বাংলাদেশ ও ভারতের রেল ট্রানজিট চুক্তির মধ্যে দিয়ে ট্রান্স এশিয়ান নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে দেশের রেলওয়ে। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের রেলপথ ব্যবহার করে ভারত নিজেদের ভূখণ্ডে যেতে পারবে।
আর বাংলাদেশ রেলওয়ে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে যেতে পারবে নেপাল-ভুটানে। প্রস্তাবিত চুক্তিতে ১২টি রুটের কথা বলা হয়েছে, যেসব রুট ব্যবহার করে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ‘সেভেন সিস্টার্স’খ্যাত সাত রাজ্যে যোগাযোগ সহজ হবে। এক্ষেত্রে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল-ভুটানে যেতে পারা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। বুধবার (২৬ জুন) ধোঁয়াশা দূর করেছেন রেলপথ সচিব হুমায়ুন কবির ও বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী।
গনমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দুজনে জানিয়েছেন, নতুন সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্যে উন্মুক্ত হচ্ছে ভারতীয় রেলপথ দিয়ে নেপাল-ভুটান প্রবেশের দ্বার।
বাংলাদেশের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তি করেছিল। কিন্তু ভারতের ভূ-খণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের মালবাহী গাড়ি চলাচল করতে না পারায় সেটি খুব একটা কার্যকর হয়নি। এখন ভারতের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার কারণে নতুন করে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে পূর্বে হওয়া কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা জেগেছে।
চলতি মাসের ২২ জুন দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১৩টি ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার এক নম্বর রয়েছে রাজশাহী ও কলকাতার মধ্যে নতুন ট্রেন সার্ভিস চালুকরণ, ভারতীয় রেল করিডোর নিয়ে নয়া চুক্তি।
এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৭৭ বছর পর রাজশাহী ও কলকাতার মধ্যে পুনরায় ট্রেন সার্ভিস চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়। যেটি হবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলাচলকারী চতুর্থ আন্তঃদেশীয় ট্রেন।
এছাড়া এই চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে ভারতের কলকাতা থেকে ‘সেভেন সিস্টার্স’-খ্যাত সাত রাজ্যের ১২টি রুটে পণ্য ও যাত্রী চলাচলের সুবিধা।
এ বিষয়ে ভারতীয় রেলওয়ের বক্তব্য নিয়ে বিস্তারিত নিউজ করেছে ভারতীয় প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য টেলিগ্রাফ। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন পরিকল্পনার আওতায় মোট এক হাজার ২৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথের ১৪টি সেকশন থাকবে। এর মধ্যে বাংলাদেশের ভেতরে থাকবে ৮৬১ কিলোমিটার। আর নেপালে ২০২ কিলোমিটার ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে থাকবে ২১২ কিলোমিটার পথ।
পত্রিকাটি বলছে, বাংলাদেশ সরকার দেশের ভেতরে ভারতকে রেলপথ স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় নয়াদিল্লির পরিকল্পনা সহজ হয়েছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে মোট ৮৬১ কিলোমিটার, নেপালে ২০২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার এবং উত্তরবঙ্গ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জরিপ চালানো হবে।
ভারতের সঙ্গে এই চুক্তির ফলে ভারতের মাটি ব্যবহার করে বাংলাদেশ রেলওয়ে নেপালেও পণ্য ও যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।
প্রস্তাব অনুসারে, ভারত ও নেপালের মধ্যে রেল সংযোগের জন্য অনুমোদিত রুট বিরাটনগর–নিউ মাল জং সেকশনে ১৯০ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণের প্রয়োজন হবে৷ আর গালগালিয়া-ভদ্রপুর-কাজলী বাজার সেকশনে সাড়ে ১২ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণের প্রয়োজন হবে।
অন্যদিকে ভুটানে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের রেলপথ ব্যবহার করে দেশটির সীমান্তবর্তী হাসিমারা স্টেশন যাওয়া যাবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।