তদন্তে অগ্রগতি নেই
জব্দ হয়নি আগ্নেয়াস্ত্র
স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ার বহুল আলোচিত জোড়া খুন মামলার তদন্তে আর কোন অগ্রগতি নেই। প্রধান আসামি বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কবির আহমেদ মিঠু ও ছাত্রলীগ নেতা রিফাতসহ ৪ জন ধরা পড়লেও মামলার অন্যান্য আসামি এখনও পলাতক। মামলার ২৮ আসামির মধ্যে ২৪ আসামিই অধরা। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান আসামি বগুড়া জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সার্জিল আহমেদ টিপুও লাপাত্তা। জানা গেছে তার পাসপোর্ট রয়েছে। শোনা যাচ্ছে তিনি বিদেশও পালিয়েছেন। তবে বিষয়টি নিশ্চিত নয়। কেউ বলছেন, তিনি দেশেই আত্মগোপন করে আছেন। আবার কেউ বলছেন তিনি বিদেশে পালিয়ে গেছেন।
এদিকে, শহরের নিশিন্দারা চকরপাড়ায় ঈদের দিন রাতে শরিফ শেখ ও রুমন হত্যাকান্ডের সময় যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয় সেই অস্ত্রের উৎস কি ? অস্ত্রটি অবৈধ না লাইসেন্সকৃত এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসী বলছেন, টিপু ও তার বড় ভাই বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কবির আহমেদ মিঠুর কাছে লাইসেন্স করা পিস্তল বা রিভলবার রয়েছে। হত্যাকান্ডের সময় তারা এ ধরণের আগ্নেয়াস্ত্র দিয়েই গুলি ছুঁড়েছিল। তবে আগ্নেয়াস্ত্রটি বৈধ না অবৈধ তা তারা জানেন না। পুলিশ এখনও অস্ত্রটি জব্দ করতে পারেনি।
এ বিষয়ে বগুড়া সদর থানার ওসি মো: সাইহান ওলিউল্লাহ বলেন, এ ব্যাপারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। টিপুর পরিবারের কাছে লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে সে বিষয়ে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। তিনি বলেন, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারসহ আগ্নেয়াস্ত্রটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া পলাতক আসামি টিপুর পাসপোর্টও রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তিনি বিদেশে পালিয়ে গেছেন কিনা তিনি তা জানেননা। তবে টিপু যেখানেই থাকুক তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া পলাতক পৌর কাউন্সিলর বিএনপি নেতা শাহ মো: মেহেদী হাসান হিমুসহ অন্যান্য পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
এ দিকে আমাদের কোর্ট রিপোর্টার জানিয়েছেন, জোড়া খুনের মামলায় বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কবির আহমেদ মিঠুসহ গ্রেপ্তারকৃত ৪ আসামির উপস্থিতিতে পুলিশ রিমান্ডের আবেদন শুনানির জন্য আগামি ২৪ জুন আদালতে দিন ধার্য্য করা হয়েছে। এই মামলার অপর ৩ হাজতি আসামিরা হলো নিশিন্দারা খাঁ পাড়ার আব্দুল গফুরের ছেলে শেখ সৌরভ, আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে নাঈম হোসেন (২৬), ও সুলতানগঞ্জ পাড়ার ইসমাইলের ছেলে ছাত্রলীগ নেতা আজবিন রিফাত (১৯)। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোঃ শাহিনুজ্জামান ওই ৪ আসামিকে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বগুড়া সদর আমলী আদালতে ৭ দিনের জন্য পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করেন। ওই আদালতের বিচারক অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেট সুকান্ত সাহা ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে আসামিদের উপস্থিতিতে শুনানির জন্য আগামি ২৪ জুন শুনানির দিন ধার্য্য করে ওই ৪ হাজতি আসামিকে বগুড়া কারাগার থেকে আদালতে হাজির করার জন্য পি/ডাব্লিউ ইস্যুও আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, ঈদের দিন ১৭ জুন রাত সাড়ে ১২ টার দিকে বগুড়া শহরের নিশিন্দারা চকরপাড়ায় প্রভাবশালি আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সার্জিল আহমেদ টিপুর মেয়ের প্রাইভেট কারে মোটর সাইকেলের ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া হয় শরিফ ও রুমন ওরফে রোমান নামে দুই যুবককে। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে প্রকাশ্যে গুলির পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় শরিফ শেখ ও রুমনকে। কিলিং মিশনে অংশ নেন ২৭-২৮ জন। নেতৃত্ব দেন বগুড়া জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সার্জিল আহমেদ টিপু। এ সময় টিপুর বড় ভাই সৈয়দ কবির আহমেদ মিঠু ও স্থানিয় পৌর কাউন্সিলর বিএনপি নেতা শাহ মো: শাহ মেহেদী হাসান হিমুও উপস্থিত ছিলেন বলে মামলায় অি যোগ করা হয়েছে।
বগুড়া সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. শাহিনুজ্জামান জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শেখ সৌরভ,ছাত্রলীগ নেতা আজবিন রিফাত ও নাঈম হোসেনকে পুলিশ এবং প্রধান আসামি বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কবির আহমেদ মিঠুকে র্যাব গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে এই চার আসামি কারাগারে রয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।