সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পী, রংপুর : উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে ৪৬০ বেডের অত্যাধুনিক ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগ হাসপাতাল। প্রায় শতকোটি কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি বেজমেন্টসহ ১৭ তলা হাসপাতাল ভবনটির ৬০ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে শেষ করা হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে পারবেন।
রংপুর গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, স্বাস্থ্য খাতে পিছিয়ে থাকা রংপুর অঞ্চলের মানুষের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২০২১ সালের মে মাসে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে প্রায় দুই একর জমির ওপর ৪৬০ বেডের হাসপাতাটির নির্মাণ কাজ শুরু করে বর্তমার সরকার। এখন পর্যন্ত হাসপাতালটির ১০ তলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
১৭ তলা হাসপাতালটির ২ থেকে ৭মতলা পর্যন্ত থাকবে ১৮০ বেডের ক্যান্সার বিভাগ, ৮ থেকে ১১ তলা পর্যন্ত থাকবে ১৬৫ বেডের কিডনি বিভাগ ও ১২ থেকে ১৫ তলা পর্যন্ত থাকবে হৃদরোগ বিভাগ। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হাসপাতালটির আয়তন ২ লাখ ৫৭ হাজার ৩১২ বর্গফুট।
এতে রয়েছে অত্যাধুনিক ফায়ার ফাইটিং সিসটেম, স্টোররুম, সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, ৫ম তলা বিশিষ্ট আনসার ব্যারাকসহ সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকবে এই হাসপাতালে। এছাড়া ৯টি লিফট ও চারতলা পর্যন্ত এক্সলেটর সুবিধা পাবেন রোগীরা।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়নের বিরাহীম গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, বর্তামানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিমিত আকারে ক্যান্সারের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। আধুনিক এই হাসপাতালটি চালু হলে এই অঞ্চলের মানুষের হয়রানি কিছুটা কমবে। সেই সাথে অর্থের খরচ কমে আসবে। আমি চাই এর নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করে চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করা হোক।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নূর-উন- নবী লাইজু জানান, রংপুর অঞ্চলের দুই কোটি মানুষের ভরসা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এই বিশেষায়িত হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবা চালু হলে অবহেলিত এ অঞ্চলের মানুষজন কিডনি চিকিৎসার ক্ষেত্রে ডায়ালসিস সুবিধা, ক্যান্সার রোগীদের কেমোথ্যারাপি, রেডিও থ্যারাপি এবং রক্ত রোগের সকল চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হবে।
এটা বর্তমান সরকারের জন্য বড় ধরনের মাইলফলক এবং এ অঞ্চলের চিকিৎসা সেবার জন্য আর্শীবাদ।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোঃ মাহফুজার রহমান জানান, এই হাসপাতালটি হবে এই অঞ্চলের রোগীদের জন্য একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল। সারা বিশে^ই এখন ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগের প্রাদুভাব বেশি। এদিক থেকে পিছিয়ে নেই রংপুররের আট জেলার মানুষ।
তিনি জানান, এই অঞ্চলে ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগীদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল না থাকায় সব সময় রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকাসহ দেশের বাইরে পাঠানো হতো। এতে করে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে পারতো না নিম্ন আয়ের মানুষ। হাসপাতালটি চালু হলে হাতের কাছেই পৌঁছে যাবে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা। হাসপাতালটি হবে এ অঞ্চলের মানুষের আশীর্বাদ।
রংপুর গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (বর্তমানে পদায়নকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী) মো. সাকিউজ্জামান জানান, পূর্বের ডিপিপির চেয়ে ভবনটির ৫৭ হাজার স্কোর ফিট বৃদ্ধি পাওয়ায় ও নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ডিপিপি সংশোধনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে প্রকল্পের ব্যয় আরো ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেতে পারে।
রংপুর গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেওয়ান মাউদুদুর রহমান জানান, ২০২১ সালের মে মাসে হাসপাতাল ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বর্তমানে ১০ম তলার নির্মাণ কাজ চলছে। আশা করছি ২০২৫ সালের মধ্যে হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে। অত্যাধুনিক এই হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবা চালু হলে এই অঞ্চলের স্বাস্থ্যখাতে বিপ্লব ঘটবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।