মালয়েশিয়া সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সে দেশে যেতে পারেননি ৩০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক। এ পরিস্থিতির জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী।
ভোগান্তিতে পড়াদের পাশে সরকার আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সময় বাড়ানোর জন্য মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে প্রবাসী মন্ত্রণালয়।’
আজ শনিবার (১ জুন) দুপুরে সিলেট নগরের ঐতিহ্যবাহী আলিমা মাদরাসা পরিদর্শন করেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী।
আটকে পড়া শ্রমিকদের বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের যে সমঝোতা হয়েছিল তা একটা কোটারভিত্তিতে। আমাদের যে কোটা ছিল সেটি পূরণ করতে আমাদের মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছিল এবং যে সব রিক্রুটিং এজেন্ট আছে তাদের সঙ্গেও আমরা বসেছি।
রিক্রুটিং এজেন্টদের সংগঠন বায়রার সঙ্গে বারবার বসেছি, আলোচনা করেছি। গত মাসের (মে মাসের) ১৫ তারিখে তাদের সঙ্গে সর্বশেষ সভা করে তাদের আমি বলেছিলাম, চূড়ান্ত তালিকা করার জন্য। কতজন বাকি রয়েছে, কিভাবে যাবে-না যাবে, ভিসার জন্য কত জন বাকি-এসবের তালিকা জমা দিতে বলেছি। কিন্তু তারা তালিকা দিতে পারেনি।
একেবারে শেষ মুহূর্তে বায়রার পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একেবারে শেষ মুহূর্তে তারা আমাদের মন্ত্রণালয়কে বলেছে-আমাদের কর্মীরা রেডি, কিন্তু আমরা ফ্লাইট পাচ্ছি না। এরপর বিমানমন্ত্রী, বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবেও যোগাযোগ করি, কথা বলি। যে কারণে বিশেষ ২২টি ফ্লাইট দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও শেষ হয়নি।
দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই যে মানুষ ভোগান্তির শিকার হয়েছেন, এই ভোগান্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য যারা দায়ী তাদের ব্যাপারে আমরা তদন্ত কমিটি করব। তদন্তে যারা দোষী সাব্যস্ত হবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মালয়েশিয়া যেতে অনেকে জায়গা জমি বিক্রি করে যেতে না পেরে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। তাদের জন্য কি করা হবে প্রশ্নে শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে ৭৮ হাজার ৯০০ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা হয়েছিল। বেসরকারিভাবে কে কত টাকা দিয়েছেন সেটা আমাদের জানা নেই। তারপরও যারা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন তাদের বিষয়ে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। তারা দরখাস্ত করলে আমরা যে বা যারা দায়ী তাদের দোষী সাব্যস্ত হলে আমরা ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।’
মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার বন্ধ হয়ে যাবে সেটি আগে থেকে জেনেও রিনিউর কোনো চেষ্টা না করে এরকম পরিস্থিতিতে নতুন তিনটি দেশের শ্রম বাজারের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি করা প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘সারা বিশে^র ১৭৬টি দেশে আমাদের শ্রম বাজার রয়েছে। সেসব দেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। এসব দেশে শুধু অদক্ষ শ্রমিকরাই নন, দক্ষ, আধা দক্ষ, পেশাদার, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, নার্স প্রত্যেক স্তরের মানুষ যাচ্ছে। এবং আমরা পাঠাতে সক্ষম হচ্ছি। যোগ্যতা অনুসারে যে দেশের যে চাহিদা সে অনুযায়ী প্রেরণ করতে সক্ষম হয়েছি।
মালয়েশিয়ার সঙ্গে কথা বলে মেয়াদ বাড়ানোর কোনো পদক্ষেপ আছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়ার সরকারের কাছে আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়েছি সময় বাড়ানোর জন্য। এখনো কোনো উত্তর পাইনি। আমাদের অ্যাম্বেসি ও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। উত্তর পেলে আমরা নিশ্চয়ই ব্যবস্থাগ্রহণ করব।’
তিনি আরো বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে আমরা আছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক আমরা কাজ করে যাচ্ছি, ইনশাল্লাহ সব সমস্যার সমাধান হবে।’
এর আগে নগরের আলিয়া মাদ্রাসা পরিদর্শন শেষে মতবিনিময় সভায় যোগ দেন প্রতিমন্ত্রী। সভায় মাদরাসার অধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে এতে অংশ নেন সিলেট-৫ আসনের সংসদ সদস্য হুছামুদ্দিন চৌধুরী, সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান ও মাদরাসার বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।