ভিডিও

বাংলার কৃষক আজও যেন নীল চাষির প্রতিচ্ছবি

হামরা দ্যাশের কৃষক!

স্মৃতি সঞ্চায়িতা অর্থি

প্রকাশিত: জুন ০৩, ২০২৪, ০৪:৪৪ দুপুর
আপডেট: জুন ০৩, ২০২৪, ১১:১৯ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

‘হামাকেরে সারের দাম ব্যারে গেছে, সবটা জিনিসের দাম ব্যাত্তি। এতো খানি ফসল আবাদ করেও দাম পাচ্চি না। শেষ রাতোত পত্তা ডোলে ভাত খাছি,----- এভাবেই দৈনিক করতোয়াকে নিজের কষ্টের কথা জানাচ্ছিলেন বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার একজন কৃষাণী। 

তিনি তার ২ বিঘা জমিতে চাষ করেছিলেন লাল মরিচ। তবে সার ও শ্রমিকের দাম বাড়লেও তিনি তার ফসলের আশানরূপ দাম পান নি। শুধু তিনি নন; এমন চিত্র যেন বেশির ভাগ কৃষক পরিবারের। 

বুলু মিয়া নামের এক কৃষক দৈনিক করতোয়াকে জানান, আগে যে সারের দাম ছিলো ১২০০/১৩০০ টাকা তা এখন এক বছরের ব্যবধানে হয়েছে ১৫০০ টাকা। শুধু তাই নয়, তিনি তার জমিতে চাষ করেছিলেন আলু। তবে নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধের জন্য তার জমির বেশির ভাগ আলুই নষ্ট হয়ে গেছে। তাই চাপা কষ্ট নিয়েই লোকসান গুনছেন তিনি।এর যেনো কোনো প্রতিকার নেই। 

বাংলাদেশে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল এবং কর্মসংস্থানের ৪০ শতাংশের বেশি কৃষি খাতে। তবুও আজও যেনো কৃষক তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। 

জমি থেকে ধান চাষ করে সেই খাবার আমাদের প্লেট পর্যন্ত নিয়ে আসতে কৃষকের কত রাত্রি নির্ঘুম কাটাতে হয়,এই তাপদাহে কতো ঘাম ঝড়াতে হয়। 

তবুও দিন শেষে ন্যায্য মূল্য না পেয়ে এতো কষ্টের ফসল বুকে জড়িয়ে কাঁদতেও দেখা যায় অনেক কৃষককেই। আবার ন্যায্য মূল্য পেলেও মধ্যস্বত্ত¦ভোগীরা কৃষকের থেকে কম মূল্যে ফসল কিনে বেআইনীভাবে মজুদ করে বাজারে কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে। ফলে প্রকৃতপক্ষে লাভবান হয় মজুদকারীরা। বছরে দু-তিনটি ফসলের একটার দাম পেলে আরেকটার দামে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক। এ জেনো আধুনিক সভ্যতার নীল চাষ। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, কৃষকরা চাষাবাদের জন্য টাকা পায় না। ফলে বাধ্য হয়ে উৎপাদিত ফসল কম দামে বিক্রি করে দেয়।

বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আর এই অর্জনের নেপথ্য নায়ক দেশের কৃষক সমাজ। অথচ গাবতলী ও সারিয়াকান্দির চাষিরা দৈনিক করতোয়াকে জানান, প্রনদনা বরাদ্দের তালিকায় তাদের নাম থাকলেও তারা সরকারিভাবে কোনো সহায়তা পান না। এর জন্য উক্ত এলাকার চেয়্যারম্যান মেম্বরকেই দায়ি করেন তারা। 

এমনকি সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, কৃষিখাতে সরকারের অনুদান প্রকল্প সম্পর্কে সিংহভাগ কৃষকই কিছুই জানেন না।

তবে সাম্প্রতিককালে কৃষকের জন্য সবচেয়ে বড় সংকট হয়ে উঠেছে কৃষি শ্রমিকের অপর্যাপ্ত জোগান ও সারের অস্বাভাবিক দাম। আবার বৈরী আবহাওয়াতো আছেই। এতসব সংকট মোকাবিলা করেও কৃষকেরা যদি ফসল বিক্রি করে উৎপাদন খরচ মেটাতে না পারেন তাহলে পুঁজিহীন কৃষকরা বাঁচবে কী করে?

তবুও তাদের একটুকরো জমিতে আবারও স্বপ্ন বুনে বাংলার কৃষক। কষ্ট মেনে নিয়েই সারিয়াকান্দির মরিচ চাষি বলেন, এই জমি আর ফসলেই সবকিছু। হামাকেরে চিন্তা কেউ করেনা। কারণ হামরা দ্যাশের কৃষক! 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS