জনস্বাস্থ্য হুমকিতে থাকলেও সময় নেই ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের
স্টাফ রিপোর্টার : মৌসুম শুরুর আগেই ‘অপরিপক্ক’ পাকা আম বিক্রি হচ্ছে বগুড়া শহরে। দোকানীদের কাছে একই ধরনের আম দেখা গেলেও তারা নিজেদের ইচ্ছেমত নাম ‘গোবিন্দভোগ’ ও ‘হিমসাগর’ বলে শহরজুড়ে দেদারছে তা বিক্রি করছেন।
‘ক্যালেন্ডারের’ হিসাব অনুযায়ী এই আম বাজারে আসার কথা আরও পরে। অতিরিক্ত লাভের কারণে ‘কার্বাইড’ দিয়ে পাকিয়ে এসব আগেভাগেই বাজারে ছাড়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার এসব আম পাইকারিতে যে দাম, তার চেয়ে দ্বিগুণ দামে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করছেন দোকানীরা। জনস্বাস্থ্য হুমকিতে ফেলে কার্বাইড দিয়ে পাকানো এসব আম বাজারে অবাধে বিক্রি হলেও বগুড়ার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, তথ্য থাকলেও অভিযান চালানো যাচ্ছে না।
এদিকে সাতক্ষীরার আম নিরাপদ প্রক্রিয়ায় বাজারজাত করার জন্য সময়সূচি নির্ধারণ করে আম ক্যালেন্ডার (সূচি) প্রকাশ করেছে জেলা প্রশাসন। গত রোববার (৫ মে) জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে ‘নিরাপদ আম বাজারজাতকরণ’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এই আম ক্যালেন্ডার প্রকাশ করে নির্ধারিত সময়ে আম পাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সূচি অনুযায়ী, আগামী ৯ মে থেকে গোপালভোগ, ১১ মে গোবিন্দভোগ, ২২ মে হিমসাগর, ২৯ মে ন্যাংড়া এবং ১০ জুন আম্রপালি জাতের আম পাড়া যাবে। ধাপে ধাপে অন্যান্য আম সংগ্রহ করা যাবে। ১০ জুনের আগে আম্রপালি আম সংগ্রহ করা যাবে না।
আজ মঙ্গলবার (৭ মে) শহরের বিভিন্ন ফলের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য ফলের পাশাপাশি বেশিরভাগ দোকানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে আম। থরে থরে সাজানো এসব আম নাকি সাতক্ষীরার ‘গোবিন্দভোগ’ আবার কেউ বলছেন ‘হিমসাগর’। এছাড়াও দেশি আঁটির আমের দেখা মিললো দু’একটি দোকানে।
ফল ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমের মৌসুম এখনো শুরু হয়নি। এর আগেই চাষিরা বাগান থেকে আম পাড়া শুরু করে দিয়েছেন। আড়তে বেশ কয়েকটি আমের চালান এসেছে। এরমধ্যে গোবিন্দভোগ আমই ভালো। তারা বলছেন, এই আম বৈশাখ মাসেই পাওয়া যায়, পরে আর পাওয়া যাবে না। অনেক চাষি বাড়তি লাভের আশায় ক্যালেন্ডার না মেনে আম পাড়া শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন অনেক ফল ব্যবসায়ী।
অপরিপক্ক এসব আমের স্বাদের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলছেন, স্বাদ খারাপ না। তবে পুরোপুরি স্বাদের কথা বলা মুশকিল। আমের প্রকৃত ঘ্রাণও অনেক আমে নেই বললেই চলে। জানতে চাই বগুড়া জেলা ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আনাম তুষার বলেন, বগুড়াতে প্রায় পাঁচটির মতো আমের চালান এসেছে।
তাদের সমিতির পক্ষ থেকে আমের ক্যালেন্ডার শুরু না হওয়া পর্যন্ত ব্যবসায়ী ও চাষিদের আম আর না পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বগুড়ার বাজারে যেসব আম বিক্রি হচ্ছে তা ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে পাইকারি বিক্রি হয়েছে।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, এসব ‘অপরিপক্ক’ আম ‘কার্বাইড’ দিয়ে পাকানো হচ্ছে, যা বিষাক্ত পদার্থে রূপান্তরিত হয়। আর এতে জনসাধারণের স্বাস্থ্য বিশেষ করে লিভার ও কিডনি অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এদিকে জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পড়লেও ব্যবস্থা নেয়ার সময় নেই বগুড়া জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের। ‘অপরিপক্ক’ আম কেমিক্যাল দিয়ে পাকিয়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছে স্বীকার করে অধিদপ্তরটির সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলছেন, তাদের কাছেও তথ্য আছে কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আম বাজারে বিক্রি হচ্ছে। তবে জানলেও তারা অভিযান চালাতে পারছেন না। অজুহাত হিসেবে নির্বাচনকে সামনে আনেন এই কর্মকর্তা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।