তারা থাকেন ঢাকায়
সোনাতলা (বগুড়া) প্রতিনিধি : সোনাতলাার পাকুল্লা ইউনিয়নের যমুনা নদীর চরের আদর্শ গ্রামে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে ভূমিহীনদের জন্য ৮০টি ঘর নির্মাণ করলেও সেই ঘরগুলোর মধ্যে ৬০টি ঘরের বাসিন্দারা বসবাস করেন না।
অভাব অনটন আর দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত পরিবারের সদস্যরা বসবাস করে রাজধানী ঢাকায়। তাদের কেউ রিক্সা চালক কিংবা দিন মজুর ও গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কর্মরত। তাদের বরাদ্দকৃত ঘরে দিনের পর দিন ঝুলছে তালা। নষ্ট হচ্ছে ঘরের মূল্যবান সরঞ্জাম। এ ছাড়াও নির্মাণকৃত ঘরের মধ্যেই ১০/১২টি ঘরের মেঝেতে এখনও ভরাট করা হয়নি মাটি। ফলে আদর্শ গ্রামের ঘরগুলোতে এখন বসবাস করছে শিয়াল-কুকুর।
উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০/১১ কিলোমিটার পূর্বে পাকুল্লা ইউনিয়নের অবস্থান। ওই ইউনিয়নের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ যমুনা নদীর চরে বসবাস করেন। তাদের অধিকাংশ ভূমিহীন। প্রকৃতির সাথে লড়াই সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয় তাদের। অহরহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাদের নিত্যসঙ্গী। আর কিছু কিছু এলাকার লোক কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। ২০২০ সালে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় ওই এলাকার চরাঞ্চলের মানুষের মাথা গোঁজার জন্য খাটিয়ামারি চরে আদর্শ গ্রাম নির্মাণ করেন।
প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে ওই আদর্শ গ্রামে মাটি ভরাট ও ঘর নির্মাণ করা হয়। ওই গ্রামে ৮০টি ঘর নির্মাণ করে ৪ বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ঘরগুলো ভূমিহীন মানুষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে এবং লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৮০টি ঘরের মধ্যে ৬০টি ঘরের বাসিন্দারাই ওই ঘরগুলোতে বসবাস করে না। তারা তাদের পরিবার পরিজনদের নিয়ে অভাব অনটন আর দারিদ্রতার কষাঘাত থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি জমিয়েছে রাজধানী ঢাকায়। বেশির ভাগ ঘরে ঝুলছে, দিনের পর দিন তালা।
এ ছাড়াও ১০/১২টি ঘরের মেঝেতে এখনও মাটি ভরাট করা হয়নি। ফলে ওই ঘরগুলো শেয়াল আর কুকুরের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। দিন দিন আদর্শগ্রামের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
এ বিষয়ে ওই গ্রামের বাসিন্দা টুকু মন্ডল (৬০), শিহাব মিয়া (৩২), রাহেলা বেগম (৯০), হেনা বেগম (৪৫), সাহিদা বেগম (৫০), সেলিনা বেগম (৩০), শারমিন বেগম (২৫), মহিদুল ইসলাম মন্ডল (৩৫), মাসুম মিয়া (৪০), নাসরিন বেগম (৪৫) স্বপ্না বেগম (৩৫) বলেন, ওই আদর্শ গ্রাম স্থাপনের পর থেকে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ, নামাজ ঘর (মসজিদ), ছেলে মেয়েদের পড়া লেখার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে বন্যা মওসুমে তাদের ছেলে মেয়েদের জীবনের ঝুকি নিয়ে ডিঙ্গি নৌকায় পারি দিয়ে নদীর পশ্চিম পাশে যেতে হয়।
এ ছাড়াও বিশুদ্ধ পানি পানের কোনো ব্যবস্থা নেই। ঘরগুলো স্থাপনের সময় আর ৮/১০টি টিউবওয়েল স্থাপন করা হলেও তা বর্তমানে অকেজো। সন্ধ্যার পর পুরো গ্রামটি ভুতুরে পরিবেশে ধারন করে। এ ছাড়াও ঝড় বৃষ্টি ও বন্যার সময় এখানে বসবাসকারী ১৮/২০টি পরিবারের সদস্যদেরকে নিরাপত্তা হীনতায় রাত কাটাতে হয়। বর্ষা মওসুমে মুর্মুষূ রোগীকে স্থানান্তর করতে গিয়ে অনেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয়েছে। তারা পায়না কোনো জনপ্রতিনিধি সাহায্য সহযোগিতা।
এমনকি হাতে কাজ না থাকলে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে দিনাতিপাত করতে হয়। তাই এই গ্রামের বেশির মানুষ জীবন জীবিকার তাগিদে এবং কর্মের সন্ধ্যানে ঢাকায় পারি জমাতে বাধ্য হচ্ছে। এ বিষয়ে সাবেক পাকুল্লা ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার রহমান শান্ত বলেন, ঘরগুলো নির্মাণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। আর মাটি ভরাটের দায়িত্বে ছিল তৎকালীন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। ওই সময় প্রায় ১৩ লাখ টাকা উপজেলা প্রশাসনের হাতে ছিল বলেও জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আয়শা সিদ্দিকার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাবেয়া আসফার সায়মা বলেন, তিনি অল্প দিন আগে সংশ্লিষ্ট উপজেলায় যোগদান করেছেন। বিষয়টি তার জানা নেই। এমনকি কেউ এ বিষয়টি তাকে অবগত করেননি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।