শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তার একাত্মতা
নিউজ ডেস্ক: শিক্ষক, আইনজীবী এবং সংস্কৃতি কর্মীদের পর এবার সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা। চলমান সহিংসতার প্রতিবাদস্বরূপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।
নজরুল ইসলাম নামে ওই কর্মকর্তা জানান, রাষ্ট্রের মালিক যদি জয়লাভ করে, তাহলে হয়ত আমি আবার রাষ্ট্রের মালিকের সেবা করতে ফিরে যাব। আর এই খুনি, ব্যাংক লুটেরা, দুর্নীতিবাজ, সরকার যদি টিকে যায় তবে আমি হয়ত চাকরিতে ফিরব না।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নজরুল ইসলাম নিজেই। তিনি জানান, ‘বুঝে শুনে সজ্ঞানেই আমি এই স্ট্যাটাস দিয়েছি।’
ওই কর্মকর্তার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে দেওয়া হলো-
‘‘প্রিয় বন্ধুগণ, আস সালামু আলাইকুম।
আপনাদের সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমি মো. নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি। দীর্ঘ ১৫ বছর চুপ থেকে এই সরকারের খুন, ব্যাংক লুট, দুর্নীতি সহ্য করেছি। কথা বলতে পারিনি। এছাড়া আমরা মুসলমান হওয়া স্বত্ত্বেও মূর্তি বানিয়ে ও তাতে ফুল দিয়ে আমাদের জোর করে ধীরে ধীরে পৌত্তলিকের প্রতি আকৃষ্ট বা মুশরিক বানানোর প্রচেষ্টা চলছে যা ঈমানের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। সম্প্রতি সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের উপর অমানুষিক নির্যাতন, নিপীড়ন হত্যা ও অনিয়মের কথা আমরা বলতে পারছি না, হৃদয় যেন আমাদের অন্ধ হয়ে গেছে।
তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি সরকারের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত রাষ্ট্রের মালিক জনগণ তথা ছাত্রদের সঙ্গে থাকব, ইনশাআল্লাহ। রাষ্ট্রের মালিক যদি জয়লাভ করে, তাহলে হয়ত আমি আবার রাষ্ট্রের মালিকের সেবা করতে ফিরে যাব। আর এ খুনি, ব্যাংক লুটেরা, দুর্নীতিবাজ, সরকার যদি টিকে যায় তবে আমি হয়ত চাকরিতে ফিরব না। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জীবন ও জীবিকা সর্বময় ক্ষমতার মালিক আল্লাহর হাতে।
আমার দ্বারা কারো কোনো ক্ষতি বা মনের অজান্তে কোনো ভুল করে থাকলে আপনারা সবাই ক্ষমা করে দেবেন। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে একজন মুমিন হিসেবে শাহাদাৎ বরণ করতে পারি।
মো. নজরুল ইসলাম
আরও পড়ুনঅতিরিক্ত পরিচালক ও সাধারণ সম্পাদক, ইএলসি, এসএমইঅ্যান্ড এসপিডি, বাংলাদেশ ব্যাংক।
তিনি আরও লিখেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন চাই।
বাংলাদেশ ব্যাংক একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। আর স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। এই ধরনের স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর গর্ভনেন্স সিস্টেম সম্পূর্ণভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছে।
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপে ব্যাংকিং খাতের ওপর প্রভাব পড়েছে।
সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপ এসব প্রতিষ্ঠানে কাম্য নয়। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে তাই হয়েছে যার ফলাফল ব্যাংকিং খাতের নাজুক অবস্থা। স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তিরোহিত।
দেখুন, ডিবির হারুন বা পুলিশের পল্লব সরাসরি জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা হয়না অথচ আমি গতকাল সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে সহমর্মিতা জানিয়ে একটি লেখা শেয়ার করেছি, তাতেই সবাই নড়েচড়ে বসেছে।
দেখা যাক স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে তার মর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে আমার পাশে দাঁড়ায় কি না? একটি কঠিন পরীক্ষা।
দেশের আর্থিক খাতের পুনর্গঠন ও সংস্কারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের জোর দাবি জানাচ্ছি।
আমার জন্য দোয়া চাই, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন চাই।’’
মন্তব্য করুন