ভিডিও

টিকিটের অভাবে যাওয়া হলো না মালয়েশিয়ায়

স্বপ্নভঙ্গ ৩১ হাজার কর্মীর

প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৪, ১০:১১ রাত
আপডেট: জুন ০১, ২০২৪, ১০:৩২ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশিয়াপ্রবাসী কর্মীদের কথা বিবেচনা করে ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এই বিশেষ ফ্লাইটে ২৭১ জন কর্মী মালয়েশিয়া গেলেও বাকি থাকবে আরও ৩১ হাজার ৪০৩ জন কর্মী।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকা ছাড়ে। বিমানের ব্যবস্থাপক জনসংযোগ মো. আল মাসুদ খান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ টা ১৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে একটি বিশেষ অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করে। ফ্লাইটে মোট ২৭১ জন যাত্রী পরিবহন করা হয়।’

এদিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী ভিসায় যাওয়ার সময়  শুক্রবার রাতেই শেষ হয়েছে। তাই ভিসা ও অনুমোদন পেলেও উড়োজাহাজের টিকিট না পাওয়ায় বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৩১ হাজার ৭০১ জন শ্রমিকের মালয়েশিয়ায় যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মালয়েশিয়ার গত মার্চের ঘোষণা অনুযায়ী, ৩১ মে অর্থাৎ শুক্রবারের পর আর কোনো নতুন বিদেশি শ্রমিক দেশটিতে ঢুকতে পারবেন না।

বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, গত ২১ মে পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ৮৩৪ জন কর্মীকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেয়। ২১ মের পর আর অনুমোদন দেওয়ার কথা না থাকলেও বিএমইটির তথ্য বলছে, মন্ত্রণালয় আরো এক হাজার ১১২ জন কর্মীকে দেশটিতে যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাঁচ লাখ ২৪ হাজার ৯৪৬ জন কর্মীকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশটিতে চার লাখ ৯১ হাজার ৭৪৫ জন কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছেন।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তথ্য বলছে, শুক্রবার বাংলাদেশ থেকে মাত্র এক হাজার ৫০০ জন কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পেরেছেন, সেই সঙ্গে শুক্রবার সন্ধ্যায় এই বিশেষ ফ্লাইটে ২৭১ জন কর্মী যাওয়ায় সংখ্যাটি ১ হাজার ৭৭১ জনে দাঁড়ায়। অর্থাৎ, অনুমোদনকৃত ৩১ হাজার ৪০৩ জন কর্মীর যাত্রা বাতিল হয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈকত চন্দ্র হালদার বলেন, আপাতত সময় বাড়ানোর কোন সুযোগ নেই। তবে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। আমরা মালয়েশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। শুক্রবার কর্মীরা পৌঁছানোর পর যারা বাকি থাকবেন তাদেরকে নিয়ে মন্ত্রণালয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, আরও ১৪টি দেশ একই সমস্যায় পড়েছে। আমরা আমাদের সিংহভাগ কর্মীদের পাঠাতে সক্ষম হয়েছি। সময় বাড়ানোর সুযোগ না থাকলেও আমরা এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি।

৭ লাখ টাকায়ও যেতে পারলেন না অর্ধশত কর্মী : আজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে  মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য কাক্সিক্ষত শ্রমবাজার। দেশটির সরকারের বেধে দেয়া শেষ সময়ে কুয়ালামলামপুরের ফ্লাইট ধরতে  শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমাবন্দরে হাজির হন অনুমোদন পাওয়া অন্তত সাড়ে ৩১ হাজার কর্মী। সরকার নির্ধারিত জনপ্রতি ব্যয় ৭৯ হাজার টাকা হলেও তাদের গুনতে হয়েছে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা।

বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হচ্ছে আজ শনিবার। দেশটির সরকারের পরবর্তী নির্দেশনার আগ পর্যন্ত সেখানে প্রবেশ পারবেন না কোনো কর্মী। তাই শুক্রবার শেষ দিনে শাহজালাল বিমানবন্দরে হাজার হাজার যাত্রীর ভিড়।

আবার শেষ সময়ে বিমানের টিকিটের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ৩০ হাজার টাকার ওয়ানওয়ে টিকিট কিনতে গুনতে হয়েছে ৯৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৮ হাজার টাকা। নিউ হ্যাভেন, এলিগেন্ট, আল ফারাহসহ বেশ কয়েকটি এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়েও কোনো টিকিট বা কাজের অনুমতিপত্র দিতে পারেননি তারা। বিমানবন্দরে অপেক্ষারত অন্তত অর্ধশত ভুক্তভোগী নিজেদের প্রতারিত হওয়ার কথা তুলে ধরেন সংবাদ মাধ্যমের কাছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা দিয়েও এজেন্সির প্রতারণা শিকার হয়েছেন তারা।

নাটোরের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে তিন দিন ধরে অপেক্ষা করছেন তিনি। শুক্রবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত উড়োজাহাজের টিকিট হাতে পাননি হাবিবুর। যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য সাড়ে ছয় লাখ টাকা জমা দিয়েছেন, তারাও এখন আর ফোন ধরছে না।

বিকেলে বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১-এর সামনে বসে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ফোনের অপেক্ষায় আছেন হাবিবুর। তিনি বলেন, জমি বন্ধক রেখে ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সাড়ে ছয় লাখ টাকা কোম্পানিকে দিয়েছেন। কোম্পানির লোকেরা মালয়েশিয়ায় পাঠাবেন বলে তিন দিন আগে তাঁকে বিমানবন্দরে নিয়ে এসেছেন। এখন আর তাঁরা ফোন ধরছেন না। তিনি কোম্পানির অফিসে লোক পাঠিয়েছিলেন, সেখান থেকে তাঁকে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে।

হাবিবুর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, ‘দেশে কৃষিকাজ করে কষ্ট করে সংসার চালাতাম। সংসারে একটু সচ্ছলতা আনতে ঋণ করে ও জমি বন্ধক রেখে বিদেশে যাওয়ার উদ্যোগ নিই। বিদেশে যেতে না পারলে কীভাবে সংসার চালাব, ঋণ পরিশোধ করব?’

শুধু হাবিবুর নয়, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেছেন। তাঁরা বলছেন, আজকের পর থেকে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া আর কোনো শ্রমিক নেবে না। আজকের মধ্যে যেতে না পারলে তাঁরা আর মালয়েশিয়ায় যেতে পারবেন না। অনেক টাকা খরচ করেছেন, এখন বিদেশে যেতে না পারলে দুর্ভোগের শেষ থাকবে না।

চক্র তৈরি করে কর্মী পাঠানোয় অনিয়মের ঘটনায় চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালে বাংলাদেশিদের জন্য আবার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলে। তখন আবারও চক্র গঠন করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে গত মার্চে মালয়েশিয়া জানায়, দেশটি আপাতত আর শ্রমিক নেবে না। যাঁরা অনুমোদন পেয়েছেন, ভিসা পেয়েছেন, তাঁদের ৩১ মের (শুক্রবার) মধ্যে মালয়েশিয়ায় ঢুকতে হবে।

কিন্তু এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে (রিক্রুটিং এজেন্সি) টাকা দেওয়া বহু মানুষ এখন বিপদে পড়েছেন। সময় আর হাতে না থাকায় উড়োজাহাজের টিকিট ছাড়াই তাঁরা এখন বিমানবন্দরে এসে ভিড় করেছেন।

এমন আরেকজন নরসিংদীর রুবেল মিয়া নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতে মালয়েশিয়ায় যেতে চান। এ জন্য আহাদ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ছয় লাখ টাকা দিয়েছেন তিনি। দুদিন ধরে ঢাকার বিমানবন্দরে আরেক ভাইয়ের সঙ্গে অপেক্ষা করছেন তিনি। রুবেল মিয়া বলেন, ‘এখনো উড়োজাহাজের টিকিট হাতে পাইনি। ফোন দিলে কোম্পানির লোকেরা বলছেন, তাঁরা ব্যবস্থা করবেন। তাঁদের কথায় বিশ্বাস করে দুই দিন ধরে এখানে অপেক্ষা করছি।’

হাবিব ও রুবেল ছাড়াও মালয়েশিয়ায় যেতে বিমানবন্দরে হাজির হওয়া আরও অন্তত ১০ জন যাত্রীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সময় বাড়াতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, পাঁচ থেকে সাত লাখ করে টাকা তাঁরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিয়েছেন। এখন যেতে না পারলে বিপদে পড়বেন। কোম্পানিগুলো তাঁদের দেওয়া টাকা ফেরত দেবে কি না, সেই সংশয়ও প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।

মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদের ভিড় সম্পর্কে জানতে চাইলে বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম বলেন, দুই দিন ধরে মালয়েশিয়াগামী অনেক যাত্রীর চাপ রয়েছে। বাড়তি এই চাপ সামলাতে নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি অতিরিক্ত ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS