গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগ দুঃখ প্রকাশ করে নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা ছাড়া শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করার নির্দেশ দিয়েছে।
আইন শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনী আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ নয় জানিয়ে বলা হয়, শনিবারের ঘটনাটি মুজিব আদর্শের সৈনিকদের’ সঙ্গে বেমানান।
রোববার দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জরুরি সভায় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জি এম সাহাব উদ্দিন আজম বলেন, “সেনাবাহিনী আমাদের প্রতিপক্ষ নয়। তাদেরকে কাজ করতে সহায়তা করতে হবে।”
জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ইলিয়াস হক এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “অঘটনের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমি তাদের (সেনাবাহিনী) কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি । ভবিষ্যতে এ রকম কোনো অঘটন ঘটলে তার দায় জেলা আওয়ামী লীগ নেবে না। আমরা তাকে দুষ্কৃতকারী হিসাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে তুলে দেব।”
রোববার গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বৈঠকে কর্মীদেরকে দিক নির্দেশনা দেন দলের জেলা শাখার নেতারা।
রোববার গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বৈঠকে কর্মীদেরকে দিক নির্দেশনা দেন দলের জেলা শাখার নেতারা।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর গোপালগঞ্জে টানা বিক্ষোভের মধ্যে শনিবার সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতে আগুন ও তাদের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে।
সদর উপজেলার গোপীনাথপুর বাসস্ট্যান্ডে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ হাজার হাজার সাধারণ মানুষ জড়ো হয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিক্ষোভকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে সেনা টহল দলের ওপর হামলা করে।
বিক্ষোভকারীরা তাদের ওপর ইট- পাটকেল ছুঁড়ে মারে এবং দেশীয় তৈরি অস্ত্র দিয়ে টহল দলের সদস্যদের আঘাত করে। এতে তিনজন অফিসার, একজন জুনিয়র কমিশন অফিসার ও পাঁচ সেনাসদস্য আহত হন।
বিক্ষোভকারীরা সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে বলে বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে, এ সময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সেনা টহল দল চার রাউন্ড অ্যামোনিশন ফায়ার করে।
এই ঘটনায় রাতে সেনাবাহিনীর বিশেষ দল গোপালগঞ্জে রওনা হয়েছে বলে রাতে সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী রাতে যশোরে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খানের সঙ্গে কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। বলা হয়, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কোনো কোনো বাধা নেই। তবে দেশি-বিদেশি কোনো অস্ত্র প্রদর্শন করার বিষয়ে সেনাবাহিনী আপত্তি জানায়।
সকালে মাহবুব আলী খানের সভাপতিত্বে জেলা আওয়ামী লীগের জরুরি সভায় মূল দলের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকেই গোপালগঞ্জে টানা বিক্ষোভ করছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন আজম বলেন, “এর পরে কোনো নেতা বা কর্মী যদি বিশৃঙ্খলা করে, তাহলে জেলা আওয়ামী লীগ তার দায় দায়িত্ব নেবে না।”
এদিকে শনিবার সেনাবাহিনীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া অস্ত্র এবং দুটি মোবাইল ফোন রোববার গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের ছোটফা খালিয়া গ্রামের এক বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় বলে দাবি করেছেন স্থানীয় দুই আওয়ামী লীগ নেতা।
তবে আইএসপিআর বা সেনাবাহিনীর তরফ থেকে অস্ত্র ছিনতাই বা তা উদ্ধারের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ইলিয়াস হক এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “গোপালগঞ্জের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে জেলা, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের সকল স্তরের নেতা কর্মীদের শান্তিপূর্ণ মিছিল-মিটিং করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মিছিল বা মিটিংয়ে কোনো দেশীয় অস্ত্র, লাঠি-সোঁটা প্রদর্শন করা যাবে না।”
শনিবার ঘটনাটিকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ উল্লেখ করে এতে বলা হয়, “এটি কোনোভাবে মুজিব আদর্শের সৈনিকদের কাছে আমাদের কাম্য নয়।
“মনে রাখবেন, রাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের শত্রু নয়। তাদের প্রতি কোনো প্রকার শক্তি প্রদর্শন করা যাবে না।”
ভারতে অবস্থানকারী শেখ হাসিনা ভালো আছেন জানিয়ে গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আমাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছে। তিনি শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন।
“কোনো রকম বিশৃঙ্খলা না করতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সকলের প্রতি অনুরোধ করেছেন।”
গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর দেশজুড়ে নৈরাজ্য ও হামলার মধ্যেও গোপালগঞ্জ ছিল শান্ত।
তবে শনিবার রাতে সেনা অভিযান চলতে পারে এমন আতঙ্ক ছিল মানুষের মধ্যে। তাই তাদের উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে আতঙ্কিত রাত কেটেছে।
তবে জেলায় কোনো অভিযান চালানো হয়নি। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবরও পাওয়া যায়নি।
জেলা শহরের অফিস, আদালত, ব্যাংক, আর্থিক, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল খোলা। সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক কাজ কর্ম করেছেন। শহরের অলি গলি ও হাট-বাজারে মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
সড়ক-মহাসড়ক দিয়ে অন্যান্য দিনের মতো যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করেছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।