ভিডিও

বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বলে কিছু আর নেই : রয়টার্সকে ইউনূস

বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বলে কিছু আর নেই : রয়টার্সকে ইউনূস

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২৪, ১২:৩২ রাত
আপডেট: জুন ১২, ২০২৪, ০৪:০৩ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

'ক্ষমতাসীন দল (আওয়ামী লীগ) সব ধরনের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা মুছে ফেলায় একদলীয় ও কর্তৃত্ববাদী সরকার শাসিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এমন প্রেক্ষাপটে দেশে সুষ্ঠু ও গঠনমূলক রাজনীতি বলে আর কিছু অবশিষ্ট নেই।’ গত সপ্তাহে রাজধানী ঢাকায় নিজের কার্যালয়ে বসে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।  

মঙ্গলবার (৯ জুন) ইউনূসের সেই সাক্ষাৎকার এবং তার বক্তব্যের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রয়টার্স। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু দেশের প্রধান বিরোধীদল ওই নির্বাচন বয়কট করে, যে দলের শীর্ষ নেতারা নির্বাচনের আগে থেকেই কারাবন্দি বা নির্বাসনে আছেন।

তার প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করার কৃতিত্ব দেয়া হয় ৮৩ বছর বয়সী ইউনূসকে। ২০০৭ সালে নিজের রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা প্রকাশের পর বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকারের তোপের মুখে পড়েন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িত বলে অভিযোগ করেন ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূস। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রকৃত রাজনৈতিক বিরোধীদের ঘাটতি রয়েছে।’

নিজের কার্যালয়ে বসে ইউনূস রয়টার্সকে বলেন, ‘বাংলাদেশে আর কোনো রাজনীতি অবশিষ্ট নেই। এখানে কেবল একটি দলই সক্রিয় এবং তারাই সবকিছুই দখল করেছে। তারা সবকিছু করছে, তাদের পথেই নির্বাচন করছে।’

তিনি বলেন, ‘তারা নিজেদের লোকদের বিভিন্ন রূপে নির্বাচিত করছে— উপযুক্ত প্রার্থী, ডামি প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থী। আর এসবই একই দলের।’

অবশ্য বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, তিনি ইউনূসের মন্তব্যের বিষয়ে পুরোপুরি একমত নন। টেলিফোনে রয়টার্সকে আনিসুল হক বলেন, ‘কেবল আমিই নই বরং দেশের জনগণও তার মতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করবে।’ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই মন্তব্যকে দেশের জনগণের জন্য ‘অপমানজনক’ বলে অভিহিত করেছেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই দেশে গণতন্ত্র পুরোপুরি সচল রয়েছে।’

ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল জিতেছিলেন অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২০১১ সালে নিজের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। সরকার বলেছে, অবসরের আইনি বয়সসীমা ৬০ বছর পেরিয়ে গেছেন ইউনূস।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে একদল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে। সেই সময় বিদেশে থাকায় বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করানোর কৃতিত্ব দেওয়া হয় শেখ হাসিনাকে। যদিও সমালোচকরা তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ভিন্নমত দমনের অভিযোগ করেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না। যুক্তরাজ্যের সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তরও নির্বাচনে ভোটারদের ‘‘ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার’’ নিন্দা জানিয়েছে।

ওই সময় প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচনকে জালিয়াতির নির্বাচন বলে নিন্দা জানায়। একই সঙ্গে নির্বাচন বাতিল, শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছিল বিএনপি। নির্বাচনের ঠিক আগে ঢাকার একটি আদালত শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ইউনূসকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন। তবে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউনূস।

যদিও সেই মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন এবং তাকে কারাগারে যেতে হয়নি। ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির আরও শতাধিক অভিযোগ রয়েছে। তবে এসব অভিযোগকে ‘‘একেবারে অযৌক্তিক, বানানো গল্প’’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।

নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে মিথ্যা বলে ইউনূস দাবি করলেও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ইউনূস দেশের সর্বোচ্চ আদালতে গেছেন, সেখানে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে আনিসুল হক বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট কর ফাঁকির এক মামলায় ইউনূসের বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার পর তিনি তা পরিশোধ করেছেন। অন্যান্য বিচারাধীন মামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি আইনমন্ত্রী।

ইউনূসের সমর্থকরা বলছেন, অতীতে ‘‘নাগরিক শক্তি’’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা করেছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যে কারণে বাংলাদেশের সরকার তাকে হয়রানি করছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালে ইউনূসের বিরুদ্ধে দরিদ্রদের ‘রক্ত চোষা’র অভিযোগ তুলে তার সমালোচনা করেছিলেন।

ইউনূস প্রশ্ন তুলে বলেন, একজন নাগরিকের রাজনৈতিক দল করার চেষ্টা করা কি অপরাধ? রাজনীতির জন্য উপযুক্ত নন বুঝতে পেরে মাত্র ১০ সপ্তাহ পর দল গঠনের চিন্তা-ভাবনা বাদ দেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

শান্তিতে এই নোবেলজয়ী বলেন, বাংলাদেশে প্রতিযোগিতামূলক রাজনৈতিক আবহ পুনরায় জাগিয়ে তোলা কঠিন হবে। রাজনীতিকে পনরুজ্জীবিত করাটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক হবে। কারণ আমরা এটাকে এমন এক জায়গায় নিয়ে এসেছি, যেখানে এটা পুরোপুরি হারিয়ে গেছে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS