ভিডিও

এমন জটিল পদ্ধতি আর কোনো পেশায় নেই

মিজানুর রহমান রাঙ্গা

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৪, ০৫:৫৫ বিকাল
আপডেট: আগস্ট ১৪, ২০২৪, ০৫:৫৫ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

পেশাজীবন শুরু করতে আর কোন ক্ষেত্রেই এমন দেরি হয় না। এটি শুধু আইন পেশার জন্যই রয়ে গেছে। যা তাদের জড়িয়ে গেছে জীবনের নানা ক্ষেত্রে। সে কারণে গ্রাজুয়েশনের পর ইন্টার্নশীপ করেও শুধু তালিকা ভুক্তির জটিলতায় আটকে থাকছে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের পেশাজীবন। আইন বিষয়ে ডিগ্রী অর্জনের পর একজন সিনিয়রের অধীনে শিক্ষানবিশকাল অতিক্রম করতে হয় আইনজীবিদের।

সিনিয়রের মামলার নথি সংক্রান্ত চাক্ষুস কার্যক্রম দেখা, পরিচালনা ও সহায়তা ছাড়াও বিভিন্নভাবে চলে শিক্ষানবিশকাল। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের বিধিমালা অনুযায়ী পাঁচটি সিভিল ও পাঁচটি ক্রিমিনাল মামলা সিনিয়রের সাথে পরিচালনার বিবরণ দিতে হয় বার কাউন্সিল তালিকাভুক্তির দরখাস্তে। একজন আইনের ছাত্রকে ডিগ্রী অর্জনের পরও আইনজীবি তালিকাভুক্তির জন্য শিক্ষানবিশ থাকাকালীন বর্তমানে তিন ধাপের কঠিন পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পূর্ণাঙ্গ একজন তালিকাভুক্ত আইনজীবি হতে হয়।

প্রথমে এমসিকিউ (প্রিলি), লিখিত ও সর্বশেষ ভাইভায় উত্তীর্ণ হতে হয়। ১০০ মার্কের প্রিলিতে উত্তীর্ণ হলেও লিখিত ও ভাইভায় উপযোগি হতে না পারলে আবার অপেক্ষা করতে হয়। প্রতিবছর হাজার হাজার আইনের ছাত্র তাদের পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে বসে থাকলেও সময়মত তালিকাভুক্তির পরিক্ষা না নেওয়ায় ক্যারিয়ার শুরু করতে পারে না তারা। দিন দিন যেন পরিক্ষা জট বেড়ে যাচ্ছে।

প্রতিবছর দুইটি করে পরিক্ষা নেওয়ার বিধান থাকলেও দেখা যায়, বার কাউন্সিল কর্তৃক একবছর পর পর পরিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়। যা গড়িমসিতে মূলত দুই বছরই পার হয়। কঠিন পদ্ধতি আর তিন ধাপের পরিক্ষা পদ্ধতির কারণে প্রতি পরিক্ষায় সারাদেশে স্বল্প শতাংশও পাশ করতে পারে না। প্রতিবছর পাশ করা নতুন ছাত্র তো আছেই।

এতে করে নতুন পুরাতন মিলে বেড়েই চলছে শিক্ষানবিশ আইনজীবীর সংখ্যা। তালিকাভুক্তি না হওয়ায় শিক্ষানবিশ একজন আইনজীবীকে পারিবারিকভাবেও বেশ পিছিয়েই থাকতে হচ্ছে। কর্মজীবন শুরুটা দেরি হওয়ায় সাংসারিক জীবনেও পদার্পনে বাধা প্রাপ্ত হতে হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন আদালতে শিক্ষানবীশ এমন আইনজীবীর সংখ্যা বেড়েই চলছে।

একবার, দুইবার, এমনকি পাঁচ, সাতবার এই জটিল তিন ধাপের পরিক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে আজ আদালতের বারান্দায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন এমন অসংখ্য ভুক্তভোগি। কেউ প্রিলিতে কৃতকার্য হলেও লিখিততে আটকে যাচ্ছেন। আবার কেউ দুইটিতে ভাল করেও আটকে যাচ্ছেন ভাইভাতে। এলএলবি ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে মাস্টার্স পাশ করা মেধাবি ছাত্ররাও প্রিলি পরীক্ষায় শুধু কৌশলের কাছে হেরে গিয়ে আইনজীবী তালিকায় নাম লেখাতে সক্ষম হচ্ছেন না।

আইনের সব খুঁটিনাটি জেনেও তাদেরকে পড়ে থাকতে হচ্ছে তালিকাভুক্তির গ্যাড়াকলে। এত সবের মাঝে আবার পরিক্ষা সময়মত না নিয়ে দুই বছর অন্তরও খোঁজ খবর না থাকাটা বেশ বেদনাদায়ক তাদের কাছে। এসবের মাঝে অনেকেই যারা শিক্ষানবিশ সময়েই সংসার জীবন শুরু করছেন, তারা আছেন অনেকটা অথৈ এক সাগরের অজানা গন্তব্যে।

দ্রব্যমুল্যের এই উর্ধ্বগতির দোলাচালের সময়ে অনেক যন্ত্রণা নিয়ে এমনই ভাবে চলছে তাদের সংসার। খেয়ে না খেয়ে সময় পার করছেন তারা। দীর্ঘদিনেও তালিকাভুক্তি নামক সোনার হরিণ হাতে না পেয়ে উচ্চ শিক্ষিত হয়েও অনেক শিক্ষানবিশ বিভিন্ন বেসরকারি চাকুরি জুটিয়ে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করছে। তাদের একটি মাত্র বক্তব্য, তা হলো-পাশ ফেল পরের কথা। সময়মত পরিক্ষার সুযোগটা অন্তত হোক। বিধিমালা মোতাবেক  প্রতিবছরে দুইবার পরীক্ষা নিলে তালিকাভুক্তির এই অনাকাক্সিক্ষত জট কিছুটা হলেও কমে যেত বলে তাদের দাবি।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নিয়ন্ত্রিত আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষা ব্যবস্থার কারণে হাজার হাজার আইনের গ্র্যাজুয়েটদের আইনজীবী হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্নটা এই তালিকাভুক্তির গ্যাঁড়াকলে পড়ে শেষ হচ্ছে। আইনপেশা ছাড়া আর কোন বিশেষায়িত পেশায় এই “তালিকাভুক্তি পরিক্ষা” নামক পদ্ধতির কোন অস্তিত্ব নেই। আইন সাবজেক্টটাও কিন্তু এমবিবিএস, বিডিএস, ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মাসি ইত্যাদি বিষয়ের মতো একটি হাইলি স্পেশালাইজড ও প্রফেশনাল সাবজেক্ট।

একাডেমিক ডিগ্রী অর্জন শেষে বাংলাদেশে এমবিবিএস বা বিডিএস গ্র্যাজুয়েটরা কোন ‘তালিকাভুক্তি পরিক্ষা’ ব্যতিরেকেই বিএমডিসি এর অধীনে রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করে নিবন্ধিত হয়ে রেজিস্টার্ড ডাক্তার বা ডেন্টিস্ট হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। একইভাবে যারা ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্সের উপর ডিগ্রী অর্জন করেন, তাদের কোন ‘তালিকাভুক্তি পরিক্ষা’র সম্মুখীন হতে হয়না।

বাংলাদেশ ভেটেরিনারী কাউন্সিলে আবেদন করে ভেটেরিনারি প্র্যাকটিশনার হিসেবে নিবন্ধিত হয়ে পেশাজীবন শুরু করে। ফার্মাসি বিষয়ে ডিগ্রী ধারীরা একাডেমিক ডিগ্রি নিয়ে ফার্মাসিস্ট হিসেবে পেশা শুরু করেন। তাদেরও কোন ‘তালিকাভুক্তি পরিক্ষা’ দিতে হয়না। অথচ এলএলবি সহ আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জনের পর আইনজীবী তালিকাভুক্তির পরিক্ষা পদ্ধতি রয়ে গেছে।

পূর্বোক্ত সমন্ত পদ্ধতি বা নিয়মে ইন্টার্নশিপ তাদের একাডেমিক ডিগ্রীর শর্ত। পেশায় তালিকাভুক্তি পরিক্ষার শর্ত নয়। দেশের প্রেক্ষাপট পাল্টে যাওয়ায় শিক্ষানবিশ আইনজীবিদের মাঝে এখন সময়ের দাবি একটাই, তা হলো অন্যান্য পেশার ন্যায় করা হোক এটি। তালিকাভুক্তির অন্তরায়ের মাঝে আটকে না রেখে পেশাজীবন শুরুর জটিল পথ খুলে দেওয়া হোক।


লেখক: গণমাধ্যম কর্মী ও কলাম লেখক

mizan.ranga@gmail.com

01719-516652



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS