধ ঘরে যখন কেউ বের হতে না পারে তখন সেখানে সৃষ্ট ধোঁয়া তাদের শ্বাসনালীতে চলে যায়। এখানেও প্রত্যেকেরই তাই হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এই পয়জন যাদের বেশি হয়েছে তারা কেউ বাঁচতে পারে নাই। অত্যন্ত দু:খজনকভাবে তারা মারা গেছেন। এখনো যারা চিকিৎসাধীন আছেন তারা কেউ শঙ্কামুক্ত না।
এ ক্ষেত্রে সরকারকে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস লাইন, এসি, গ্যাস সিলিন্ডারসহ দুর্ঘটনা প্রবণ সব বিষয়ে মনোযোগ বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ দুর্ঘটনা রোধে ব্যক্তি সচেতনতা বাড়ানো সহ এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের গভীর ভাবে মনোযোগ দিতে হবে। সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগই কেবল পারে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি সচেতনতাও জরুরি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।