টক-ঝাল-মিষ্টি সব ধরণের ফ্লেভারে
স্টাফ রিপোর্টার : গতকাল শুক্রবারে ছুটির বিকেলটা করতোয়া পরিবারের জন্য ছিল যেন এক অন্যরকম আনন্দের দিন। করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল এ্যান্ড কলেজের অডিটোরিয়ামে বসেছিল করতোয়া গ্রপের প্রতিটি সেক্টরের মিলনমেলা।
ঈদ পুনর্মিলনী উপলক্ষে দৈনিক করতোয়া, করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল এ্যান্ড কলেজ এবং করতোয়া কুরিয়ার সার্ভিসের প্রতিটি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে আয়োজনটি হয়ে উঠেছিল প্রাণের উৎসবে। পেশাদারিত্বের বাইরে গিয়ে একেকজন হয়ে ওঠেন আবৃত্তিকার, কণ্ঠশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, অভিনয় শিল্পী ও কৌতুকাভিনেতা।
গতকাল শুক্রবার মধ্যদুপুরের কিছু পরে সূর্যের প্রখর তাপের চোখ রাঙানিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অডিটোরিয়ামে একে একে আসতে থাকেন সাংবাদিক, শিক্ষকসহ করতোয়া পরিবারের অন্যান্য বিভাগের কর্মরতরা।
তবে সবার আগে চলে আসেন অনুষ্ঠানের পরিকল্পক এবং আয়োজক দৈনিক করতোয়ার নির্বাহী সম্পাদক তাসলিমা হক রাকা। তিনিই সকলকে স্বাগত জানান।
চিরাচরিত অনুষ্ঠানের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের এই অনুষ্ঠানে ছিল নাচ, গান, নাটক, আবৃত্তি, কৌতুক এবং বিভিন্ন গেম। টক-ঝাল-মিষ্টি সব ধরণের ফ্লেভার মিশ্রিত ঈদ-আনন্দের এই ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের নাম ‘পাঁচ ফোড়ন’ বললেও ভুল হবে না। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া পারফর্মাররা কেউ পেশাদার না হলেও তাদের নিখুঁত পারফর্মে অনেক গুণী পারফর্মরাও অবাক হবেন।
অনুষ্ঠানটি বিভিন্ন স্তরে সাজানো ছিলো। কখনও গান, কখনও আবৃত্তি, আবার তো কখনও গেম বা নাটিকা। এভাবে অনুষ্ঠানে একের পর এক চমক দেওয়া হয় দর্শক সারিতে যারা ছিলেন তাদের।
অনুষ্ঠানে আগত প্রত্যেকের হাতে ঈদকার্ড সম্বলিত একটি করে সবুজ খাম ধরিয়ে দেওয়া হয়। কারো কারো ভাগ্যে জোটে সবুজ খামের ভেতরে থাকা লাল, নীল বা গোলাপী খাম। যারা শেষ পর্যন্ত মঞ্চে গিয়ে বিভিন্ন গেমে অংশগ্রহণসহ পুরস্কার পাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন।
পুরো অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠান উপভোগসহ অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহ দেন করতোয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক ও তার সহধর্মিনী এবং করতোয়া গ্রুপের পরিচালক মহসিনা হাসনাত। দৈনিক করতোয়া সম্পাদক মোজাম্মেল হক ‘লাইট-ক্যামেরা এ্যাকশন’ ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাহী সম্পাদক তাসলিমা হক রাকার ঈদ মুবারক ধ্বনিতে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়।
এরপর পরই অডিটোরিয়াম মঞ্চের বিশাল এলইডি ডিসপ্লেতে দৈনিক করতোয়াসহ করতোয়া গ্রুপের প্রতিটি বিভাগের কর্মকান্ড নিয়ে ছোট্ট একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর একের পর এক ইভেন্ট শুরু হয়।
প্রতিটি ইভেন্টই ছিল আকর্ষণীয় ও উপভোগ্য। যেহেতু প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একাধিক পারফর্মার ছিলেন, তাই কোন কোন ইভেন্টে লটারির মাধ্যমে পারফর্মারদের সুযোগ দেওয়া হয়।
পারফর্ম শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হয় ভিন্নধর্মী পুরস্কার। লাউ, টমেটো, শাক, বেল, তেল, ভিমবারসহ এমন মজার মজার পুরস্কার পেয়ে সবাই যেন আনন্দিত হন।
অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন দৈনিক করতোয়ার সিনিয়র রিপোর্টার মাসুদুর রহমান রানা এবং করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষক কেফায়েতুল ইসলাম।
নৃত্য পরিবেশন করেন করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল এ্যান্ড কলেজের নৃত্য শিক্ষক ইমরান হোসেন এবং সঙ্গীত শিক্ষক আরিফা সুলতানা।
আবৃত্তি করেন দৈনিক করতোয়ার সিনিয়র রিপোর্টার মাসুদুর রহমান রানা, করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল এ্যান্ড কলেজের প্রভাষক হাবিবা সুলতানা এবং মোঃ আবু মুসা ও দৈনিক করতোয়ার সহকারী ম্যানেজার আখতার খালিদ হাসান।
কৌতুক পরিবেশন করেন দৈনিক করতোয়ার স্টাফ ফটোগ্রাফার আসাফ-উদ-দৌলা ডিউক এবং করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল এ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মোঃ আব্দুস সাত্তার।
অনুষ্ঠানে নীল খাম প্রাপ্তদের নিয়ে কপালে বিস্কিট রেখে খাওয়ার প্রতিযোগিতা করা হয়, লাল খামপ্রাপ্তদের নিয়ে ধাঁধাঁ প্রতিযোগিতা, গোলাপি খামপ্রাপ্তদের নিয়ে আয়োজন করা হয় কানে হেডফোন লাগিয়ে নিজের পছন্দের গান গাওয়া।
এছাড়া করতোয়া গ্রুপের প্রতিটি সেক্টরের কর্মকর্তাগণদের নিয়ে একটি খেলা পরিচালনা করা হয়। এই খেলায় প্রধানগণ মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকেন তাদের পেছনের এলইডি ডিসপ্লে স্ক্রিনে ভেসে ওঠে স্ব -স্ব বিভাগের সহকর্মিদের ছবি। দর্শকের দেওয়া ক্লু থেকে তাদের বলে দিতে হবে কোন সহকর্মির ছবি আছে তার পেছনে।
এরপর দৈনিক করতোয়া অনলাইনের সাবেক কর্মী মাধব মোহন্ত ব্যাঞ্জোর মোহনীয় সুর মুর্চ্ছনায় দর্শত শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখেন।
ব্যাঞ্জো পরিবেশনের পর হঠাৎ পুরো অডিটোরিয়াম অন্ধকার হয়ে যায়। এরমাঝেই এক অদৃশ্য এক পেত্নীর তীব্র কণ্ঠস্বর শোনা যায়। যে কি না আড়ালে থেকেই ভৌতিক কন্ঠে নিজেকে ‘শাকচুন্নি’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন।
এরপর আবারও অডিটোয়িাম আবার আলোকিত হয়ে উঠলে দেখা যায় ‘শাকচুন্নি’ পেত্নীর মিমিক্রি করা নারীটি আর কেউ নন, তিনি হলেন দৈনিক করতোয়ার স্টাফ রিপোর্টার হাফিজা সুলতানা বিনা। বিনার মিমিক্রি শেষ হতে না হতেই হঠাৎ মঞ্চে এসে হাজির হন তৃতীয় লিঙ্গের রূপ ধারণকারী ‘চম্পা চ্যামেলি’। ছোট্ট একটি নাটিকার মাধ্যমে চম্পা-চ্যামেলি তাদের জীবন ধারণের একটি অংশ ফুটে তোলেন।
হাস্যরসে ভরা চম্পা-চ্যামেলিতে অভিনয় করেন করতোয়া স্কুল এ্যান্ড কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ আবুল হোসেন এবং প্রধান করনিক আলী হাসান মুরাদ।
বর্তমান সময়ের নাটকের পরিচালক ও নাট্যাভিনেতাদের নিয়ে আরেকটি হাসির নাটক ‘শুটিং স্পট থেকে’ পরিবেশন করেন দৈনিক করতোয়ার অনলাইন টিম। ওই নাটকে অভিনয় করেন করতোয়া অনলাইনের ব্যবস্থাপক সামিউর রহমান পশারী, রিপোর্টার রাহাত রূপান্তর ও স্মৃতি সঞ্চয়িতা অর্থি এবং ভিডিও এডিটর হাদিসুর রহমান, শাকিল শুভ ও নারায়ণ তালুকদার।
শুধু তাই নয়, করতোয়া গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্যও একটি খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়। তাদের সাদা খাম দেওয়া হয়। ওই খামপ্রাপ্তরা মঞ্চে গিয়ে বেলুন ফুটানো খেলায় অংশ নেন। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে করতোয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হকের হাতে প্রতিটি সেক্টরের পক্ষ থেকে একটি করে তার প্রতি অনুভূতির দেয়ালিকা তুলে দেওয়া হয়। ওই দেয়ালিকাগুলোয় স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা তাকে নিয়ে নিজেদের অনুভূতির কথা নিজের হাতে লিখে তুলে ধরেন।
দৈনিক করতোয়ার পক্ষ থেকে দেয়ালিকা তুলে দেন বার্তা সম্পাদক প্রদীপ ভট্টাচার্য্য শংকর, করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল এ্যান্ড কলেজের পক্ষে দেয়ালিকা দেন অধ্যক্ষ অসিত কুমার সরকার এবং করতোয়া কুরিয়ার সার্ভিসের পক্ষে দেন মহাব্যবস্থাপক জে কে সাহা।
এ সময় অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি এবং করতোয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, আমি বিশ্বাস করি কঠোর পরিশ্রম ও সততা থাকলে মানুষ এক সময় তার লক্ষ্যে পৌঁছুবেই। আমি শুরু থেকে যেমন পরিশ্রম করেছি, তেমন সততা নিয়ে আমার প্রতিটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। আমি কখনও মানুষকে ঠকাইনি এবং কারো সঙ্গে প্রতারণা করিনি; তাই হয়তো আজকের এই অবস্থানে আসতে পেরেছি। করতোয়া একটি পরিবার।
প্রতিটি সেক্টরের প্রতিটি কর্মীকেই আমি আমার পরিবারের অংশ মনে করি। তাদের সেভাবে ভালোবাসি। এজন্য তারাও আমাকে তাদের ভালোবাসায় সিক্ত করেন। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দৈনিক করতোয়ার নির্বাহী সম্পাদক তাসলিমা হক রাকা।
এতে সহযোগিতায় ছিলেন করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল এ্যান্ড কলেজের হিসাব রক্ষক কাম তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক কর্মকর্তা আরিফ হোসেন সোহেল।
সবশেষে মোজাম্মেল হকের পরিচালনায় র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। র্যাফেল ড্র’তে ২৫টি পুরস্কার ছাড়াও কিছু শান্তনা পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।