ভিডিও

মাটির ও বাঁশের পণ্যের সমাহারে ফাতেমার শখের বাগান

প্রকাশিত: অক্টোবর ০৪, ২০২৪, ০৩:৪৪ দুপুর
আপডেট: অক্টোবর ০৪, ২০২৪, ০৯:৪৭ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

নিজের আলোয় ডেস্ক ঃ ফাতেমা বিনতে আলম যথেষ্ট শৌখিন একজন নারী। বাগান করা, ঘর সাজানো, রান্না করা এসব নিয়েই ছিল তার সাংসারিক ব্যস্ততা, যা সবাইকে খুব আকৃষ্ট করত। বাসায় অতিথিরা ঘরের নানা আসবাবপত্র দেখে প্রশংসার পাশাপাশি সেগুলো কোথা থেকে কীভাবে সংগ্রহ করেছেন- এসব নানা প্রশ্ন করতেন। একটা সময় এসে এ শৌখিনতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসার চিন্তা মাথায় আসে তার। সে ভাবনা থেকে তিনি শুরু করেন উদ্যোক্তা জীবন, নাম দেন ‘শখের বাগান’।

ফাতেমা এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চট্টগ্রাম কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। স্নাতকে থাকা অবস্থায় বান্দরবানের এক সফল ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সংসার সামলানোর পাশাপাশি তিনি স্নাতকোত্তরও সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি বান্দরবান থেকেই তার উদ্যোগ পরিচালনা করছেন।

উদ্যোক্তা হিসেবে পথচলার গল্প জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ২০১৭ সালে ঘরে বসে অফলাইনে শুরু করি আমার ব্যবসা। গ্রাহকদের চাহিদা দেখে পরিসর আরো বড় করি এবং ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের নানা পণ্য সংগ্রহ শুরু করি। পরে করোনা শুরু হলে সবার মতো আমার ব্যবসায় বেশ ভাটা পড়ে। তখন এক বান্ধবীর মাধ্যমে উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট (উই) গ্রুপের কথা জানতে পারি এবং সেখানে যুক্ত হই। সেখান থেকেই শুরু হয় আমার অনলাইন জগতের পদার্পণ এবং পুরোদমে অনলাইন-অফলাইন উভয় মাধ্যমে চলছে ব্যবসা।

তবে তিনি তার পণ্যগুলো নিজে তৈরি করেন না, বিভিন্ন কারিগরদের মাধ্যমে তৈরি করিয়ে নেন। এজন্য তিনি ব্যবসার ওপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এছাড়া ওয়ার্কশপ ও মাস্টার ক্লাসসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তথ্য ও প্রযুক্তিসহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

তার সিগনেচার পণ্য নকশা করা মাটির ডিনার সেট। এছাড়া পাহাড়ি এগ্রো প্রোডাক্ট, বাগানের টব, পার্শিয়ান বিড়াল রয়েছে। এর বাইরে তিনি রেস্টুরেন্টের ব্যবসাও করেন। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে ৩ লাখ টাকার বেশি আয় হয় তার। ফাতেমা বলেন, আমি খুচরা-পাইকারি দুভাবেই পণ্য বিক্রি করি। সেক্ষেত্রে প্রতি মাসে মাসে ২-৩ লাখ টাকার বেশি আয় হয়। কর্মচারীদের বেতন, কাঁচামালসহ সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে প্রায় ৭০ হাজার টাকা লাভ থাকে।
প্রথমে তিনি একাই সব কাজ করতেন। পরিসর বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মচারী রাখা শুরু করেন। এখন তার কর্মচারীর সংখ্যা ১৫ জন। তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করি। মৃৎশিল্পে পণ্যগুলো সরাসরি নিজস্ব কারিগরদের মাধ্যমে তৈরি করি। আর পাহাড়ি এগ্রো প্রোডাক্টগুলো সরাসরি আদিবাসী কৃষকদের থেকে সংগ্রহ করি। এজন্য সঠিক সময়ে গ্রাহকের কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়া অনেক চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়।

কাজ শুরু করতে গিয়ে অন্যদের মতো ফাতেমারও নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের সমাজ নারীর কাজ কখনোই সহজে মেনে নেয়নি। আমাকে অনলাইনসহ নানাভাবে বুলিং করা হয়েছে। তারপরও থেমে থাকিনি, সব বাধা পেরিয়ে নিজের উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়েছি। কারণ আমার পারিবার তথা স্বামী, মা, শশুর বাড়ির লোকজন যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। এজন্যই আমি সমান তালে সংসার ও ব্যবসা দুটিই চালাতে পারছি এবং সেগুলো বলতেও পারছি। তার কিছু সাধারণ ডিজাইন আছে। তবে কোনো গ্রাহক পছন্দমতো ডিজাইন দিলে সে অনুযায়ী তিনি পণ্য প্রস্তুত করে দেন। তবে উভয় ক্ষেত্রেই তিনি গ্রাহকদের পছন্দকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

তার প্রত্যেকটি পণ্য তৈরি থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে ৫-৭ দিন সময় লাগে। সময়সাপেক্ষ কাজ হলেও তিনি সবসময় মনের কথাকে গুরুত্ব দেন। যে কাজে শান্তি ও তৃপ্তি খুঁজে পান, সেটাই তিনি মনোযোগ দিয়ে করেন। এজন্য তিনি তার শৌখিনতা থেকে উদ্যোক্তা হতে পেরেছেন।

নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, উদ্যোক্তা হতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তি, মেধা, ধৈর্য ও শ্রম- এ চারটি জিনিস যার মধ্যে সর্বাধিক কাজ করবে, সে এক টাকাকে ১ লাখে পরিণত করতে সক্ষম হবে। তাই কেউ উদ্যোক্তা হতে চাইলে তাকে অবশ্যই সঠিক পরিকল্পনার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। সঠিক দিকনির্দেশনা ধৈর্য সহকারে মেনে চলতে হবে। কারণ সফলতা এক দিনে আসে না। তিনি আরো বলেন, সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে উদ্যোগ পরিচালনা করলে মূলধন বা পুঁজি কোনো সমস্যা না। মাত্র ১০ হাজার টাকা দিয়েই শুরু করা যেতে পারে। স্থান, সময়, পণ্য বিবেচনা ও ধরনের ওপর মূলধন কমবেশি হতে পারে। তবে সফলতার জন্য সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে, ধৈর্য, মেধা ছাড়াও যথাযথ প্রশিক্ষণ জরুরি।

প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে এ নারী উদ্যোক্তা বলেন, শেখার কোনো শেষ নেই। আমি অনেক প্রশিক্ষণ নিয়েছি, অনেকগুলো ওয়ার্কশপ-মাস্টারক্লাস করেছি। এখনো সুযোগ পেলেই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। অল্প পুঁজিতে পণ্যের সর্বোচ্চ মার্কেটিং করা শিখতে হবে, দেশের পাশাপাশি বিশ্ববাজারে নিজের তৈরি পণ্য কীভাবে উপস্থাপন করা যায়, সেটা শিখতে হবে। বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, সেগুলোর সুযোগ নিতে হবে। এতে করে নিজের পাশাপাশি আরো পাঁচজনের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে এবং পারিবারিক ও সামাজিকভাবে দারিদ্র্যবিমোচন হবে।

উদ্যোক্তাদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভূমিকা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবার জন্য শুরুতে অফলাইন ব্যবসা সম্ভব হয় না। কিন্তু যে কেউ সহজে ফেসবুকে পেজ খুলে তার উদ্যোগ শুরু করতে পারে। সেখানে পণ্য প্রদর্শনী ও নিয়মিত পোস্টের মাধ্যমে পেজ সক্রিয় রাখলে খুব দ্রুত ও সহজে মার্কেটিং হয়ে যায়। এজন্য আমি মনে করি, একজন ছোট ও নতুন উদ্যোক্তার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আশীর্বাদস্বরূপ।

বর্তমানে তার তিনটি ব্যবসা চালু আছে। এরই মধ্যে ১৫ জনকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। ভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরো বাড়াতে চানা এ উদ্যোক্তা।

 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS