বাংলাদেশের মানুষেরা সচরাচর যখন ঘুম থেকে উঠেন, তখন হয়তো দেখবেন ম্যাচের বড় অংশ ততক্ষণে শেষ। কিংবা পুরোপুরি ম্যাচ শেষ হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যারা অধীর আগ্রহে বাংলাদেশের খেলা দেখার জন্য টিভি অন করবেন, তাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে তা এখনই বলা কঠিন। বেশ কিছু দিন ধরে এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করছে সবাই। কবে শুরু হবে সাকিব-শান্তদের বিশ্বকাপ অভিযান। সেই অভিযানে বুঁদ হয়ে থাকবেন সমর্থকরা। শনিবার সকালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিশন শুরু হচ্ছে। তার আগেই নানান চাপ ভর করছে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের দলের ওপর।
একটি দলের ওপর আপনি কখন বড় রকমের প্রত্যাশা করবেন, যখন দেখবেন তাদের সবকিছুই ব্যাটে-বলে কথা বলছে আর সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স হেসেছে। নাজমুল হোসেন শান্তর দলের মধ্যে এর ছোঁয়া কিন্তু নেই। আমেরিকার মাঠে এই প্রথম বিশ্বকাপ হচ্ছে। নতুন পরিবেশে বাংলাদেশের প্রস্তুতির শুরুটা কিন্তু ভালো হয়নি। স্বাগতিকদের কাছে যা-তাভাবে হেরেছে। এ নিয়ে কাটাছেঁড়া কম হয়নি। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানকে সুপারওভারে হারিয়ে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশ্বকাপ শুরুর আগেই সিরিজে হেরেছে সাকিব-তাসকিনরা। ওয়ার্ম আপ ম্যাচে ভারতের কাছে গেছে উড়ে। বিশ্বকাপে ভালো করতে হলে যেমন আগমনী বার্তা দেখাতে হয়, তা দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ।
যাদের ঘিরে সমর্থকরা স্বপ্ন দেখছে, সেই ব্যাটাররা কিন্তু হাসছেন না অনেক দিন হলো। মুখ গোমড়া করে প্যাভিলিয়নে ফিরে যাচ্ছেন। লিটন দাস, সৌম্য সরকার কিংবা অধিনায়ক শান্ত স্বয়ং উইকেট বিলিয়ে দিচ্ছেন। মাঝে সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা একটু ভালো করলেও তা বড় আশাব্যঞ্জক নয়।
বোলিংয়ে মোস্তাফিজ কিংবা শরিফুলও বিধ্বংসী হচ্ছেন না। শরিফুল তো চোটে পড়েছেন। সবমিলিয়ে পারফরম্যান্স বিচার করলে আশাবাদীর সংখ্যা হবে নেহায়েতই কম।
হয়তো এখানে অনেকে বলবেন এসব তো প্রস্তুতি ম্যাচ। আসল প্রতিযোগিতায় ঠিকই জ্বলে উঠবে টিম বাংলাদেশ। মূল পর্বে ভালো করে দেখানোর আশ্বাস দিয়েছেন শান্তও। আশাই সবাইকে বাঁচিয়ে রাখে। তবে তা কতদিন? ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রত্যাশার পারদ তুঙ্গে রেখে অষ্টম হয়ে ফিরতে হয়েছিল।
আমেরিকা-ওয়েস্ট ইন্ডিজে নিশ্চয়ই তা হতে দেবে না সবাই। এরই মধ্যে কিন্তু বাংলাদেশ দলকে নিয়ে বাজির খাতা খুললে বিপক্ষের লোকজনই বেশি পাবেন! এর চেয়ে বরং আমেরিকা, কানাডা, পাপুয়া নিউগিনি কিংবা নেদারল্যান্ডসকে নিয়ে অনেকে বাজি ধরতে রাজি। হয়তো ক্ষোভ থেকে এটা হতে পারে। আবার এটাও তো বিশ্বাস করতে হবে, যে দল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সিরিজ হারতে পারে সেই দলের হয়ে আবার বাজি ধরবে কে?
দলের এমনই অবস্থা, ইয়ান বিশপের মতো সাবেক ক্রিকেটার পর্যন্ত নেদারল্যান্ডসের কাছে বাংলাদেশ হারবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। এছাড়া কানাঘুষাও কম নয়। না হওয়ার কারণও নেই। ২০০৭ সাল থেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরু থেকে খেলা বাংলাদেশ এখনও নিজেদের শিরদাড়া সোজা করতে পারেনি। সাকিব আল হাসানের মতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার থাকা সত্ত্বেও নক আউট কিংবা সুপার এইটে যাওয়া হয়নি কোনোবারই!
অথচ ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া দেশটির ক্রিকেট আবেগ কম নয়। দেশের জনপ্রিয় খেলা। বিদেশি কোচ থেকে অন্য সুবিধাদি তো খেলোয়াড়রা কম পান না। তাহলে বিশ্বকাপের আগে মাঠের পারফরম্যান্স এমন হবে কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে সবাই শুধু আশার বাণী শোনাচ্ছেন। দোয়া চাইতে গিয়ে তো এখন ‘মায়ের দোয়া’ ট্রল হচ্ছে! এমন নয়, দলে যারা খেলছেন তাদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন আছে। যারা আছেন সবারই অভিজ্ঞতা কম-বেশি আছে। তাহলে নিবেদনের প্রশ্ন আসলেই সেখানে ঘাটতি থাকে কেন?
উত্তরে হয়তো পাবেন, ‘আমরা চেষ্টা তো কম করি না। অনেক সময় হয়ে যায়।’ এই অনেক সময়ের রেশ আর কাটছেই না। খেলার আগে প্রবাসীদের ডাকে গিয়ে মসজিদের জন্য ফান্ড সংগ্রহ কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে মানসিকভাবে ফ্রি থাকছেন সবাই। দলের সবাই জানেন ১৭ কোটি মানুষ খেলাটাকে কতটা ভালোবাসেন। তাই অন্তত সবাই এক হয়ে এবার কিছু একটা করে দেখানোর সময়।
যদিও শান্ত ঢাকা ছাড়ার আগে বড় বেশি প্রত্যাশা করতে নিষেধ করেছেন। কেন করেছেন, তা তিনিই ভালো বলতে পারেন। কিন্তু তাই বলে প্রস্তুতি ম্যাচে ‘মিনোসদের’ সঙ্গে হার তো সহ্য করা কঠিন। অন্তত যুক্তরাষ্ট্র কিংবা পাপুয়া নিউগিনির পারফরম্যান্স দেখলে ওদের কাছ থেকে প্রেরণা নেওয়ার সুযোগ আছে। যুক্তরাষ্ট্র তো পাকিস্তানকে হারিয়ে দিয়েছে। আর পাপুয়া নিউগিনি যেভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চেপে ধরেছিল তা দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন।
বাংলাদেশ যদি এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক খেলাও খেলতে পারতো, তাহলেও আফসোস কম হতো। যা-ই হোক, পেছনের কথা ভুলে এখন নতুন দিনের প্রত্যাশা করছেন সবাই। অনেক সময় চাপকে জয় করতে পারলে মুক্তি মিলে। বর্তমান বিচারে শ্রীলঙ্কা আহামরি কোনও দল নয়। তাই শুরুর ম্যাচ থেকেই হতে পারে বাংলাদেশর নতুন সূর্যোদয়ের সূচনা। সমর্থকরা চেয়ে আছেন সেই দিকে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।