কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: ‘ভোট চুরি ঠেকাতে গত ইউপি নির্বাচনে চার পুলিশকে মেরে আহত করেছিলাম, ৭০ রাউন্ড গুলি রেখে দিয়েছিলাম, পুলিশের ৩টি গাড়ি পুড়িয়েছিলাম। এরপরেও আমি পিছপা হইনি। যতই হুমকি-ধমকি আসুক, আমি তো ছাত্রলীগ থেকে পরীক্ষিত হয়ে আজকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছি। এই হুমকি-ধমকিকে ভয় করার মতো লোক তো আমি না।’ কিশোরগঞ্জের বৌলাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের এমন একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
৫ জুলাই বৌলাই ইউনিয়নের পাটধা কুড়েরপাড় বডু মার্কেটে এক নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় বৌলাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বৌলাই ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুর রহমান এমন বক্তব্য দেন।
সেই সভার ১ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও গত রোববার (৭ জুলাই) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
ভিডিওতে আরও শোনা গেছে, ‘৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটা মসজিদও বাদ নাই যে আমি বরাদ্দ দেই নাই। পরিশেষে আপনারা বলেছেন গাবতলি বাজারের মসজিদে বরাদ্দ দিতে, আমি গাবতলি বাজারের মসজিদে বরাদ্দ দিয়েছি। গাবতলি বাজারে আমি টিউবওয়েল স্থাপন করেছি। আপনাদের এই বডু মার্কেটে পানির সুব্যবস্থা ছিল না, আমি পানির সুব্যবস্থা করেছি হাজার ফুটের টিউবওয়েল স্থাপন করে। বিগত উপজেলা নির্বাচনে আমি আপনাদের বলেছিলাম আমাকে জায়গা দেন, আমি একটি বাথরুমের সুব্যবস্থা করে দেব, এই বডু মার্কেটের জন্য।''
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বৌলাই ইউনিয়নের পাটধা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর এবং পুলিশের অস্ত্র ও গুলি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় পরদিন ২৯ নভেম্বর পুলিশ বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করে। এ মামলায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানকেও আসামি করা হয়। এ মামলায় পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে জানিয়ে মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘চার্জশিটে আমার নাম রয়েছে।’
চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. বোরহান উদ্দিন ও মোশাররফ হোসেন বাবুল বলেন, ‘ভিডিওটা আমরা দেখেছি। তাঁর বক্তব্যে ভোটাররা আতঙ্কিত। গত নির্বাচনে যে ঘটনা ঘটেছিল সে ঘটনা আবারও হয় কিনা?’
ভিডিওর বিষয়ে মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বক্তব্য আগে-পিছে করে ভিডিওটি এডিট করে বানানো হয়েছে। আমি পুলিশকে নিয়ে মন্তব্য করিনি।’
সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফাওজুল কবীর খান বলেন, ‘ভিডিওটি আমরা দেখিনি। তবে নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসারে আমাদের কাছে যদি অভিযোগ আসে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
মো. ফাওজুল কবীর খান আরও বলেন, যাচাই-বাছাই শেষে ৪ প্রার্থী উপনির্বাচনে বৈধতা পেয়েছেন। ১১ জুলাই প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। আগামী ২৭ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, ‘ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। সে বায়বীয় কথা বলছে কি না এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।