নিউজ ডেস্ক: বেঙ্গালুরুতে ওষুধ দোকানের কর্মীকে খুনের অভিযোগে বুধবার (১২ জুন) গ্রেপ্তার হয়েছেন জনপ্রিয় কন্নড় অভিনেতা দর্শন থুগুদীপা। গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী পবিত্রা গৌড়াকেও।
প্রথমে মনে করা হচ্ছিল দর্শনের স্ত্রী পবিত্রা। কিন্তু তারা বিবাহিত নন। দর্শনের স্ত্রীর নাম বিজয়লক্ষ্মী। ২০০৩ সালে তাদের বিয়ে হয়। ভিনেশ নামে দম্পতির এক পুত্রও রয়েছে।
অন্যদিকে, পবিত্রা একজন কন্নড় অভিনেত্রী। জনপ্রিয় মুখ না হলেও বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পবিত্রা একটি রিল পোস্ট করলে দর্শন এবং তার বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে আসে।
সম্প্রতি ওষুধের দোকানের কর্মীকে খুনের দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন দর্শন-পবিত্রা। দর্শন কন্নড় ছবির জনপ্রিয় তারকা। পরিচিত মুখ। কিন্তু কৌতূহল তৈরি হয়েছে পবিত্রাকে নিয়ে।
পবিত্রা সিনেমার পাশাপাশি টেলিভিশনের ধারাবাহিকেও কাজ করেছেন। তার অভিনীত ছবিগুলির মধ্যে ‘চাত্রিগালু সার চাত্রিগালু’, ‘অগম্যা’ এবং ‘প্রীতি কিথাবু’ অন্যতম। পবিত্রার ইনস্টাগ্রাম বায়ো অনুযায়ী তিনি একজন মডেল এবং শিল্পী।
বর্তমানে পবিত্রা ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন। তার একটি বুটিকও রয়েছে। বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী শাড়ি এবং পোশাক তৈরির জন্য বিশেষ নাম রয়েছে পবিত্রার সংস্থার।
চলতি বছরের শুরুর দিকে সমাজমাধ্যমে আলোড়ন তৈরি করেছিলেন পবিত্রা। ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও শেয়ার করেন অভিনেত্রী। ওই ভিডিয়োতে তার সঙ্গে দেখা গিয়েছিল দর্শনকেও। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা ছিল, ‘আমাদের সম্পর্কের ১০ বছর’।
এরপরই হইচই পড়ে যায়। দর্শন এবং পবিত্রার সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে আসে। সরব হন দর্শনপত্নী বিজয়লক্ষ্মীও। পবিত্রার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন তিনি। তার কয়েক মাস পেরোতে না পেরোতেই এবার খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হলেন পবিত্রা।
দর্শন এবং পবিত্রার বিরুদ্ধে যে ব্যক্তিকে খুনের অভিযোগ উঠেছে, তার নাম রেণুকা স্বামী (৩৩)। পেশায় ওষুধের দোকানের কর্মী রেণুকা চিত্রদুর্গের বাসিন্দা ছিলেন। সেখানেই স্থানীয় এক ওষুধের দোকানে কাজ করতেন তিনি।
৮ জুন হঠাৎই উধাও হয়ে যান রেণুকা। তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
এরপর বেঙ্গালুরুর সুমনাহাল্লি সেতুর কাছে গত সোমবার রেণুকার মরদেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সেতুর কাছে একটি নর্দমায় একটি কুকুর রেণুকার মৃতদেহ টানাটানি করার সময় বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে আসে। তদন্তে নামে পুলিশ।
এই ঘটনায় তিনজনকে আটক করে পুলিশ। পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে রোববার অনেক রাত পর্যন্ত অভিনেতা দর্শনের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল অভিযুক্তদের। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তারা খুনের কথা স্বীকার করে জানান, অভিনেতা দর্শনের নির্দেশেই তারা এই কাজ করেছেন। গ্রেপ্তারদের কাছ থেকেই রেণুকার পরিচয় উদ্ঘাটিত হয়।
মঙ্গলবার সকালে মাইসুরুর বাগানবাড়ি থেকে আটক করা হয় দর্শন এবং পবিত্রাকে। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেঙ্গালুরুতে নিয়ে আসা হয় তাদের। এ ছাড়াও আরও ১০ জনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, দর্শনের অনুরাগী ছিলেন রেণুকা। কিন্তু পবিত্রার সঙ্গে দর্শনের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক তিনি মেনে নিতে পারেননি। আর তাই ইনস্টাগ্রামে একটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে তিনি প্রায়ই পবিত্রাকে আপত্তিকর মেসেজ পাঠাতেন। দর্শনের সংসার ভাঙার অভিযোগ এনে পবিত্রাকে ইনস্টাগ্রামে আপত্তিকর মেসেজ পাঠানো হয় বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
এরপরই বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন দর্শন। অভিযোগ, প্রথমে তার ফ্যানক্লাবের সদস্যদের দিয়ে রেণুকাকে অপহরণ করান অভিনেতা। এরপর তাকে একটি জায়গায় আটকে রেখে মারধর করা হয়। পরে দর্শনও সেখানে পৌঁছান। অভিযোগ, তিনিও বেল্ট দিয়ে মারধর করেন রেণুকাকে।
দর্শন সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পর তার ফ্যানক্লাবের সদস্যরা রেণুকাকে আবার মারধর করেন। তখনই রেণুকার মৃত্যু হয়। এরপর রেণুকার দেহ ফেলে আসা হয় ওই নর্দমায়। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত দর্শন, পবিত্রাসহ মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।