মোঃ গোলাম মোস্তফা
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারা ফুলের মত কমল, নিরপরাধ, তারা নিষ্পাপ। এই শিশুরাই বাবা-মা এর বুকের ধন, বাবা মা এই শিশুদের সুন্দর মানুষ করে গড়ে তোলার জন্য সর্বান্তকরণে চেষ্টা করেন। শিশুদের শৈশবকাল হলো সোনালী সময়, এ সময় বাবা মা পরিবার কিংবা সমাজ থেকে তারা যা শিখে বড় হয়ে সেটায় ধরে রাখে।
একটা সময় ছিল এসব শিশুরা ছোটকাল থেকেই বড়দের সম্মান করা, সালাম দেওয়া, আচার আচরণ, নীতি নৈতিকতা শিখত। ছেলেরা বাবার কাজে সহযোগিতা করতো, মেয়েরা মায়ের সাথে রান্না করত, ফিতা কিংবা দড়ি দিয়ে বই খাতা বেঁধে নিয়ে হেঁটে হেঁটে স্কুলে যেত। একটু সময় পেলেই দল বেঁধে খেলাধূলায় মেতে উঠত। দুপুরের প্রখর রোদ্রে কিংবা বৃষ্টির মধ্যেও তারা খেলায় মেতে থাকত।
মায়ের বকুনি খেয়েও তাদের খেলা থামত না। এসবে তাদের শারীরিক ব্যায়াম হতো, দলবদ্ধ জ্ঞান বৃদ্ধি পেত, নেতৃত্বের গুণাবলী সৃষ্টি হতো তাদের মাঝে। এখন তারা খেলাধূলার পরিবর্তে সময় ব্যয় করে মোবাইলে। স্কুল থেকে ফিরেই তারা মোবাইলে গেম খেলতে শুরু করে। কেউ টিকটক, কার্টুন, মুভি অথবা নাটকে মনোনিবেশ করে।
এখনকার অধিকাংশ পরিবার তার অবুঝ শিশুকে মোবাইল হাতে দিয়ে কার্টুন কিংবা নাটক দেখতে দিয়ে শান্ত করে রাখে। অনেক শিশুকে মোবাইলে ব্যস্ত রেখে তার মা মুখে খাবার তুলে দেন। এসব শিশু দিন দিন শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। ঘরবন্দী জীবন-যাপনের কবলে পড়ে তারা বাইরের আলো বাতাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ফলে ভিটামিনের অভাবে তারা মাথা ব্যথায় ভোগে। সারাক্ষণ মোবাইলে চোখ রাখার কারণে চোখের জ্যোতি কমে যাচ্ছে। ডাক্তারের কাছে গেলে অল্প বয়সেই তাদের চশমা ব্যবহার করতে হচ্ছে। বাড়ির বাইরে খেলাধূলা না করার কারণে তাদের মধ্যে সামাজিকতা গড়ে উঠছে না, শারীরিক ব্যায়াম হচ্ছে না। ফলে সমাজে চলতে ফিরতে তাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
গোটা জাতির জন্য এটা বড় চিন্তার কারণ। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি তাহলে দুর্বলভাবে গড়ে উঠবে? আর এমনটা ঘটার পিছনে পিতা মাতারাই কিন্তু অনেকটা দায়ী। সন্তান পাড়ার ছেলে-মেয়েদের সাথে মিশে নষ্ট হয়ে যাবে ভেবে খেলাধূলার জন্য বাড়ির বাইরে বের হতে দেয় না বাবা-মা।
এজন্য তাদরে বন্ধু বান্ধবদের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। মোবাইলের ভিতরেই তাদের জীবন গড়ে উঠে। এভাবে ঐ সন্তান একদিন মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ে। কেউবা টিকটকে আসক্ত হয়। পরবর্তীতে শত চেষ্টা করেও ওই সন্তানকে বাবা মা আর মোবাইল আসক্তি থেকে ফেরাতে পারে না। লেখাপড়া বাদ দিয়ে সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে। যে সময় তাদের খেলাধূলা করা, চঞ্চলা হরিণের মত ছুটাছুটি করার সময়। সেই সময় তারা ঘরের মধ্যে মোবাইলে পড়ে থাকে।
তাহলে এসব সন্তানদের ভবিষ্যৎ কি হবে? বর্তমানে বাবা মায়েরা এখন কিছুটা উপলব্ধি করতে পারলেও পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেউই। আগের দিনের শিশুরা পুকুরে গোসল করতে করতে সাঁতার শিখত। দলবেঁধে তারা পুকুরের এপার ওপার সাঁতার কাটত মহা আনন্দে। মেয়েরা বৌছি খেলত, ছেলেরা পুরাতন কাপড় দিয়ে বল তৈরি করে বাড়ির খুলিতে খেলায় মেতে উঠত।
এছাড়া হাডুডু খেলা, গাদল খেলা যেন কত আনন্দের ছিল। এসব আনন্দের মাঝেই ছিল অনেক উপকার। আজ কালকার ছেলে মেয়েদের অধিকাংশই সাঁতার জানে না, খেলাধূলা বোঝে না। তারা শুধু মোবাইলের মধ্যে পড়ে থেকে নানারূপ অসুখে ভোগে। এসব শিশুরা যখন কিশোর কিশোরী হয়ে উঠে তখন তারা আর মোবাইলের নেশা ছাড়তে পারে না।
বাবা মার কাছে বায়না ধরে এন্ড্রয়েড মোবাইল কিনে দেয়ার জন্য। শুরু হয় তাদের লেখাপড়ার ক্ষতিকারক মোবাইল যাত্রা। এখনকার স্কুল পর্যায়ের ছেলেমেয়েরা বই পুস্তকের সাথে মোবাইল রাখে। তারা পথ চলতে চলতে মোবাইল টিপেন, যেন তারা শিক্ষার জগৎ ছেড়ে ভিন্ন এক মোবাইল জগতের বাসিন্দা। শিশু কিশোরদের মোবাইল আসক্ত না করতে পিতা মাতাকেই সতর্ক হতে হবে।
বহু পিতা-মাতা এখন মোবাইল ছেড়ে দিয়ে লেখাপড়ায় মনোযোগ দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েও কোন লাভ করতে পারছেন না। মোবাইলে আসক্ত সন্তান এখন মোবাইল পাগল হয়ে বাবা মা’র কথায় গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ফলে নষ্ট হচ্ছে সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবন। যে বাবা-মা তার শিশু সন্তানের হাতে একদিন মোবাইল তুলে দিয়েছেন তারাই এখন সন্তান নিয়ে চিন্তিত হয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
01718-017885
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।