রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহী নগরীর আলোচিত কিশোর মো. সনি (১৬) হত্যা মামলায় দুই তরুণ-তরুণীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। হত্যার আগে সনিকে অপহরণের দায়ে আসামিদের আরও ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আজ সোমবার (১১ মার্চ) দুপুরে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মহিদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলো, নগরীর হেতেমখাঁ সাহাজীপাড়া মহল্লার মো. মামুনের ছেলে মো. মঈন ওরফে আন্নাফ (২০) ও মঈনের বান্ধবী হাবিবা কুমকুম সাবা ওরফে ঐশী (১৯)। মামলায় মঈনের মা এবং মামাও আসামি ছিল। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
মঈনের মা বিথী খাতুন রাজশাহী মহানগর মহিলা দলের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক। নিহত সনি জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম পাখির ছেলে। ২০২২ সালের ৩ জুলাই ছিল তার জন্মদিন। সেদিন রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে তাকে হেতেমখাঁ সবজিপাড়া এলাকায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর কুপিয়ে হত্যা করা হয় তাকে।
এ নিয়ে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন তার বাবা। এ মামলার এজাহারে ঐশীর নাম ছিল না। ঘটনার পর মহিলা দলের নেত্রী বিথী তার ছেলে মঈন ও মঈনের বান্ধবী ঐশীকে নিয়ে পালিয়ে যায়। ৮ জুলাই রাতে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার প্রতাপ গ্রাম থেকে এই তিনজনকে আটক করে র্যাব। পরবর্তীতে পুলিশ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এদের মধ্যে পাঁচজন অপ্রাপ্তবয়স্ক।
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু জানান, শিশু আইনে অপ্রাপ্তবয়স্ক পাঁচজনের বিচার চলছে নারী ও শিশু আদালতে। আর প্রাপ্তবয়স্ক চারজনের বিচারকার্য শেষ হলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। আদালত কুপিয়ে হত্যার দায়ে প্রধান আসামি মঈন ও তার বান্ধবী ঐশীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন।
এছাড়া অপহরণের দায়ে আরও ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে তাদের। অন্য দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তারা হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত। এ অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বিবেচনায় আদালত তাদের খালাস দিয়েছেন। রায় ঘোষণার সময় চার আসামির সবাই হাজির ছিলেন। সাজাপ্রাপ্ত দুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু আরও জানান, আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামি মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার মতো অপরাধ করেছেন। কিন্তু তাদের বয়স কম। সে বিবেচনায় তাদের মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে কারাদণ্ড দেওয়া হলো।
এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু। তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের শিকার সনিও অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল। তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আর সাজাপ্রাপ্ত দুজনের বয়স ১৮ বছরের বেশি। তাই তাদের সর্বোচ্চ সাজা হলে আমি খুশি হতাম। এ রায়ে খুশি হতে পারিনি।’
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।