ভিডিও

পাবনার বেড়ায় লাম্পি স্কিন রোগে  শতাধিক গরুর মৃত্যু

প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৪, ০৮:২০ রাত
আপডেট: জুলাই ২৮, ২০২৪, ০৮:২০ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি : পাবনার বেড়া উপজেলায় লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) বা চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে শতাধিক গরুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে প্রায় আড়াই হাজার গরু। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আক্রান্ত হওয়া গরু বেশি মারা যাওয়ায় খামারি গরু পালনকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও খামারিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এলএসডি রোগটি এক ধরনের চর্মরোগ হলেও এতে গরুর মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। এই রোগ মানুষের মধ্যে না ছড়ালেও গরুর ক্ষেত্রে এটি ভাইরাসজনিত চরম ছোঁয়াচে রোগ। সাধারণত বর্ষার শেষের দিকে মশা-মাছির বংশবিস্তারের সময়ে এই রোগটিকে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।

তবে বেড়া উপজেলায় বর্ষা মৌসুমেই এবার এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দিয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত গরু-বাছুর প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হয় ও এক পর্যায়ে খাওয়া বন্ধ করে দেয়। জ্বরের সাথে মুখ ও নাক দিয়ে লালা বের হয়। পা ফুলে যায়। এক পর্যায়ে আক্রান্ত গরুর শরীরের বিভিন্ন জায়গার চামড়া পিণ্ড আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় এবং ক্ষতের সৃষ্টি হয়।

ধারাবাহিকভাবে এই ক্ষত শরীরের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। গরু ঝিম মেরে থাকে ও কাঁপতে শুরু করে। কিডনির ওপর প্রভাব পড়ার ফলে গরু মারাও যায়। মশা ও মাছির মাধ্যমে এই রোগ দ্রুত ছড়ায়। খামারিদের সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে, আক্রান্ত গরুকে সুস্থ গরু থেকে আলাদা রাখা হলে ও প্রতিষেধক দেওয়া হলে এই রোগের বিস্তার কমানো সম্ভব।

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, উপজেলার প্রায় সব এলাকাতেই এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেলেও যমুনা নদীর চরাঞ্চল ও যমুনাপাড়ের এলাকাগুলোতে এই রোগে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী উপজেলায় আক্রান্ত গরুর সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার।

তবে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে কতগুলো গরুর মৃত্যু হয়েছে তার সঠিক হিসেব দিতে পারেনি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়। অন্যদিকে খামারি ও গরু পালনকারীদের দাবি, যমুনাপাড়ের গ্রামসহ চরাঞ্চলগুলোতেই গত এক মাসে শতাধিক গরুর মৃত্যু হয়েছে।

দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা গ্রামের সংগ্রাম প্রামাণিক, চরপেঁচাকোলা গ্রামের আলী হোসেন, আব্দুল হাকিম জানান, গত চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে তাদের একটি করে গরু মারা গেছে। চরপেঁচাকোলা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক জানান, পাঁচ-ছয়দিন আগে তার শ^শুরের একটি ও প্রতিবেশীর একটি গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

নাকালিয়া বাজারের গবাদিপশুর ওষুধ বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিনই প্রচুর গরু পালনকারী এলএসডি রোগের ওষুধ নিতে আমার দোকানে এসে ভিড় করছেন। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এই রোগের এমনিতেই বেশ প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। তবে এবারের মতো এত বেশি আক্রান্ত হওয়া আর কখনও দেখিনি।

বেড়া উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগটির প্রকোপ বেড়াসহ সারাদেশেই দেখা যাচ্ছে। প্রতিষেধকই এই রোগের একমাত্র সমাধান। সরকারিভাবে বিনামূল্যের প্রতিষেধক কোথাও এখনও আসেনি।

তবে দুই-এক মাসের মধ্যেই সরকারি প্রতিষেধক সারাদেশের প্রাণিসম্পদ কার্যালয়গুলোতে দেওয়া হতে পারে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তখন আমরা বিনামূল্যে এই প্রতিষেধক দিতে পারবো। অবশ্য বাজারে ওষুধের দোকানে বিদেশি কিছু কোম্পানির প্রতিষেধক পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো একটু দামি জন্য (২৩০ টাকার মতো) গরু পালনকারীরা দিতে চান না।

কিন্তু প্রতিষেধক না দেওয়ার ফলে এই রোগ একবার হয়ে গেলে তখন তাঁদের দেড়-দুই হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। আর এই রোগ একবার হয়ে গেলে এর তেমন চিকিৎসা নেই। প্যারাসিটামল বা এন্টি হিসাটামিনেই প্রায় সব গরু এক পর্যায়ে ভালো হয়ে যায়।

কিন্তু অনেক গরু পালনকারী পল্লি চিকিৎসকদের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিকসহ অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহার করছেন। এই অপচিকিৎসায় গরুগুলো দুর্বল হয়ে কখনও কখনও মারা যাচ্ছে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS