শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : দেশের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে অভিযোগ আর প্রশ্নের শেষ নেই। সরকারি হাসপাতালের নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে ভুরিভুরি সংবাদ চোখে পড়ে প্রতিনিয়ত। অথচ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ছাদে সারি সারি টবে সবুজের সমারোহ।
গাছে গাছে ঝুলছে ফল ও নয়নাভিরাম ফুল। ছাদের পাশাপাশি পুরো হাসপাতাল চত্বরের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে ‘মিনি ফুলবাগান’। সেইসাথে শোভা পাচ্ছে ছোটছোট সবজিখেত, ভেষজ বাগান।
পুরো চত্বর ঝকঝকে তকতকে। এক সময় যেখানে সন্ধ্যার পরই ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করতো, বর্তমানে সেই উপজেলা কমপ্লেক্সজুড়ে আলো ঝলমলে পরিবেশ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে এমন ভাবে সাজিয়েছেন বগুড়ার শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজিদ হাসান সিদ্দিকী লিংকন।
তার এই সৃষ্টিশীল কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সারাদেশের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের র্যাংকিং-এ সারাদেশের ৪৯২টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮৯.৪৪ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রথম স্থান অর্জন করেছে।
আজ শনিবার (৪ মে) এই তথ্য নিশ্চিত করেন উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজিদ হাসান সিদ্দিকী লিংকন। ২০২১ সালের ১২ আগস্ট ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটিতে যোগদান করেন ৩৩তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের এই কর্মকর্ত। তিনি এ হাসপাতালে যোগদানের পর থেকেই পাল্টে গেছে হাসপাতালের দৃশ্যপট। হাসপাতাল প্রাঙ্গণ দালাল মুক্ত হয়েছে।
অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি রোগীদের সঠিক সেবা নিশ্চিতে বদলে ফেলা হয়েছে ভেতরের পরিবেশ।
২০১৮ সালের ২২ এপ্রিল এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩ কোটি ৮৮ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত অত্যাধুনিক চার তলাবিশিষ্ট ওপিডি ভবনসহ আরও ৪টি ভবন উদ্বোধন করা হয়। এমন অবকাঠামোগত সুবিধা থাকলেও হাসপাতালটিতে নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা ছিল খুবই কম।
পরে ডা. সাজিদ হাসান সিদ্দিকী লিংকনের হাত ধরেই স্বাভাবিক প্রসব কার্যক্রমের উদ্যোগ ও ব্যাপক প্রচার চালানো হয়। তার নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে মানুষের আস্থা ফিরছে স্বাভাবিক প্রসবে। ইতোমধ্যে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসবে উপজেলায় সাড়া ফেলেছে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ ৩৬ বছর পর অপারেশন থিয়েটার চালু করা হয়েছে, যেখানে নিয়মিত সিজারিয়ান অপারেশন হয়। পাশাপাশি এই হাসপাতালে প্রতি মাসে গড়ে অর্ধশতাধিক নরমাল ডেলিভারি হয়ে থাকে। এছাড়া নবজাতকের জন্য উপহারের ব্যবস্থা চালু আছে। প্রায় ২২ বছর পর এই হাসপাতালে অত্যাধুনিক ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন চালু করা হয়েছে।
প্যাথোলোজির সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাম, যক্ষ্মা রোগীদের জিন এক্সপার্ট পরীক্ষা, ইসিজি, এএনসি এবং পিএনসি সেবা, সুসজ্জিত ডেন্টাল সার্ভিস, কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা, টেলি-মেডিসিন চিকিৎসা সেবা, হারবাল চিকিৎসা সেবা, ডায়াবেটিস ও ব্লাড প্রেশার রোগীদের জন্য এনসিডি কর্নার, শিশুদের জন্য আইএমসি আই কর্নার ও কেএমসি কর্নারসহ রোগীদের জন্য অন্যান্য সকল ধরনের স্বাস্থ্যসেবা চালু আছে।
রোগী ও তাদের স্বজনদের খাবারের জন্য আছে ডাইনিং রুমের ব্যবস্থা। যানবাহনের জন্য আছে নিরাপদ গ্যারেজ। এই উপজেলাসহ আশপাশের প্রায় ৬-৭টি উপজেলার মানুষ একসময় দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বগুড়া থেকে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন নিয়ে আসতো। তাদের কষ্ট লাঘব করার জন্য ২০২১ সাল থেকে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জলাতঙ্ক এর ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা হয়।
একসময় এই হাসপাতাল থেকে দৈনিক গড়ে ২০০-২৫০ জন রোগী স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করতেন, বর্তমানে পরিবেশ ও সেবার মান উন্নয়নের ফলে দৈনিক গড়ে প্রায় ৯০০-১০০০ জন মানুষ এখান থেকে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করে থাকেন।
শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজিদ হাসান সিদ্দিকী লিংকন বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার, স্বাস্থ্য সেবা অধিকার। এরই ধারাবাহিকতায় এই অধিকার বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স টিমের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
আমরা প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায় সু-স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।’ সেইসাথে শেরপুর তথা বগুড়া জেলার ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ অবস্থান। তিনি আরো বলেন, ‘এই অর্জন শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।