ভিডিও

গণহত্যার বিচার

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৪, ০৫:৪০ বিকাল
আপডেট: আগস্ট ১৭, ২০২৪, ০৫:৪০ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

সম্প্রতি জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন বলেছে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ৩২ শিশুসহ ৬ শতাধিক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গণহত্যার ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ যাদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচার করার উদ্যোগ নেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বুধবার সচিবালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপ কালে এ কথা বলেন। এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের তদন্ত সংস্থা।

সংস্থাটির উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মো: আতাউর রহমান এ কথা জানান। বৃহস্পতিবার মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি সহ আরও দুটি মামলা হয়। ছাত্র আন্দোলন চলাকালে চাকার শেরে বাংলা নগরে অটোরিকশা চালক সাহাবুদ্দিনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সহ ১১ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

গত ৫ জুলাই ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা পঞ্চম মামলা এটি। এর আগে মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) একটি হত্যা ও বুধবার (১৪ আগস্ট) দুটি ও বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) দুটি মামলা করা হয়। এ পাঁচ মামলার মধ্যে চারটি হত্যা এবং অন্যটি গুম-অপহরণের অভিযোগে করা হয়েছে।

আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ইসলাম সচিবালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, গণহত্যা এবং গুলি বর্ষণ এই সমস্ত ঘটনার জন্য কিছু মামলা হয়েছে আপনারা জানেন। রাজপথে থাকা বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন, জনগণের বিভিন্ন গোষ্ঠী দাবি করেছেন যে, এটাকে মানবতারোধী অপরাধ হিসেবে বিচার করার স্কোপ আছে কি না।

আমরা সেটা খতিয়ে দেখেছি। যে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট আছে, যেটা পরে ২০০৯ ও ২০১৩ সালে সংশোধন হয়েছে, সেই আইনে আমরা জুলাই গণহত্যা, জুলাই গণহত্যা বলতে আমরা আগষ্টের প্রথম পাঁচ দিনের গণহত্যা ও এটার জন্য দায়ী যে ব্যক্তিবর্গ আছেন, উনাদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উনাদের বিচারের জন্য আমরা ইতোমধ্যে একটা ছোট খাটো গবেষণার মত করেছি, করে ফেলেছি, এই আইনের অধীনে এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা, যারা আদেশ দিয়েছেন, বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাদের সকলকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব।’

স্মর্তব্য, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যৌক্তিক ও ন্যায় সঙ্গত আন্দোলনটি ছিল স¤পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও অরাজনৈতিক আন্দোলন। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্য, সিদ্ধান্ত এবং নির্দেশে, তার মন্ত্রীদের আরো বেআইনি কর্মকান্ড ও ইন্ধনে, তার পেটোয়া বাহিনী যথা আইন শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট নানা রাষ্ট্রীয় সংস্থা এবং সরকারি রাজনৈতিক সংগঠনগুলো সরাসরি নিরীহ নিরস্ত্র শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারী ছাত্র সমাজ ও জনগণের উপর বর্বর নারকীয় সশস্ত্র হামলার মধ্য দিয়ে সারা দেশের রাজপথকে রক্তে রঞ্জিত করা হয়েছে।

জেলে পোরা হয়েছে হাজার হাজার নিরপরাধ ছাত্র-জনতাকে। এই পাষন্ডদের তান্ডব থেকে নিস্তার পায়নি কোলের শিশুও। হেলিকপ্টার থেকে গুলি বর্ষণে বহুতল ভবনের ছাদ এবং ঘরের ভেতরেও শিশুসহ অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ছাত্র-জনতার উপর হত্যাযজ্ঞ চালাতে জাতিসংঘ শান্তি মিশন প্রদত্ত যানবাহন ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছে।

কারফিউ দিয়ে ব্লক রেইড দিয়ে দেশের জনগণের উপর বিজাতীয় শত্রুর মত লেলিয়ে আজ পুরো জাতিকে তাদের মুখোমুখি করানো হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ রক্ষা করেছেন- দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সহ দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী রাজপথে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার পাশে এসে দাঁড়ায়- তার  প্রেক্ষিতেই শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।

আমরা জানি, ক্ষমতা যে চিরস্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নয়, ক্ষমতায় থাকতে তারা এটা বোঝেননা। দুনিয়ার ইতিহাসে দেশে দেশে আমরা দেখতে পাই- স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা টিকতে পারে না। আজ না হয় কাল-জনগণ তাদের উৎখাত করবেই। ইতিহাসের এটাই নির্মম শিক্ষা যে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না, আর নেয় না বলেই পতন হলে এদের দেশ ছেড়ে পালাতে হয়।

এ শিক্ষার দিকে আগামী দিনের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। জনগণকে উপেক্ষা করে নয়-স্টিম রোলার চালিয়ে নয়-জনগণের হাতেই ক্ষমতা তুলে দিন। কেননা, জনগণই দেশের প্রকৃত মালিক, আমরা কেউ যেন এটা ভুলে না যাই।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS