আমিনুল হক, ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) : গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার সর্বত্র ল্যাম্পি স্কিন রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। গত দুইমাসে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে দেড় সহস্রাধিক গবাদিপশু। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যানুযায়ী, ১৩টি গরুর মৃত্যুর কথা বলা হলেও মাঠ পর্যায়ে এ সংখ্যা অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও পল্লী চিকিৎসকরা।
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, গত ১৫ দিনে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ২৫টি গরু মারা গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, তাদের দু:সময়ে মাঠ পর্যায়ে প্রাণি সম্পদ অফিসের কাউকে পাচ্ছেন না তারা। ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ নামে এই ভাইরাস মশা-মাছি থেকে ছড়িয়ে পড়ায় সর্বত্র এরোগ বিস্তার করছে বলে জানিয়েছে প্রাণীসম্পদ বিভাগ।
ফুলছড়ি উপজেলা প্রাণীসম্পদ সূত্রে জানা যায়, লাম্পি স্কিন গবাদিপশুর ভাইরাস জনিত রোগ। এ রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরে প্রথমে জ্বর দেখা দেয় এবং খাবারের রুচি কমে যায়। জ্বর বেশি হলে নাক-মুখ দিয়ে লালা বের হয়, পা ফুলে যায়। গরুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে চামড়ায় গুটি গুটি ক্ষত হয় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে পচন ধরে। এ রোগে আক্রান্ত পশুর সুস্থ হতে মাস খানেক সময় লাগে।
বড় গরু লাম্পি স্কিন রোগে তুলনামূলক কম ঝুঁকিতে থাকলেও বাছুর গরু আক্রান্ত হলে দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল, রোগা ও বাছুরের মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে। আক্রান্ত পশুকে ঘন ঘন স্যালাইন পানি, কাচা ঘাস বেশি খাওয়াতে হবে। সম্প্রতি এর প্রতিষেধক আবিস্কার হয়েছে, যা প্রয়োগ করলে সুফল পাওয়া যেতে পারে।
সরেজমিনে উপজেলার গজারিয়া, উদাখালী ও উড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরু দেখা গেছে। প্রায় বাড়িতে এ রোগে আক্রান্ত গরু রয়েছে। বেশ কয়েকজনের গরু মারাও গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পল্লী চিকিৎসক বলেন, ঈদের পরে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকটি গরু মারা গেছে।
পল্লী চিকিৎসকদের মধ্যেও অনেকে ভুল চিকিৎসা করায় আক্রান্ত গরু মারা যাচ্ছে। তবে লোকজনকে এ রোগের বিস্তার সম্পর্কে সতর্ক করা হলে প্রাদুর্ভাব কমে আসবে বলে তিনি মনে করেন। ফুলছড়ি উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জহিরুল ইসলাম বলেন, জনবল সংকটে মাঠ পর্যায়ে তদারকি করতে একটু সমস্যা হচ্ছে।
তবে যারা অফিসে আসেন, তাদের পশুর চিকিৎসার কোন অবহেলা করা হয় না। তাছাড়া লাম্পি স্কিন রোগ সম্পর্কে সতর্ক করতে খামারি ও কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এরোগের প্রাদুর্ভাব অনেকটা কমে এসেছে।
তিনি বলেন, লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাস জনিত রোগ হওয়ায় খামারিদের কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। এরমধ্যে গোয়াল ঘর ও আশেপাশের জায়গা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও আক্রান্ত গরুকে মশারির ভিতর রাখতে হবে। তবে এরোগে গরু মারা যাওয়ার সঠিক পরিসংখ্যান জানা নেই বলে জানান তিনি।
প্রাণীসম্পদ অফিসের তথ্য মতে, এ বছর ফুলছড়ি উপজেলায় এক হাজার ৭২২টি গবাদিপশু লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৮৫২টি গবাদিপশু সুস্থ হয়েছে এবং ১৩টি মারা গেছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।